মনে মনে

জানি না কী করে কার মমতার মতো
শান্ত-শুভ্র ভোর এসে ঝরে
জানি না কী করে এত নীল হয় রোজ
ধ্রুপদী আকাশ। ঘাসে এত রং, রোদে
জীবনের সাড়া, বিকেল হাওয়ায় এত নির্জন ভাষা
(জানল না কেউ) তবু কী করে যে বেঁচে আছে তারা!
ভালোলাগা রং নিয়ে
সাধারণ-অপরূপ
কত ছবি আঁকলাম
নগরে ও বন্দরে
হিতকথা বুদ্ধের
শিখলাম, যত পাখি
সন্ধ্যার-জানলাম।

আমার কি সব তবু ঠিক জানা হল?

শিশুর চোখের বিস্ময়-আঁকা মায়াবী দৃষ্টি যার
প্রসারিত এই জীবনের গাঢ় মানচিত্রের রঙে,
সুদূর গাঁয়ের কুয়োতলা আর শহরের কোনো পার্কের মৃদু ঘাস,
পৃথিবীর কত রহস্যময় সোনালি রুপালি দ্বীপ
আবরণ খুলে জীবনের মানে এখনও জানায় যাকে
সে কি তবে তার মুখের ওপর বন্ধ দরজা দেখে
ফিরে যাবে একা, ভুলে যাবে গান, বলো?
হারিয়েছি কত বিকেলের মতো নারী,

বহুবার আমি হারিয়ে ফেলেছি
পাখির দেহের রঙে ঝিলমিল, স্নেহে-ছাওয়া ঘর;
হারাইনি তবু সুরের নূপুর, ভুলিনি আমার গান।

এখনও তো লুট করে আনে মন দিনের প্রবাল,
রাতের হীরের হার,
এখনও হাজার সহজ খুশির
নিবিড় ঝরনা-আলো,
এতটুকু ভালোলাগা
কুড়িয়ে ছড়িয়ে সহস্র ভিড়ে ডুবে যাই, ভেসে উঠি।
ফুলের মতন তারারা যখন অন্ধকারের স্রোতে
ভাসে, কাঁপে, জ্বলে-মনে পড়ে তার মুখ,
মনে পড়ে তার মুখ।

রাতের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যায়।
যে আছে দাঁড়িয়ে অতিদূর পাড়াগাঁয়ে
দীপ হাতে সেই অভাবের সংসারে
সত্যিমিথ্যে যদি ফিরে যাই হঠাৎ সেখানে তার
বিবর্ণ খেলাঘরে
সে কি আর ভাঙা পুতুল কুড়োবে
কাক-ডাকা রাতে একা?
দু’জনের কত গহন দুপুর
চলে গেছে সেই যোজন-যোজন দূরে।
যদি ফিরে যাই জামতলা আর পারুলডাঙার মাঠে,
যে যাবে সঙ্গে তার কথা কিছু জানি!