সুন্দরের গাথা

যেখানে সূর্যের তলে আকাঙ্ক্ষিত সুন্দরের গাথা
নিসর্গে মধুর মতো, ফুলের পাপড়ির মতো ঝরে
অথবা যেখানে গাঢ় চন্দ্রবোড়া সঙ্গিনীর শাখায় আকুল,
ঋতুর মধুর রণে পরাক্রান্ত, সেখানে আমার অভিলাষ
অভিসারী। পিছনে থাকুক পড়ে অনেক দূরের
অনচ্ছ তারার মতো লোকালয়, তাকাব না ফিরে।

যে-চেতনা ভ্রমরকে মেখে দেয় ফুলের যৌবনে,
বসন্তের তরুণ গাছকে
দেয় মেলে অনাঘ্রাত নীলের আকাশে,
সমুদ্রের ঢেউয়ে আনে পাখিদের উদ্বেলিত বুক,
নিঃসঙ্গ কবিকে দেয় জীবনের গাঢ় মদ-শব্দের প্রাসাদ,
যে-চেতনা তৃষ্ণার্ত যাত্রীকে আনে ফের
স্মৃতির সৌগন্ধে ভরা শীতল ঝরনায়,
তারই প্রজ্বলনে
সমস্ত দুপুর ভরে জলের আলোর নিচে দেখলাম তাকে
সঞ্চারিণী জলজ উদ্ভিদ যেন। এবং স্ফুরিত
অধরে রক্তিম মাছ, ফলের পূর্ণতা তার সমস্ত শরীরে।
সহসা উঠল ভেসে গভীর জলের সেই নারী
এবং সহজে তার করতলগত
নন্দিত ফুলের ঝাড় দিল সে বাড়িয়ে
আমার চোখের নিচে। দুর্লভ মণির মতো স্তন
ঘন হল বাসনার তাপে, যেমন গ্রীষ্মের ফল
গাঢ় হয় সূর্যের চুম্বনে। দেখলাম জনহীন তীরে সব
উৎকণ্ঠা উজিয়ে এসে প্রবীণ কচ্ছপ অকাতরে
তাপ নিল খুঁজে তার রৌদ্রের মসৃণ বালাপোশে।
সূর্যের জাহাজডুবি হলে সে-নারীকে বললাম,
‘আমার জীবনে তুমি খেয়াল-খুশির প্রস্রবণে
প্রতিদিন যে-কুসুম দিয়েছ ছড়িয়ে,
সুতীব্র আনন্দে তার গড়েছি বাগান লোকোত্তর।
আমার ত্বকের নিচে অলৌকিক যে-কীট খেলায়
সারাক্ষণ মগ্ন তাকে ভুলে গিয়ে চেয়েছি তোমাকে,
যেমন মৃত্তিকা চায় সজীব গাছের ফল, সুপক্ব-সোনালি।
ভেবেছি বিঁধর তাকে সহসা কৌশলে, অথচ সে
নিরুত্তর অধরে রক্তিম মাছ নিয়ে
স্বপ্নের চেয়েও আরও অধিক অতলে
গেল ডুবে নবতর কেলির তৃষ্ণায়।

তখন রাত্রির পূর্ণ আকাশে হঠাৎ এল চাঁদ-
অমূল্য, অপ্রাপনীয় মুক্তো। আর একটি শুয়োর
ইতস্তত পথ শুঁকে এসে গেল জ্যোৎস্নায়, যেখানে
তারার বুদ্বুদে ফোটে আকাঙ্ক্ষিত সুন্দরের গাথা।

মুছে গেল দৃশ্যাবলি চারদিকে, অনন্তর একা
আমি আর অকূল শূন্যতা।