কমেডি
ট্রাজেডি
সনেট

আ মিডসামার নাইট’স ড্রিম

আ মিডসামার নাইট’স ড্রিম
মূল রচনা: উইলিয়াম শেকসপিয়র
পুনর্কথন: মেরি ল্যাম্ব
অনুবাদ: অর্ণব দত্ত
(“টেলস ফ্রম শেকসপিয়র” থেকে)

এথেন্স শহরে এক আইন ছিল। এই আইন বলে সেখানকার নাগরিকেরা নিজেদের পছন্দসই পাত্রের সঙ্গে তাদের মেয়েদের বিয়ে করতে বাধ্য করতে পারত। কোনো মেয়ে বাপের পছন্দ করা পাত্রকে বিয়ে করতে অস্বীকৃত হলে, বাপ সেই আইন প্রয়োগ করে মেয়েকে মৃত্যুদণ্ডে পর্যন্ত দণ্ডিত করার ক্ষমতা রাখত। তবে কিনা, মেয়েরা একটু-আধটু অবাধ্য হলেও, বাপেরা সাধারণত মেয়ের মৃত্যুকামনা করত না বলে, এই আইনের প্রয়োগও কদাচিৎই হত। অবশ্য, বাপ-মায়েরা তাদের কুমারী মেয়েকে এই আইনের জুজু দেখাতে ছাড়তেন না।

তবে একবার এক ঘটনা ঘটেছিল। ইজিয়াস নামে এক বৃদ্ধ এথেন্সের তৎকালীন ডিউক থিসিয়াসের কাছে নিজের মেয়ে হার্মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেন। ইজিয়াসের ইচ্ছে ছিল, হার্মিয়া ডিমেট্রিয়াস নামে এথেন্সের এক সম্ভ্রান্তবংশীয় যুবককে বিয়ে করুক। কিন্তু সে ভালবাসত লাইস্যান্ডার নামে অপর এক এথেন্সীয় যুবককে। তাই সে বাপের আদেশ অমান্য করে। ন্যায়বিচার চেয়ে ইজিয়াস তখন এলেন থিসিয়াসের কাছে। দাবি করলেন, ওই নিষ্ঠুর আইনটি প্রয়োগ করা হোক তাঁর মেয়ের উপর।

আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে হার্মিয়া জানালো, ডিমেট্রিয়াস তার সই হেলেনাকে ভালবাসত। হেলেনা এখনও ডিমেট্রিয়াসকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসে। কিন্তু বাপের আদেশ অমান্য করার এহেন সম্মানজনক কারণও ইজিয়াসকে টলাতে পারল না।

থিসিয়াস দয়ালু রাজা ছিলেন। কিন্তু দেশের আইন সংশোধনের ক্ষমতা তাঁর ছিল না। তিনি শুধু হার্মিয়াকে চার দিন সময় দিলেন। তাকে জানিয়ে দেওয়া হল, চার দিন পরেও যদি সে ডিমেট্রিয়াসকে বিয়ে না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকে, তাহলে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

লাইস্যান্ডার এই সব ঝুটঝামেলার কথা শুনে খুবই বিচলিত হয়ে পড়ল। কিন্তু তখনই তার মনে পড়ে গেল, এথেন্স থেকে কিছু দূরে বাস করেন তার এক মাসি। নিষ্ঠুর আইনটা যেহেতু এথেন্সের নগরসীমানার বাইরে খাটে না, সেহেতু সেখানে পালিয়ে যেতে পারলে, কেউ আর হার্মিয়াকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করতে পারবে না। তাই দু’জনে ঠিক করল, হার্মিয়া চুপিচুপি তার বাড়ি থেকে পালিয়ে আসবে আর তারপর তারা লাইস্যান্ডারের মাসির বাড়ি গিয়ে তারা বিয়ে করবে। “শহর থেকে কয়েক মাইল দূরে যে বন রয়েছে, সেখানেই তোমার সঙ্গে দেখা করব। সেই যে বনে মনোহর বসন্তে আমরা হেলেনাকে নিয়ে হাঁটতে যেতাম,” লাইস্যান্ডার বলল।

হার্মিয়া সানন্দে রাজি হয়ে গেল এই প্রস্তাবে। সে তার সই হেলেনা ছাড়া আর কাউকেই তাদের পরিকল্পনার কথা জানালো না। মেয়েরা প্রেমে পড়লে কী বোকাই না হয়ে যায়! হেলেনা করল কী, মহা-অকৃতজ্ঞের মতো সব কথা ডিমেট্রিয়াসকে জানিয়ে দিল। সইয়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তার পাওয়ার কিছুই ছিল না। শুধু নিজের লম্পট প্রেমিকের পিছু পিছু বনে যাওয়ার আনন্দটুকু পাওয়ার আশা ছিল তার, এই যা। সে জানত ডিমেট্রিয়াস হার্মিয়ার খোঁজে যাবেই।

যে বনে হার্মিয়া ও লাইস্যান্ডারের দেখা করার কথা ছিল, সেই বনটি ছিল ‘পরি’ নামে এক ধরনের ছোট্ট জীবের প্রিয় বিচরণক্ষেত্র।

পরিরাজ ওবেরন ও পরিরানি টাইটানিয়া তাঁদের সাঙ্গোপাঙ্গোদের নিয়ে সেই বনে প্রমোদবিহারে আসতেন।

যে সময়ের কথা হচ্ছে, সেই সময় পরিদের এই ছোট্ট রাজা ও রানির মধ্যে এক দুঃখজনক কলহ উপস্থিত হয়েছিল। মনোরম বনের ছায়াঘেরা চন্দ্রালোকিত পথে বিহার না করে, তাঁরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি করছিলেন। আর তাইতে ভয় পেয়ে তাঁদের অনুগত ভূতপ্রেতের দল হামা দিয়ে ওক-বিচির মধ্যে লুকিয়ে পড়েছিল।

মনান্তরের কারণ ছিল, টাইটানিয়ার চুরি করে আনা একটি ছোটো ছেলে। ছেলেটির মা ছিল টাইটানিয়ার সই। সে মারা যাওয়ার পর, টাইটানিয়া ছেলেটিকে তার ধাইয়ের কাছ থেকে চুরি করে এই বনে নিয়ে এসে মানুষ করছিলেন। আর ওবেরন ছেলেটিকে নিজের বালকভৃত্য নিয়োগ করতে চাইছিলেন।

প্রেমিকযুগলের যে রাতে বনে আসার কথা, সেই রাতেই টাইটানিয়া তাঁর রাজসখিদের নিয়ে ভ্রমণ করতে করতে ওবেরন ও তাঁর অনুচরদের মুখোমুখি হন।

“জ্যোৎস্নালোকে মূর্তিমতী অকল্যাণ তুমি, হে মদমত্তা টাইটানিয়া,” বললেন পরিরাজ। টাইটানিয়া উত্তরে বললেন, “কে? হিংসুটে ওবেরন নাকি? পরিরা, দূরে থেকো। ওঁর সঙ্গে আমার সব সম্পর্ক ঘুচে গেছে জেনো।” “চোপরাও!” বললেন ওবেরন, “ভুলে যেও না, আমি তোমার স্বামী। এত সাহস তোমার, আমার মুখে মুখে কথা বলো! চুরি করে আনা ওই বাচ্চাটাকে দাও। আমি ওকে আমার বালকভৃত্য করে রাখব।”

“তোমার সে গুড়ে বালি,” টাইটানিয়া বললেন, “তোমার এই গোটা পরিরাজ্য আমাকে বেচে দিলেও আমি তোমার হাতে ছেলেটাকে ছাড়ব না।” এই বলে ক্রুদ্ধ রানি স্বামীর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে গেলেন। ওবেরন বললেন, “যাও, যেখানে ইচ্ছে যাও। কিন্তু জেনে রেখো, কাল সূর্য ওঠার আগেই আমি এই অপমানের শোধ তুলব।”

ওবেরন ডেকে পাঠালেন তাঁর প্রিয় অনুচর তথা প্রধান পার্ষদ পাককে।

পাক ছিল এক দুষ্টু ভূত। কেউ কেউ তাকে ডাকত ‘ভালমানুষ ভূত’ নামে। আশেপাশের গ্রামবাসীদের অতিষ্ট করে সে মজা পেত। কখনও গব্যশালায় ঢুকে দুধের উপর ভেসে বেড়াত। হালকা বায়বীয় রূপ ধরে ডুব লাগাতো মাখন মন্থনের পাত্রে। গোয়ালিনী মাখন মন্থনের চেষ্টা করত। কিন্তু পাক সেখানে এমন নৃত্য জুড়ে দিত যে, তার সব চেষ্টাই বৃথা যেত। বাদ যেত না গ্রামের ধাতুশিল্পীরাও। পাকের দুষ্টুমিতে তামা নিষ্কাষণ তাদের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে উঠত। পড়শিরা এক সঙ্গে মদ খেতে বসলে, পাক কাঁকড়া-কাবাবের আকার ধারণ করে ঝাঁপ দিত মদের গ্লাসে। কোনো ভালমানুষ বুড়ি চুমুক দিলেই, তার ঠোঁট ধরে ঝুলে পড়ত পাক। বুড়ির ঝুলে-পড়া চিবুক বেয়ে সব মদ গড়িয়ে পড়ে যেত। পরে বুড়ি পড়শিদের কাছে নিজের দুঃখের বৃত্তান্ত শোনাতে গেলে, পাক এক হ্যাঁচকায় বুড়ির বসার তেপায়াটা টেনে নিত। ধপাস করে বুড়ি পড়ত মাটিতে। সবাই হো হো করে হেসে উঠত। যেন এত মজার আর কিছুই কোনোদিন দেখেনি তারা।

ওবেরন তাঁর খোসমেজাজি নিশাচর ভৃত্যটিকে ডাক দিলেন, “পাক, এদিকে এসো। যে ফুলকে মেয়েরা ‘আলসেমির প্রেম’ নামে ডাকে, আমাকে সেই ফুল এনে দাও। সেই ছোট্ট লালচে ফুলটির রস কোনো ঘুমন্তের চোখে ঢেলে দিলে, ঘুম ভাঙার পর সে প্রথম যাকে দেখে, তারই প্রেমে পড়ে যায়। টাইটানিয়া যখন ঘুমাবে, তখন আমি তার চোখে সেই রস ঢেলে দেবো। ঘুম থেকে উঠে সে প্রথম যাকে দেখবে, সিংহ, ভালুক, বদমাস বাঁদর বা নোংরা বনমানুষ হলেও, তারই প্রেমে পড়ে যাবে সে। তখন তার থেকে বাচ্চাটাকে আদায় করব। তারপর বিপরীত জাদু প্রয়োগ করে তার আগের জাদু ফিরিয়ে নেব আমি।”

দুষ্টুমি পাকের খুব প্রিয় ছিল। প্রভুর দুষ্টুবুদ্ধির কথা শুনে সে তাই আহ্লাদে আটখানা হয়ে ছুটল ফুল আনতে। ওবেরন পাকের জন্য অপেক্ষা করছেন, এমন সময় দেখলেন ডিমেট্রিয়াস ও হেলেনা বনে ঢুকছে। চুপিচুপি তাদের কথা শুনতে লাগলেন তিনি। পিছু নেওয়ার জন্য ডিমেট্রিয়াস খুব কড়া ভাষায় হেলেনাকে তিরস্কার করছিল। মৃদু প্রতিবাদ করে হেলেনা তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল যে, একদিন হেলেনাকেই ডিমেট্রিয়াস তার সত্যিকারের প্রেমিকা বলে মেনে নিয়েছিল। ডিমেট্রিয়াস হেলেনাকে বন্য জন্তুর দয়ায় ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। হেলেনাও যত দ্রুত সম্ভব তার পিছু নিল।

পরিরাজ সত্যকারের প্রণয়ীদের খুব ভালবাসতেন। হেলেনার প্রতি তাঁর দয়া হল। লাইস্যান্ডার বলেছিল, তারা হেলেনাকে নিয়ে তাদের সুখের দিনে এই বনে বেড়াতে আসত। ডিমেট্রিয়াস তখন ভালবাসত হেলেনাকে। হয়ত সেই সময়েই পরিরাজ তাকে দেখে থাকবেন। সে যাই হোক, পাক ফুল নিয়ে এলে ওবেরন তাঁকে বললেন, “বনে একটি মিষ্টি এথেন্সীয় মেয়ে এসেছে। তার প্রেমিকটি অত্যন্ত অকৃতজ্ঞ। এই ফুলের একটা অংশ নিয়ে যাও। ছেলেটিকে দেখতে পেলে, তার চোখেও এই প্রেমসুধারস একটু ঢেলে দিও। এমন সময় কোরো যখন মেয়েটি তার কাছাকাছি থাকবে। আর খেয়াল রেখো যাতে ঘুম থেকে উঠে মেয়েটিকেই আগে দেখতে পায় সে। দেখবে, ছেলেটা এথেন্সীয় পোষাক পরে আছে। তাই দেখেই চিনতে পারবে।” হাত-পা নেড়ে পাক জানিয়ে দিল, সে সব সামলে নেবে। তারপর ওবেরন চুপিচুপি গেল টাইটানিয়ার নিকুঞ্জে। টাইটানিয়া সেখানে বিশ্রাম নেওয়ার তোড়জোড় করছিলেন। উডবাইন, মাস্ক-রোজ আর ইগলেন্টাইনের চাঁদোয়ার নিচে বুনো টাইম লতা, কাউস্লিপ ফুল ও মিষ্টি ভায়োলেট ফুলের ঝোড়ের মাঝখানে ছিল টাইটানিয়ার নিকুঞ্জশয্যা। রাতের কিছুটা সময় সেখানে সাপের খোলস ঢাকা দিয়ে ঘুমাত টাইটানিয়া। খোলসটা ছোটো হলেও, টাইটানিয়ার তাতেই বেশ চলে যেত।

ওবেরন দেখলেন, রানি ঘুমানোর পর কে কী করবে, তার নির্দেশ পরিদের দিয়ে রাখছেন টাইটানিয়া। বলছিলেন, “তোদের মধ্যে কেউ মাস্ক-রোজের কুঁড়ির মধ্যে ঢুকে পোকা মারবি। কেউ বাদুড়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে তার চামড়া ছাড়িয়ে আনবি। সেই চামড়ায় আমার ভূতেদের জন্য জামা বানাবি। কেউ নজর রাখবি ওই হুল্লোড়বাজ প্যাঁচাটার উপর। দেখিস, ওর ডাক যেন আমার কানে না আসে। কিন্তু সবার আগে আমাকে একটা গান শোনা।” তখন পরিরা তাকে এই গানটি শোনালো –

তুমি সাপকে জিভ দিয়েছো দু-দু’খানা
কাঁটাচুয়া করেছো গায়েব;
গোসাপ আর কানা-পোকারা, দুষ্টুমি কোরো না,
যাও, যাও, ঘুমান মোদের রানিসাহেব।
ফিলোমেল, ধরো তান,
শোনাও একটা ঘুমপাড়ানি গান
ঘুমপাড়ানি ঘুমপাড়ানি ঘুমপাড়ানি গান
ক্ষতি নয়, জাদু নয়, নয় কোনো মন্তর
মোদের পরিরানির কাছে আসুক নিরন্তর
রাত্রি মনোহরা আর ঘুমপাড়ানি গান।

এই মিষ্টি গানখানি শুনিয়ে পরিরা তাদের রানিকে ঘুম পাড়িয়ে দিল। তারপর চলে গেল যে যার কাজ সারতে। ওবেরন ধীরে ধীরে এগিয়ে এলেন টাইটানিয়ার কাছে। খানিকটা প্রেমরস ঢেলে দিলেন তাঁর চোখে। বললেন –

“নিদ্রাভঙ্গে দেখবে যাকে সবার আগে,
তার সঙ্গে বাঁধা পড়বে প্রেম-অনুরাগে।”

এবার দেখি কী করছে হার্মিয়া। সে তো বাপের কথা অমান্য করে ডিমেট্রিয়াসকে বিয়ে না করার সিদ্ধান্তে অটল। তাই মৃত্যুদণ্ড এড়াতে বাড়ি থেকে পালিয়ে বনে এসে দেখল, তাকে মাসির বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে লাইস্যান্ডার। কিন্তু অর্ধেক পথ যেতে না যেতেই ক্লান্তিতে পা অবশ হয়ে এল তার। লাইস্যান্ডার তার খুব যত্ন করত। তাই সে ঠিক করল, সকাল না হওয়া অবধি বনেই বিশ্রাম করবে দু’জনে। নরম ফার্নের উপর শুয়ে হার্মিয়া আর তার কিছুদূরে শুয়ে লাইস্যান্ডার ঘুমিয়ে পড়ল। এমন সময় পাক দেখতে পেল তাদের। প্রভুর কথা মিলিয়ে সে দেখল, এথেন্সীয় পোষাক পরা এক যুবক একটি সুন্দরী মেয়ের কিছুদূরে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। একসঙ্গে থাকলেও, দু’জনে শুয়েছিল আলাদা হয়ে। পাক ভাবল, তার প্রভু এদের কথাই বলেছেন তাঁকে। ঘুম থেকে উঠে যুবকটি সবার আগে মেয়েটিকে দেখবে। তাই আর কিছু না ভেবে, তার চোখেই প্রেমসুধারস ঢেলে দিল পাক। কিন্তু হল কী, হার্মিয়ার বদলে লাইস্যান্ডারের চোখে পড়ে গেল হেলেনা। হেলেনা সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। ঘুম ভেঙে তাকে সবার আগে দেখে লাইস্যান্ডারের মন থেকে হার্মিয়ার প্রতি প্রেম গেল উবে। মায়াবলে পড়ল সে হেলেনার প্রেমে।

ঘুম ভেঙে আগে হার্মিয়াকে দেখলে লাইস্যান্ডারকে পাকের এই ভুলের খেসারত দিতে হত না। সে তো আর তার প্রিয়তমাকে বাড়তি ভালবাসতে পারে না। কিন্তু কী আর করা! তার কপালে ছিল, নিজের সত্যিকারের প্রেমিকা হার্মিয়াকে ভুলে বনের মধ্যে মাঝরাতে একা ফেলে অন্য একটি মেয়ের পিছনে ধাওয়া করা!

দুর্ঘটনাটা কীভাবে ঘটল, তা বলি। যেমনটি একটু আগে বলছিলাম, হেলেনা ডিমেট্রিয়াসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছিল। ডিমেট্রিয়াস তো তাকে ফেলেই দৌড়ে বেড়াচ্ছিল। সেই দৌড়ে তাল মেলাতে পারছিল না হেলেনা। অল্পক্ষণ পরেই ডিমেট্রিয়াস তার দৃষ্টিপথের বাইরে চলে গেল। হতোদ্যম হয়ে একলা ঘুরতে ঘুরতে সে হাজির হল যেখানে লাইস্যান্ডার ও হার্মিয়া ঘুমাচ্ছিল। হেলেনা বলে উঠল, “এ কী! এ যে লাইস্যান্ডার! মাটিতে শুয়ে কেন? ঘুমাচ্ছে? নাকি মারা গেছে?” তারপর তাকে আলতো করে ছুঁয়ে বলল, “দোহাই আপনার, বেঁচে থাকলে চোখ মেলে তাকান।” লাইস্যান্ডার চোখ মেলে চাইল। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল প্রেমরসের জাদু। তক্ষুনি লম্বাচওড়া প্রেমের কথা বলে সে হেলেনার প্রতি প্রেমনিবেদন শুরু করে দিল। বলল, হেলেনার পাশে হার্মিয়াকে মনে হয়, সাদা পায়রার পাশে দাঁড়কাক। বলল, হেলেনাকে পেতে সে আগুনের উপর দিয়ে হাঁটতেও রাজি। আরও কত রকম প্রেমিক-সুলভ ভাষণ দিল সে। হেলেনা জানত, লাইস্যান্ডার তার সই হার্মিয়ার প্রেমিক ও পাণিপ্রার্থী। নিজের সম্পর্কে ওই সব কথা শুনে তার ভারি রাগ হল। ভাবল, লাইস্যান্ডার তাকে নিয়ে মজা করছে। বলেই ফেলল, “হায়! কেন জন্মালাম আমি? সকলের উপহাসের পাত্রী হওয়ার জন্য? ডিমেট্রিয়াস আমার দিকে তাকায় না। ভাল করে কথাও বলে না। সেটাই কী যথেষ্ট নয়? সেটাই কী যথেষ্ট নয় যে আপনি মশাই উড়ে এসে আমার সঙ্গে এই রকম অপমানকর খেজুরে প্রেমালাপের নাটক জুড়ে দিলেন? লাইস্যান্ডার, আপনাকে আমি ভদ্রলোক মনে করেছিলাম!”  রাগে মাথায় কথাগুলি ছুঁড়ে দিয়েই জোরে হাঁটা দিল হেলেনা। লাইস্যান্ডার ঘুমন্ত হার্মিয়াকে পিছনে ফেলে পিছু নিল তার।

ঘুম থেকে উঠে নিজেকে একা দেখে খুব ভয় পেয়ে গেল হার্মিয়া। সে বনের মধ্যে ঘুরতে লাগল। সে তো জানত না যে, লাইস্যান্ডারের কী হয়েছে বা কোথায় গেলে সে তার দেখা পাবে। এদিকে ওবেরন দেখলেন, হার্মিয়া ও প্রতিদ্বন্দ্বী লাইস্যান্ডারকে খুঁজে না পেয়ে বৃথা অন্বেষণ ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়েছে ডিমেট্রিয়াস। পাককে প্রশ্ন করে ওবেরন বুঝতে পারলেন যে, পাক ভুল লোকের চোখে প্রেমরস ঢেলেছে। তাই নিজে গিয়ে যে যুবকটিকে তিনি খুঁজছিলেন, তার চোখে প্রেমরস ঢেলে দিলেন তিনি। ডিমেট্রিয়াসের ঘুম ভেঙে গেল। সে প্রথমেই দেখল হেলেনাকে। দেখামাত্র, লাইস্যান্ডারের মতো সেও হেলেনাকে উদ্দেশ্য করে প্রেমিক-সুলভ বক্তৃতা দিতে লেগে গেল। পিছন পিছন ছুটে এল হার্মিয়াও। পাকের দুঃখজনক ভুলের ফলে এখন তাকে তার প্রেমিকের পিছন ছুটে ছুটে বেড়াতে হচ্ছিল। এদিকে জাদুর বশে লাইস্যান্ডার আর ডিমেট্রিয়াস দু’জনেই হেলেনাকে উদ্দেশ্য করে প্রেম নিবেদন করছিল তখন।

হেলেনা তো হতবাক! সে ভাবল, লাইস্যান্ডার, ডিমেট্রিয়াস ও তার এক সময়কার সই হার্মিয়া মিলে ছক কষে তার পিছনে লেগেছে।

হার্মিয়াও হেলেনার অবস্থা দেখে অবাক। লাইস্যান্ডার ও ডিমেট্রিয়াস – দু’জনেই তখন হেলেনার স্তব করতে ব্যস্ত। হার্মিয়া কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না যে, কিসের টানে দু’জনে এক সঙ্গে হেলেনার দিকে ঝুঁকে পড়ল।

একদা অভিন্ন-হৃদয় সই হার্মিয়া ও হেলেনা পরস্পরকে তখন চোখা চোখা বাক্যবাণে বিদ্ধ করতে লাগল।

হেলেনা বলল, “নির্দয়া হার্মিয়া! তুমিই তোমার প্রেমিক লাইস্যান্ডারকে আমার পিছনে মিথ্যে প্রেম নিবেদন করার জন্য লাগিয়েছ। আর তোমার অপর প্রেমিক ডিমেট্রিয়াস, যে আমাকে লাথি মারতে বাকি রেখেছিল, সে এখন আমাকে বলছে দেবী, জলপরি, দুর্লভ, বহুমূল্য, স্বর্গীয়! কেন? কারণ, তুমিই তাকে পাঠিয়েছ, আমার পিছনে লাগতে! নির্দয়া হার্মিয়া! দু’জন পুরুষমানুষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তোমার এই হতভাগিনী সইয়ের পিছনে লাগতে লজ্জা হয় না তোমার? আমাদের পাঠশালার বন্ধুত্বের কথা ভুলে গেলে? হার্মিয়া, কতদিন আমরা এক আসনে বসে একসঙ্গে গান গাইতাম। একই সুতো দিয়ে মালা গাঁথতাম। জোড়া চেরিফলের মতো বেড়ে উঠেছি আমরা। আমাদের দু’জনকে আলাদা করা যেত না। আর আজ, দু’জন পুরুষমানুষকে হাত করে সইয়ের অপমান করা কী নারীসুলভ কাজ বলে তোমার মনে হয়?”

হার্মিয়া বলল, “বাহ্! তোমার এই মিষ্টি মিষ্টি কথাগুলি তো আমাকে অবাক করছে! আমি তোমার পিছনে লেগেছি? না তুমি আমার পিছনে লেগেছ?” হেলেনা পালটা বললে, “হ্যাঁ, বলো বলো! সামনে গম্ভীর মুখে আমাকে কড়া কড়া করে বলো, আর আমি পিছন ফিরলেই একে অপরের দিকে চোখ টিপে দাও আর পিছনে লাগার মজা লোটো! শরীরে বিন্দুমাত্র দয়া, মহত্ব, ভদ্রতা থাকলে কী আর আমাকে নিয়ে এমন বিশ্রী খেলা খেলতে পারতে?”

হার্মিয়া আর হেলেনা ঝগড়া করতে লাগল। এদিকে লাইস্যান্ডার আর ডিমেট্রিয়াস তাদের ছেড়ে বনে ঢুকল, লড়াই করে হেলেনাকে জয় করার অভিপ্রায় নিয়ে।

পরে যখন হার্মিয়া আর হেলেনার খেয়াল হল যে ছেলেরা তাদের ছেড়ে গেছে, তখন দু’জনে ঝগড়া থামিয়ে বনের মধ্যে নিজের নিজের প্রেমিকের সন্ধানে ঘুরতে লাগল।

পরিরাজ তাঁর ছোট্ট পাককে নিয়ে তাদের ঝগড়া শুনছিলেন। তারা চলে যেতেই তিনি পাককে বললেন, “এটা হয় তোর দোষ, নয় তোর বদমায়েশি!” পাক বলল, “বিশ্বাস করুন, অন্ধকারের রাজা, ভুল হয়ে গেছে। আপনি বলেছিলেন, এথেন্সীয় পোষাক দেখে ছেলেটিকে চিনতে। আমি তাই দেখেই ভুল করেছি। তবে কিনা, এই ভুলের জন্য একটুও দুঃখিত নই। ওদের ঝগড়াঝাটি দেখে বেশ মজা হচ্ছে।” ওবেরন বললেন, “শুনলি তো, লাইস্যান্ডার আর ডিমেট্রিয়াস মল্লযুদ্ধের উপযুক্ত জায়গা খুঁজতে গেছে। আমার আদেশ রইল, রাত্রিকে কুয়াশাচ্ছন্ন করে দে। প্রেমিকেরা এই কুয়াশায় পথ হারাক। তারা যেন একে অপরকে খুঁজে না পায়। তুই একজনকে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর গলায় ডাক দিবি। তাকে উসকাবি। সে শত্রুর পিছু নিচ্ছে মনে করে তোর পিছু নেবে। ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের ছোটাছুটি করাবি। তারপর তারা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লে, লাইস্যান্ডারের চোখে এই অপর ফুলের রসটি ঢেলে দিবি। এতে হেলেনার প্রতি তার আকর্ষণ নষ্ট হয়ে যাবে। আবার সে হার্মিয়ার প্রতি তার পূর্বপ্রেম ফিরে পাবে। মেয়েদুটিও তাদের পছন্দসই পুরুষকে প্রেমিক হিসেবে পাবে। তখন এই সব ঘটনা তাদের স্বপ্ন মনে হবে। আমি যাই। দেখি, টাইটানিয়া আবার কোন মিষ্টি প্রেমিকের প্রেমে পড়ল!”

টাইটানিয়া তখনও ঘুমাচ্ছিলেন। ওবেরন দেখলেন, একটা ভাঁড় বনের মধ্যে পথ হারিয়ে সেখানেই শুয়ে ঘুমাচ্ছে। তিনি বললেন, “এই ছোঁড়াই আমার টাইটানিয়ার প্রেমিক হওয়ার যোগ্য!” এই বলে তিনি চট করে জাদুবলে ভাঁড়ের মাথাটা গাধার মতো করে দিলেন। তার কাঁধের উপর গাধার মাথাটা দারুণ মানিয়ে গেল। তবু কাজটা করার সময় তার ঘুম ভেঙে গেল। ওবেরনের কেরামতি অবশ্য সে ধরতে পারল না। সোজা চলে গেল নিকুঞ্জে, যেখানে পরিরানি ঘুমাচ্ছিলেন।

চোখ খুলতেই সেই ছোট্ট লালচে ফুলের জাদুর বশ হলেন টাইটানিয়া, “অহো, কোথাকার দেবদূত ও? তুমি কী সুন্দর? আচ্ছা, তুমি কী যেমন রূপবান, তেমনই বুদ্ধিমান?”

বোকা ভাঁড় বলল, “কেন, মহাশয়া? আপাতত এই বন থেকে বার হওয়ার পথ বের করার মতো বুদ্ধিটুকু পেলেই চলে যায়!”

মোহগ্রস্থা রানি বলে উঠলেন, “তুমি বনের বাইরে যেতে চেয়ো না। আমি সামান্যা পরি নই। আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। আমার সঙ্গে এসো। এখন আমার পরিরা তোমার সেবাযত্ন করবে।”

তখন রানি তাঁর চার পরিকে নাম ধরে ডাকলেন। এরা হল মটরফুল, লূতাতন্তু, মথ ও সরষে-বীজ।

রানি বললেন, “এই ভদ্রলোকের সেবা কর। হাঁটার সময় এঁর আগে আগে যা। এঁর চোখের সামনে নৃত্য কর। এঁকে আঙুর আর খুবানি খাওয়া। আর এঁর জন্য মৌচাক ভেঙে মধু চুরি করে আন।” তারপর ভাঁড়কে বললেন, “এসো, আমার পাশে বসো। হে গর্দভ-সুন্দর, আমি তোমার মধুর রোমশ গালদু’টি নিয়ে খেলা করি! হে আমার কোমলানন্দ, এসো, আমি তোমার লম্বা লম্বা কানদুটি চুম্বন করি!”

গর্দভমুণ্ড ভাঁড় পরিরানির প্রেম নিবেদনকে অতটা গ্রাহ্য করল না। নতুন সেবাদাসেদের পেয়ে তার ভারি গর্ব হচ্ছিল। সে জিজ্ঞাসা করল, “মটরফুল, কোথায় আছিস?”

ছোট্ট মটরফুল উত্তর দিল, “এই যে মহাশয়, আমি এখানে।”

“আমার মাথাটা চুলকে দে তো,” বলল ভাঁড়। “লূতাতন্তু কোথায়?”

“এই যে এখানে, মহাশয়,” বলল লূতাতন্তু।

“বাবা লূতাতন্তু,” বোকা ভাঁড়টা বললে, “ওই থিসল পাতার উপর বসা ছোট্ট লাল মৌমাছিটাকে মেরে আমাকে মৌচাকটা এনে দে তো। দেরি করিসনি। আর দেখিস, যেন ভেঙে না যায়। চটকে গেলে আমি কিন্তু খুব কষ্ট পাব। সরষে-বীজ কোথায়?”

“এইখানে, মহাশয়,” বলল সরষে-বীজ। “কী করতে হবে বলুন।”

“কিছুই না,” বলল ভাঁড়, “বাছা সরষে-বীজ, তুই মটরফুল বাবাজিকে আমার মাথা চুলকাতে সাহায্য কর। বাছা সরষে-বীজ রে, মনে হচ্ছে আমাকে এবার নাপিতের কাছে যেতেই হবে। মুখে অনেক চুল গজিয়েছে।”

রানি বললেন, “প্রিয়তম, কী খাবে বলো। আমার এক পরি তোমাকে একপাল কাঠবিড়ালি আর তাজা বাদাম এনে দিতে পারে।”

যার মাথা গাধার, তার ক্ষুদপিপাসাও গাধারই মতো! ভাঁড় বলল, “বরং একমুঠো শুকনো মটর খাই। কিন্তু শোনো, তোমার এই লোকগুলোকে ছুটি দাও। এরা যেন আমাকে বিরক্ত না করে। একটু ঘুমাতে ইচ্ছে করছে।”

রানি বললেন, “ঘুমাও তবে; আমার বাহুতে মাথা রেখে ঘুমাও। আমি হাত দিয়ে তোমায় বাতাস করি। আহা! আমি তোমায় কতই না ভালবাসি! কতই না চাই!”

ভাঁড়টা রানির বাহুতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে, এমন সময় পরিরাজ চুপিচুপি গিয়ে হাজির হল রানির সামনে।

ভাঁড়টা রানির হাতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিল। রানি তার গাধামুণ্ড ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলেন। তা অস্বীকার করতে পারলেন না।

ওবেরন রানিকে উপহাস করতে লাগলেন। চুরি করে আনা ছেলেটিকে দাবি করতে লাগলেন। স্বামী তাঁর নয়া প্রেমিকের সন্ধান পেয়ে গেছেন দেখে, টাইটানিয়া পড়লেন মহালজ্জায়। তিনি আর ওবেরনকে প্রত্যাখ্যান করতে সাহস পেলেন না।

এইভাবে অনেকদিন ধরে চাইতে থাকা ছেলেটিকে বালকভৃত্য করার জন্য পেয়ে গেলেন ওবেরন। তখন টাইটানিয়ার অবস্থা দেখে তাঁর দয়া হল। তিনি টাইটানিয়ার চোখে অপর ফুলটির রস বুলিয়ে দিলেন। পরিরানি ফিরে পেলেন তাঁর চেতনা। কী এক অদ্ভুত দৈত্যের প্রেমে তিনি পড়েছিলেন, সেই কথাই বার বার বলতে লাগলেন।

ওবেরন ভাঁড়ের মাথা থেকে গাধার মুণ্ডুখানা সরিয়ে নিলেন। সে তার পুরনো মাথাটা ঘাড়ের উপর নিয়ে বোকাটা বাকি ঘুমটা ঘুমালো।

পূর্ণমিলনের পর ওবেরন টাইটানিয়াকে প্রেমিক-প্রেমিকাদের ইতিকথা আর তাদের ঝগড়ার বৃত্তান্ত শোনালেন। পাক তার আগের ভুল সংশোধন করে নিয়েছিল। সে সবাইকে একে অপরের অজ্ঞাতসারে এক জায়গায় এনে ফেলে পরিরাজের দেওয়া ওষুধের সাহায্যে সযত্নে লাইস্যান্ডারের চোখ থেকে আগের জাদুটি মুছে ফেলেছিল।

প্রথম ঘুম ভাঙল হার্মিয়ার। সে দেখল, তার হারানো প্রেমিক লাইস্যান্ডার তার কাছে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তার দিকে। লাইস্যান্ডার ঘুম থেকে উঠে সর্বাগ্রে দেখল হার্মিয়াকেই। দেখামাত্র পরির জাদুতে সে হার্মিয়ার প্রতি তার হারানো প্রেম ফিরে পেল। তখন সকালে তাদের নৈশ অভিযান নিয়ে আলোচনা করতে লাগল। ভাবতে লাগল, এই সব সত্যি ঘটেছে, নাকি সবটাই একটা উটকো স্বপ্ন।

হেলেনা ও ডিমেট্রিয়াসেরও ঘুম ভাঙল। রাতে ঘুমিয়ে হেলেনার সব ক্ষোভ মুছে গিয়েছিল। ডিমেট্রিয়াস তখনও তাকে প্রেমনিবেদন করছিল। শুনে হেলেনার ভারি আনন্দ হল। ডিমেট্রিয়াসের কথাগুলি আচমকা তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হতে শুরু করল। তাতে সে অবাক হলেও অখুশি হল না।

সুন্দরীদের মনেও আগের রাতের ঝগড়ার কোনো রেশ রইল না। তারা আবার প্রাণের সইতে পরিণত হল। আগের রাতের সব কড়া কথাগুলি ক্ষমা করে দিল। সবাই একসঙ্গে বসে ভাবতে লাগল, এবার কী করা যায়। তারা ঠিক করল, ডিমেট্রিয়াস হার্মিয়ার উপর থেকে তার দাবি প্রত্যাহার করে নেবে। সে হার্মিয়ার বাপের কাছে গিয়ে হার্মিয়ার উপর থেকে মৃত্যুদণ্ড তুলে নেওয়ার আর্জিও জানাবে। বন্ধুকৃত্য করার জন্য ডিমেট্রিয়াস যখন এথেন্সে ফেরার তোড়জোড় করছে, এমন সময় পলাতকা মেয়ের খোঁজ করতে করতে তাদের কাছে হাজির হলেন হার্মিয়ার বাপ ইজিয়াস।

ইজিয়াস বুঝলেন, ডিমেট্রিয়াস আর তার মেয়েকে বিয়ে করতে চায় না। তখন আর তিনি লাইস্যান্ডার ও হার্মিয়ার বিয়েতে আপত্তি জানালেন না। কিন্তু বললেন, বিয়ে হবে চার দিন পরে। সেই দিনই হার্মিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। হেলেনাও সেই দিনই তার প্রিয়তম ও অধুনা-বিশ্বস্ত প্রেমিক ডিমেট্রিয়াসের সঙ্গে পরিণয় বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইল।

পরিরাজ ও পরিরানি অদৃশ্য থেকেই তাদের মিলনের সাক্ষী হয়ে রইলেন। দেখলেন তাদের প্রেমকাহিনির মিলনান্তক সমাপ্তি। এই মিলনে তাঁরা এতই খুশি হলেন যে, তাদের বিবাহ উপলক্ষ্যে সারা পরিরাজ্যে উৎসব পড়ে গেল।

এখন শোনো। কারোর যদি পরিদের এই দুষ্টুমি পছন্দ না হয়, কারোর যদি এই সব ঘটনা অবিশ্বাস্য আজগুবি মনে হয়, তাহলে তারা যেন তাদের নিজেদের স্বপ্নগুলির কথা স্মরণ করে। তারাও তো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এমনই সব অভিযানের স্বপ্ন দেখে। তাই আশা করব, পাঠকেরা কেউই এই মিষ্টিমধুর নিরীহ চৈতালি রাতের স্বপ্নটিকে মনগড়া ভাববেন না।

[কৃতজ্ঞতা: অর্ণব দত্ত, http://bangabharati.wordpress.com]

2 Comments
Collapse Comments
পর্দা করা ফরজ September 26, 2022 at 5:04 pm

Read

A very beautiful story of Shakespeare.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *