ঐকান্তিক শ্রেণীহীনা

এ রৌদ্রে কেমন করে দাঁড়াও অটল? দেখলাম, অতীতের
মুখের ওপর ঝাঁপ বন্ধ করে কেমন সহজে
এলে তুমি সাম্প্রতিক সদর রাস্তায়।
বেণী-নামা পিঠে জমে ঘামের শিশির,
আঁচলে প্রবল হাওয়া, উচ্ছ্বসিত হ্রদের মতন
তোমার রুপালি স্বরে করে ঝলমল নানা মনীষীর পাতা।
সামান্যে শিল্পিত বেশ, চলায় বলায় সর্বক্ষণ
রুচির মোহন ছোঁওয়া। কখনো চকিতে মঞ্চে ওঠো জ্বলজ্বলে
পদক্ষেপে, শিরদাঁড়া ঋজু থরো থরো
ফ্ল্যাগ বয়ে নিয়ে যাও পল্টনের মাঠে, কখনো-বা
এভেন্যুর মোড়ে। কলেজের
সংস্কৃত প্রাঙ্গণ, বস্তি, পথঘাট অলংকৃত তোমারই ছায়ায়।

সামাজিক বিকারের কুকুরগুলোকে কোন রাঙা
মাংস দিয়ে রাখো শান্ত করে?
কী করে প্রখর দীপ জ্বালছ মশালে,
এ বিস্ময় ঠোকরায় এখনও আমাকে।
দেখছি তোমাকে আমি বহুদিন থেকে, দেখছি এখনও তুমি
বিকেলের বারান্দায় ব’সে
প্রবীণা মায়ের চুলে চালাও চিরুনি স্মৃতি জাগৃতির লগ্নে
পুরানো গায়ের সুর ভাঁজতে, কখনো-বা
ভায়ের শার্টের গর্ত ভরে তোলো শৈল্পিক নিষ্ঠায়,
কখনো পিতার সঙ্গে তর্কে মাতো এ-যুগের মতিগতি নিয়ে,
কখনো তুমুল ভাসো গণউত্থানের গমগমে তরঙ্গমালায়।

ব্যক্তিগত প্রেম আছে তোমারও গহনে
যে-প্রেম তোমাকে নিয়ে যায় তীব্র আকর্ষণে বহু জীবনের
কল্লোলিত মোহনায়। বুঝি তাই ঊর্মিল আবেগে
ছুটে যাও ভাসমান গ্রামে কি শহরে। ভদ্রয়ানা
আড়ালে রেখেই হও এককাট্রা শোকের শরিক।
কখনো রিলিফ ক্যাম্পে ভাবো চুপচাপ, উন্নয়ন
সুনীল কাগজে আসে আলাদা আদলে। কখনো-বা
নিজের গভীরে দাও ডুব, ভাবো ব’সে তারই কথা,
যে আনে প্রাণের টানে স্বপ্নের উদ্দাম
ভাগীরথী কারখানায় এবং খামারে।

শুধুই আবেগ নয় বুদ্ধির শাণিত রৌদ্র করে ঝলমল
অস্তিত্বে তোমার আর প্রচুর গ্রন্থের পাকা রঙ
লাগে মনে, মনেন সমৃদ্ধ তুমি ঐকান্তিক শ্রেণীহীনা;
সর্বোপরি বাস্তবের ঘনিষ্ঠ সংসর্গে
পেয়েছ বাঁচার সূত্র কর্ম আর ধ্যানে।

প্রথার কৃপণ মাপে সুন্দরী যে-জন
তুমি সে কখনো নও, অথচ তোমারও
নিজস্ব সৌন্দর্য আছে, যে-সৌন্দর্য ঝড়ের ঝাপটায়
সুতন্বী গাছের সাহসের,
যে-সৌন্দর্য মানবিক বোধের প্রেমের, জীবনের।