একফোঁটা জল

রামগঞ্জের জমিদার শ্যামবাবু যে খেয়ালী লোক তা জানতাম। কিন্তু তাঁর খেয়াল যে এতদূর খাপছাড়া হতে পারে তা ভাবিনি। সেদিন সকালে উঠেই এক নিমন্ত্রণ পত্র পেলাম। শ্যামবাবু তাঁর মাতৃশ্রাদ্ধে সবান্ধবে নিমন্ত্রণ করেছেন। চিঠি পেয়ে আমার মনে কেমন যেন একটু খটকা লাগল। ভাবলাম–শ্যামবাবুর মায়ের অসুখ হল অথচ আমি একটা খবর পেলাম না! আমি হলাম এদিককার ডাক্তার।
যাই হোক নেমন্ত্রন্ন যখন করেছেন তখন যেতেই হবে। গেলাম। গিয়ে দেখি শ্যামবাবু গলায় কাচা নিয়ে সবাইকে অভ্যর্থনা করছেন। তাঁর মুখে একটা গভীর শোকের ছায়া। আমাকে দেখেই বল্লেন, “আসুন ডাক্তারবাবু–আসতে আজ্ঞা হোক্‌!”
দু’চার কথার পর জিজ্ঞাসা করলাম–“ও, আপনি শোনেননি বুঝি! আমার মা ত আমার ছেলেবেলাতেই মারা গেছেন–তাঁকে আমার মনেও নেই–ইনি আমার আর এক মা–সত্যিকারের মা ছিলেন।”
ভদ্রলোকের গলা কাঁপতে লাগল।
আমি বললাম–“কি রকম? কে তিনি?”
তিনি বললেন–“আমার মঙ্গলা গাই–আমার মা কবে ছেলেবেলায় মারা গেছেন মনে নেই–সেই থেকে ওই গাইটিই তো দুধ খাইয়ে আমাকে এত বড় করেছে। ওরি দুধে আমার দেহ মন পুষ্ট। আমার সেই মা আমায় এতদিন পরে ছেলে গেলেন ডাক্তারবাবু!”
এই বলে তিনি হু হু করে কেঁদে ফেল্লেন।
আমার বিস্ময়ের আর সীমা রইল না।

Leave a Reply to হামিদুল ইসলাম Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *