দু’ এক দশকের

দু’ এক দশকের রুগ্ন সংবাদ রটলো অবিরত চরাচরে।
বর্বরতা আর হত্যা একালের জীবন প্রবাহের সূত্র,
জীবন যাকে বলি সেওতো সম্প্রতি প্রহত চেতনার অভিমান।
যাচ্ছি ভেসে আজ ভীষণ উদ্বেগে মগ্ন কূল থেকে অকূলে।

সে কবে অতিদূর উধাও শতকের অস্তরাগে কেউ বলেছিলেন
প্রতিটি প্লাবনের জলজ হাহাকারে রয়েছে নিজস্ব পায়রা।
অথচ হা কপাল! কারুর হাতে আজ তেমন শুভবাদী পায়রা নেই!
কেবলি বারবার পাতাল ডেকে নেয়, সেখানে জমে হাড়, মড়ার খুলি।

বর্তমানে আমি ফাটল-ধরা এক দেয়াল যেন একা দাঁড়িয়ে আছি-
আমাকে ঘিরে রয় ঝড়ের মাতলামি এবং অভাবিত ভূকম্পন।
কখন ঢলে পড়ি, এইতো ভয় শুধু কালের চত্বরে হাত-পা ছুঁড়ি,
বিপুল সমারোহে জরিপ করে দেখি বিশ্বে চারভাগই শূন্য!

আমরা অবিরাম ঢুকছি গুটিসুটি যে যার কল্পিত বিবরে,
সেখানে ইচ্ছাকে সাজাই বারবার চতুর নানাবিধ বিন্যাসে।
অথচ বাস্তবে ইচ্ছা নয় জানি প্রকৃত পোষমানা পাখির ঝাঁক,
ডাকলে আসবেই, সহজ অভ্যাসে বসবে জানালায় নীরবে!

এখন যদি লিখি শ্রেষ্ঠ কবিতার প্রখর কতিপয় পংক্তি
তবে কি বিস্মৃত বাগানে পুনরায় ফুটবে রক্তিম ফুলদল?
তবে কি পৃথিবীতে ঠাণ্ডা যুদ্ধের ঘটবে অচিরাৎ অবসান?
তবে কি সভ্যতা সত্যি যাবে বেঁচে ছন্দ মিল আর প্রতীকে?

আজকে যারা শুধু হুমড়ি খেয়ে পড়ে শস্তা গ্রন্থের এডিশনে,
কখনো তারা ফের সিদ্ধ বাণী চেয়ে পাবে কী সত্যের পরগনা?
এখন সেই পরগনার আশেপাশে নির্বিচারে ঘোরে চতুষ্পদ-
উড়িয়ে ধুলো খুরে শিল্প থেকে ওরা নিয়ত অ-শিল্পে ধাবমান।

স্নুকার বল হয়ে স্বপ্ন জড়ো হয় সবুজ রাস্তায় মাঝে মাঝে;
কিন্তু পুনরায় হারায় তারা আর খেলার শেষে যেন অবসাদে
টেবিলে মাথা রেখে আমিও কতদিন তীব্র হতাশায় ভেবেছি
জটিল জীবনের অর্থহীনতাকে কী করে করি বলো অর্থময়?

তরল ঘড়ি-স্রোত, সূর্যমুখী আর ফলের থালা হাতে তন্বী
অথবা জ্যামিতিক মাছের স্বপ্নাভা, নর্তকীর নাচ কিংবা
তেরজা রিমা আর প্রগাঢ় পয়ারে অলৌকিক শত ঝংকার
জন্ম দিতে পারে স্বর্গ-মৃগটাকে বাঁচার গণ্ডিতে সুডোল করে?

চূর্ণ হবে থাম, দেয়াল যাবে ধ্বসে, পতনে সম্প্রতি লুব্ধ।
শুকিয়ে যাবে দ্রুত বিশাল হ্রদগুলি, শহর হবে ধু-ধু মরুভূমি।
এসব ভয়াবহ পতন এড়ানোর আশায় প্রাণপণে পালাতে চাই,
অথচ নিশ্চিত সর্বনাশ থেকে জেনেছি কিছুতেই বাঁচোয়া নেই!