কাব্যতত্ত্ব

গনগনে চুল্লির আলোর খইয়ের মতো কথা ফোটে
অন্তর্লোকে, রাশি রাশি। আর আমি
তাদের ছড়িয়ে দিই ঢেউয়ের ফেনায়, সপ্তর্ষিমণ্ডলে,
পাহাড়ের চূড়ায়, উইয়ের ঢিবিতে, যেখানে খুশি।
গাছের সতেজ পাতায়, রৌদ্র-লাগা, বৃষ্টি-মোছা দেয়ালে,
ঘরের উন্মুক্ত কপাটে, রুটির বাদামি গড়নে,
শুকনো ফলে, অলিন্দে চড়ুইয়ের বুকে গাঁথা সেসব কথা
নক্ষত্রের অভিযাত্রার মতো বিন্দুতে বিন্দুতে
কম্পমান, মুহূর্তের অধীশ্বর। সেই মুহূর্তে
মাতাল ছাড়া কী-ই আর হতে পারি আমি?

রাত্রির পীড়নে উন্মথিত আমি নক্ষত্রের ঝড়ের মতো
শব্দপুঞ্জ থেকে ছিঁড়ে আনি কবিতার অবিশ্বাস্য শরীর
-সৌন্দর্যের মতো রহস্য-ঢাকা, নগ্ন আর উন্মীলিত।

আমার সেই নির্মাণে মাননীয়, পক্বকেশ পণ্ডিত
হন্তদন্ত হয়ে খোঁজেন গ্রিক পুরাণের উল্লেখ,
দেশী কিংবা বিদেশী কবির প্রভাব শুঁকে বেড়ান তাঁরা
নিপুণ গোয়েন্দার মতো, আর না-চাইতে বিলিয়ে দেন
ঝুড়ি ঝুড়ি মূল্যবান কথা,
হায় রে মূল্যবান কথা!
বলতেই হয় তাঁরা বুদ্ধিমান, মগজওয়ালা দামি মানুষ,
তাঁদের ভয়ানক বিদ্যের স্কেল দিয়ে মেপে দেখেন
সৌন্দর্য, কিন্তু কী মূঢ় তাঁদের বিবেক!
জানি সেই বুদ্ধির চত্বরে কোনো দিন ছিটিয়ে পড়বে না
প্রেমের মতো সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস, জন্ম নেবে না
আগুনের শিকার মতো
রাশি রাশি অফুরন্ত সবুজ ঘাস, ভুলেও কোনো দিন
তাদের চোখে, মনে উড়বে না তারার ঝড়ের ধূলি,
এতই সাবধানি তাঁরা, এতই বিবেকী!

লোকে বলে বিজ্ঞজন সহস্রচক্ষু, অথচ প্রিয়তমা,
কী আশ্চর্য, কিছুতেই তাঁরা দেখতে পান না
আমার কবিতায় অর্পিত তোমার চুলের ছায়া,
নিঃশ্বাসের সুগন্ধি তাপ, আর আমার হৃৎস্পন্দন।