চাঁদের বিকল্পের জন্যে প্রস্তাব

গোধূলিবেলায় চায়ের আসর বসেছে
পাঁচজন যুবকের। পাঁচ রকম বিষয় নিয়ে
চলেছে আলোচনা আর মাঝে মাঝে
টেবিলে চলে আসছে গরম সিঙাড়া আর
চায়ের সধূম পেয়ালা। আলোচনা, খাদ্য আর পানীয়
সবকিছুই উপভোগ্য ঠেকছে যুবাদের কাছে।

ইতোমধ্যে হরিণের পাটল-রঙ চামড়ার মতো
গোধূলি সন্ধ্যার কাজল রঙের সঙ্গমস্পৃহায়
সমর্পিত। কিছুক্ষণ পরে আকাশে পদ্মফুলের মতো ফুটে ওঠে
গোল চাঁদ। চায়ের বাটিতে চুমুক দিতে দিতে
একজন যুবক বলল, ‘চাঁদের সৌন্দর্যের কথা এত
বিজ্ঞাপিত সারা বিশ্বে কবিদের কল্যাণে, এতে বিন্দুমাত্র
সন্দেহ নেই, তবু বলল, বড়ই একঘেয়ে, ক্লান্তিকর এই রূপ।
আমার ইচ্ছে হয়, একে ত্রিকোণ এবং বেশ
লাল রঙের আকার দিই’। কয়েক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা
ঝুলে থাকে টেবিল।
দ্বিতীয় যুবক একটু কেশে জানায়, ‘আমার ইচ্ছে
অন্যরকম-আমি চাই চাঁদের বদলে
হংস-হংসীময় একটি হ্রদ তৈরি করতে। এই প্রস্তাব
মনঃপূত হলো না তৃতীয় যুবার, সে ঘোষণা করে, ‘চাঁদকে
চিরদিনের মতো অর্ধচন্দ্র দিয়ে সরিয়ে তার জায়গায়
সৃষ্টি করবো কম্পিউটারখচিত এক মনোহর চিত্র। চতুর্থ যুবক
সলাজ হাসির ঢেউ তুলে বলে, ‘না হে, তোমাদের কারও
পরিকল্পনা মনঃপূত হচ্ছে না। যদি আমার বাসনার খবর
জানতে চাও, তবে বলি, আমি চাঁদকে নির্বাসনে
পাঠিয়ে তার স্থলে আঁকবো আমার
সুন্দরীতমা প্রিয়তমার মুখ। এই পরিকল্পনা মানবিক
বিবেচনা করে সবাই মাথা নাড়লো।

পঞ্চম যুবা চায়ের পেয়ালায় চামচ নাড়ছিল
নিঃশব্দে, যেন বোবা সে। বাকি চারজন
তাকে ক্রমাগত খোঁচাতে থাকে ওর প্রস্তাব শোনার
উদ্দেশ্যে। পঞ্চম যুবক দৃষ্টি অস্পষ্ট দিগন্তের দিকে ছড়িয়ে
স্বগতোক্তির মতো বলতে শুরু করে, ‘চাঁদের জায়গায়
এক পাশে স্মারকচিহ্ন হিসেবে থাকবে সদ্য আবিষ্কৃত
একাত্তরের বধ্যভূমির একটি মড়ার খুলি, যার উপরে উড়বে
অগণিত প্রজাপতি। চাঁদ রূপান্তরিত হবে এক শান্তিবাগে,
যেখানে থেকে লড়াই-ফ্যাসাদ, সহিংসতা
নির্বাসিত হবে চিরতরে। থাকবে না সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা,
রক্তচক্ষু মৌলবাদীদের হাতিয়ারের হুঙ্কার। সেখানে
সগৌরবে বিরাজ করবে মনুষ্যত্বের জয়ধ্বনি।
১৫.১১.৯৯