একটা চাদর

দেখছি ক’দিন ধরে গৃহিণীর হাতে তৈরি হচ্ছে অনুপম
একটা চাদর।
সততা এবং অনলস যে অধ্যবসায়
শিল্পীকে সফল করে তারই যুগ্মতায়
সে একটা চাদর সেলাই
করলো ক’দিন ধরে। একদিন উদার মাঠে যে-কনক ফসলের নাচ,
চাঁদের বক্রতা ঘেষা বনের যে-শ্যামলিমা আর
সর্ষে ক্ষেতে চঞ্চলা মেয়ের মতো ছোট্র পজাপতির যে-রঙ,
স্বপ্নে দেখা অলৌকিক ফুলের পাপড়ির
যে-নরম-সব কিছু নির্মল তরঙ্গ হয়ে অলক্ষ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল
সমগ্র সত্তায় তার-সেইসব আশ্চর্য বর্ণালী নিয়ে একটা চাদর
ছুঁয়েছে শিল্পের সীমা, দেখলাম, মুগ্ধতায় গাঢ়
রাত্তিরে তন্ময় হয়ে চাদরকে যে দিচ্ছে শিল্পের মুক্তি
আর যেটা ক্রমশ শিল্পিত হচ্ছে, উভয়ে কেমন
নিবিড় একাত্ম, যেন মঞ্চের আলোর নৃত্য আর
নর্তকীর মধ্যে কোন থাকে না তফাৎ। দেখলাম,
সে আর চাদর, উভয়কে সযত্নে বুনছে কেউ সূক্ষ্ম তাঁতে।

চাদরটা উল্টে পাল্টে দেখলো সে, দেখলো নিজের
কারুকাজ, তারপর ঘুমন্ত মেয়ের চার বছরের সেই
একরত্তি শরীরে ছড়িয়ে মৃদু হেসে দাঁড়ালো শয্যার একপাশে।
দেখলাম, সুন্দর চাদর নয়, একটি মায়ের
স্নেহ-জ্যোৎস্না শরতের নিষ্কলুষ দিনের মতোই
নিবিড় জড়িয়ে গেল সন্তানের নিমগ্ন সত্তায়, চুমো হয়ে
চাদরটা রইলো ছুঁয়ে আমাদের সন্তানের সমস্ত শরীর।

সে জানে অশেষ অনুরাগে বোনা এই আবরণ
কন্যাকে করবে রক্ষা অপদেবতার ছায়া থেকে,
দৈত্যের নিশ্বাস থেকে আর সেই চাদর একটা
প্রাচীরের মতো
থাকবে দাঁড়িয়ে শুভ আর অশুভের
মধ্যে প্রতিক্ষণ। দেখি প্রগাঢ় শান্তিতে
ঘুমোচ্ছে মেয়েটা,
তোমরা ঘুমোতে দাও তাকে-