৫৬. মা

৫৬
১৭ই ডিসেম্বর, কাল শেষ হয়ে গেছে যুদ্ধ, আত্মসমর্পণ করেছে পাকিস্তানি সৈন্যরা, রুমীর মা জাহানারা ইমাম বিজয়ের আনন্দে হাসবেন, নাকি কাঁদবেন বুঝছেন না, সকালে সবাই মিলে বাসার ছাদে তুলেছেন স্বাধীন বাংলার পতাকা, কিন্তু দুদিন আগে মারা গেছেন তাঁর স্বামী শরীফ ইমাম সাহেব, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে, আসলে আর্মির নির্যাতনের সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়ায়৷ আর তা ছাড়া রক্তহিম করা সব খবর আসছে, মুনীর চৌধুরী নাই, শহীদুল্লা কায়সার নাই, ডা. রাবি্ব, ডা. আলীম চৌধুরী, তাঁদের কারা যেন দুদিন আগে চোখ বেঁধে জিপে করে তুলে নিয়ে গেছে, বিকাল নাগাদ খবর আসে, রায়েরবাজারের জলা ডোবাটা একটা বধ্যভূমি, পড়ে আছে সবার লাশ… আরো পরে জানা যাবে, কারা করেছে এই অপকীর্তি, পাকিস্তানি জেনারেল আর সৈন্যদের পুরো ৯ মাসই সহযোগিতা করেছে এ দেশের কিছুসংখ্যক মানুষ, জামায়াতে ইসলামী আর মুসলিম লিগের অনেকেই, গঠন করেছে রাজাকার, আল বদর, আল শামস, পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের, তাদের শিবিরে তাদের লালসার কাছে জোর করে ঠেলে পাঠিয়েছে বাঙালি তরুণী কিশোরী নারীদের, আর যুদ্ধের শেষ দিকে এসে জামায়াতি ও তাদের ছাত্র উইংয়ের দ্বারা গঠিত আল বদররা তালিকা প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের, বাছাই করে বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে চোখ বেঁধে পিঠমোড়া করে হাত বেঁধে তারা নিয়ে গেছে এ দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, লেখক, সাংবাদিকদের, তাঁরা সবাই পড়ে আছে লাশ হয়ে রায়েরবাজারে, মিরপুরে…
সন্ধ্যার পরে বিদ্যুৎ নাই বলে মোমবাতি জ্বালিয়ে বসে আছেন জাহানারা ইমাম, তাঁর দু বাহুর ভেতরে জামী, বাইরে গাড়ির শব্দ, তারপর দরজায় করাঘাত, কাঁধে স্টেন ঝুলিয়ে কয়েকটা তরুণ দাঁড়িয়ে, তিনি বলেন, ‘এসো বাবারা এসো৷’
‘আমি মেজর হায়দার, এ শাহাদত, এ আলম, এ আনু, ফতেহ, জিয়া আর এই যে চুল্লু৷’
বড় গোঁফ, জুলফি নেমে এসেছে দাড়ির ধরনে, মিলে গেছে গোঁফের সঙ্গে, আলম বলে, ‘চুল্লু জেলে ছিল ৷ আমি নিজেই এদের রিলিজ অর্ডারে সাইন করে এদের ছাড়িয়ে নিয়ে এলাম৷’
আলমের চাইনিজ স্টেনগানটা জাহানারা ইমাম নিজের হাতে তুলে নেন৷ তারপর তুলে দেন জামীর হাতে৷

1 Comment
Collapse Comments
rajon ahmed rumel July 13, 2020 at 4:59 pm

দারুন লাগছে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *