পারুল প্রসঙ্গ

“ও কি তোমাদের মত উপায় ক’রে খাবে নাকি?”
“উপায় ক’রে না খাক–তা ব’লে মাছ দুধ চুরি ক’রে খাওয়াটা–”
“আমার ভাগের মাছ দুধ আমি ওকে খাওয়াব!”
“সে তো খাওয়াচ্ছই–তাছাড়াও যে চুরি করে। এরকম রোজ রোজ–”
“বাড়িয়ে বলা কেমন তোমার স্বভাব। রোজ রোজ খায়?”
“যাই হোক–আমি বেড়ালকে মাছ দুধ গেলাতে পারব না। পয়সা আমার এত সস্তা নয়।”
এই বলিয়া ক্রুদ্ধ বিনোদ সমীপবর্তিনী মেনি মার্জারীকে লক্ষ্য করিয়া চাটজুতা ছুঁড়িল। মেনি একটি ক্ষুদ্র লম্ফ দিয়া মারটা এড়াইয়া বাহিরে চলিয়া গেল। সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী পারুলবালাও চক্ষে আঁচল দিয়া উঠিয়া গেলেন। বিনোদ খানিকক্ষণ গুম্‌ হইয়া রহিল। কতক্ষণ আর এ-ভাবে থাকিবে? অবশেষে তাহাকেও উঠিতে হইল। সে আসিয়া দেখে পশ্চিম বারান্দায় মাদুর পাতিয়া অভিমানে পারুলবালা ভূমি-শয্যা লইয়াছেন।
বিনোদ জিনিসটা লঘু করিয়া দিবার প্রয়াসে একটু হাসিয়া বলিল–“কি করছ ছেলেমানুষী! আমি কি সত্যি সত্যি তোমার বেড়াল তাড়িয়ে দিচ্ছি!”
পারুল নিরুত্তর।
বিনোদ আবার কহিল–“চল চল–তোমার বেড়ালকে মাছ দুধই খাওয়ান যাক্‌।”
পারুল–“হ্যাঁ, সে তোমার কাছে মাছ দুধ খাওয়ার জন্যে ব’সে আছে কি না? তাড়াবেই যদি, এই অন্ধকার রাত্রে না তাড়ালে চলছিল না?”
“আচ্ছা, আমি খুঁজে আন্‌ছি তাকে–কোথায় আর যাবে?” বিনোদ লণ্ঠন হাতে বাহির হইয়া গেল।
এদিক ওদিক রাস্তা ঘাট জামগাছতলা প্রভৃতি চারদিক খুঁজিল, কিন্তু মেনির দেখা পাইল না। নিরাশ হইয়া অবশেষে ফিরিয়া আসিয়া দেখিল–পারুল ঠিক তেমনি ভাবেই শুইয়া আছে!–“কই দেখ্‌তে পেলাম না ত বাইরে। সে আসবে ঠিক। চল, ভাত খাইগে চল।”
“চল, তোমাকে ভাত দিই, আমার আর ক্ষিদে নেই।”
“Hunger strike করবে না কি!”
পারুল আসিয়া রান্নাঘরে যাহা দেখিল–তাহার সংক্ষিপ্ত পরিচয় এই :– কড়ায় একটুও দুধ নাই–ভাজা মাছগুলি অন্তর্হিত–ডালের বাটিটা উল্টান।
এই বিসদৃশ ব্যাপার দেখিয়া পারুল অপ্রস্তুত!
বিনোদ এ-সম্বন্ধে আর আলোচনা করা নিরাপদ নয় ভাবিয়া যাহা পাইল খাইতে বসিয়া গেল।
পারুলবালাও খাইলেন।
উভয়ে শুইতে গিয়া দেখে মেনি কুণ্ডলী পাকাইয়া আরাম করিয়া তাহাদের বিছানায়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *