চড়াই আর কাকের কথা

কাক আর চড়াইপাখিতে খুব ভাব ছিল।

গৃহস্থদের উঠানে চাটাই ফেলে ধান আর লঙ্কা রোদে দিয়েছে। চড়াই তা দেখে কাককে বললে, ‘বন্ধু, তুমি আগে লঙ্কা খেয়ে শেষ করতে পারবে, না আমি আগে ধান খেয়ে শেষ করতে পারব?’

কাক বললে, ‘না, আমি লঙ্কা আগে খাব।’

চড়াই বললে, ‘না, আমি ধান আগে খাব।’

কাক বললে, ‘যদি না খেতে পার, তবে কি হবে?’

চড়াই বললে, ‘যদি না খেতে পারি, তবে তুমি আমার বুক খুঁড়ে খাবে। আর যদি তুমি না খেতে পার, তবে কি হবে?’

কাক বললে, ‘তুমি আমার বুক খুঁড়ে খাবে।’

এই বলে তো দুজনে ধান আর লঙ্কা খেতে লাগল। চড়াই কুট-কুট করে এক-একটি ধান খায়, আর কাক খপ-খপ করে একটি-একটি লঙ্কা খায়। দেখতে-দেখতে কাক সব লঙ্কা খেয়ে শেষ করলে, চড়াইয়ের তখন ধানের সিকিও খাওয়া হয়নি।

তখন কাক বললে, ‘কি বন্ধু, এখন?’

চড়াই বললে, ‘এখন আর কি হবে। বন্ধু হয়ে যদি আমার বুক খেতে চাও, তবে খাবে। তবে ঠোঁট দুটো ধুয়ে নিও, তুমি নোংরা জিনিস খাও।’

কাক বললে, ‘আমি ঠোঁট ধুয়ে আসছি।’ বলে সে গঙ্গায় ঠোঁট ধুতে গেল।

তখন গঙ্গা তাকে বললেন, ‘তোর নোংরা ঠোঁট আমার গায়ে ছোঁয়াসনে। জল তুলে নিয়ে ঠোঁট ধো।’

তাতে কাক বললে, ‘আচ্ছা, আমি ঘটি নিয়ে আসছি।’ বলে সে কুমোরের কাছে গিয়ে বললে-

কুমোর, কুমোর! দে তো ঘটি,
তুলব জল, ধোব ঠোঁট-

কুমোর বললে, ‘ঘটি তো নেই। মাটি আন, গড়ে দি।’ শুনে কাক মোষের কাছে তার শিং চাইতে গেল, সেই শিং দিয়ে মাটি খুঁড়বে। কাক বললে-

মোষ, মোষ! দে তো শিং,
খুঁড়ব মাটি, গড়বে ঘটি,
তুলব জল, ধোব ঠোঁট-
তবে খাব চড়াইর বুক।

শুনে মোষ রেগে তাকে এমনি গুঁতোতে এল যে সে সেখান থেকে দে ছুট! তারপর সে কুকুরের কাছে গিয়ে বললে-

কুত্তা, কুত্তা! মারবি মোষ,
লব শিং, কুঁড়ব মাটি, গড়বে ঘটি,
তুলব জল, ধোব ঠোঁট-
তবে খাব চড়াইর বুক।

কুকুর বললে, ‘আগে দুধ আন, খেয়ে গায়ে জোর করি, তবে মোষ মারব এখন।’ শুনে কাক গাইয়ের কাছে গিয়ে বললে-

গাই, গাই! দে তো দুধ,
খাবে কুত্তা, হবে তাজা,
মারবে মোষ, লব শিং,
কুঁড়ব মাটি, গড়বে ঘটি,
তুলব জল, ধোব ঠোঁট-
তবে খাব চড়াইর বুক।

গাই বলরে, ‘আগে ঘাস আন খাই, তারপর দুধ দেব।’

শুনে কাক মাঠের কাছে গিয়ে বললে-

মাঠ, মাঠ! দে তো ঘাস,
খাবে গাই, দেবে দুধ,
খাবে কুত্তা, হবে তাজা
মারবে মোষ, লব শিং,
খুঁড়ব মাটি, গড়বে ঘটি,
তুলব জল, ধোব ঠোঁট-
তবে খাব চড়াইব বুক।

মাঠ বললে, ‘ঘাস তো রয়েছে, নিয়ে যা না!’

তখন কাক কামারের বাড়ি গিয়ে বললে-

কামার, কামার! দে তো কাস্তে,
কাটব ঘাস, খাবে গাই,
দেবে দুধ, খাবে কুত্তা,
হবে তাজা, মারবে মোষ, লব শিং,
খুঁড়ব মাটি, গড়বে ঘটি,
তুলব জল, ধোব ঠোঁট-
তবে খাব চড়াইর বুক।

কামার বললে, ‘আগুন নেই। আগুন নিয়ে আয়, কাস্তে গড়ে দি।’ তা শুনে কাক গৃহস্থদের বাড়ি গিয়ে বললে-

গেরস্ত ভাই, দাও তো আগুন,
গড়বে কাস্তে, কাটব ঘাস,
খাবে গাই, দেবে দুধ, খাবে কুত্তা,
হবে তাজা, মারবে মোষ, লব শিং,
খুঁড়ব মাটি, গড়বে ঘটি,
তুলব জল, ধোব ঠোঁট-
তবে খাব চড়াইব বুক।

তখন গৃহস্থ এক হাঁড়ি আগুন এনে বললে, ‘কিসে করে নিবি?’

বোকা কাক তার পাখা ছড়িয়ে বললে, ‘এই আমার পাখার উপরে ঢেলে দাও।’

গৃহস্থ সেই হাঁড়িসুদ্ধ আগুন কাকের পাখার উপর ঢেলে দিলে, আর সে বেটা তখুনি পুড়ে মরে গেল। তার আর চড়াইর বুক খাওয়া হল না।

1 Comment
Collapse Comments

Children book hishebe kheyal korle golpo ta ektu Dark na?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *