মর্মর প্রাসাদ শুধু

মর্মর প্রাসাদ শুধু ধসে যায়, সারি সারি থাম
মোমের মতন যায় গ’লে আর অজস্র জন্তুর
বিক্ষুব্ধ গর্জনে ব্যাপ্ত নৃত্যনাট্য সমূহ ধ্বংসের;
পথে পথে ঘোরে নিত্য লক্ষ্যহীন কবন্ধের দল।

আমিও নগরেও এই মত্ত কোলাহলে
ক্রুশবিদ্ধ চেতনায় নিজেকে মেলাতে চাই
স্মৃতির পরম অধীশ্বরে।
এবং পাপড়ির মতো মুখ মনে পড়ে
সময়ের আঁধার অলিন্দে, যতবার সর্বনাশা
গোলকধাঁধায় ঘুরি অবিরাম ভবিষ্যৎহীন।

মৃত্যুকে লালন করে গহন সত্তায় রাত্রিদিন
দুঃস্বপ্নের নারকী বলয়ে ভ্রাম্যমাণ পথিকের
আজও তো তোমাকে
স্মরণ করার মতো মন বেঁচে আছে।

এবং কী দীর্ঘ এই প্রতীক্ষা আমার।

কতদিন স্নান জনস্রোতে রেখেছি অধীর চোখ
তোমার সন্ধানে, তবু দেখিনি তোমাকে আর সেই
লোকশ্রুত অনন্য সাঁকোর ধারে। অথচ তুমিই
আমার ধ্যানের
সুনীল আকাশে কত পারিজাত হয়ে
জ্বলো সর্বদাই।

এ-নগরে কোলাহলে চেয়েছি একটি স্বর শুধু
ঝরুক ঝরনার মতো-সে পুণ্য ধারায়
নিশ্চল পাথর হোক প্রাণ, হে নায়িকা,
আমি চাই তোমার উজ্জ্বল আবির্ভাব।

একদা তোমার আবির্ভাব জানি ক্ষণিকের অপরাহ্নে সেই
চকিতে দিয়েছে জ্বেলে অলৌকিক প্রভা।
সত্তার নিহিত
কস্তুরীর ঘ্রাণ
তোমাকে উন্মন করে শরীরে তোমার
অলক্ষ্যে করেছে সৃষ্টি স্বপ্নচিত্র শাশ্বতীর।
ভাবিনি কখনো আগে
অন্ধ নিয়তির মতো নিশ্চিত, অপ্রতিরোধ্য, দ্রুত
পতন নির্মম, আর আমি তো চেয়েছি
মোহন মোমের ডানা মেলে নীল, বিশাল আকাশে
গর্বিত পাখির মতো অন্ধ করে দিতে
সূর্যের অনল-চোখ, কিন্তু সেই ডানা
তরল জ্যোৎস্নার মতো গেল শুধু গ’লে
অগ্রজের বিস্মিত দৃষ্টির নিচে শেচনীয় সৌন্দর্যের মতো।

দিনগত পাপক্ষয়ে কাটে
দারুণ দুঃস্বপ্ন-গাঁথা প্রহর আমার,
তারপর হয়তো কখনো
স্বপ্নে-দেখা অপ্সরীর মতো নেমে আসে
মোহিনী সৌজন্যময়ী রাত্রি, আর
তখনও তোমার শেষ দৃষ্টি
হীরের মতন জ্বলে মনের খনিজ অন্ধকারে।