ঋগ্বেদ ১০।০৩৭

ঋগ্বেদ ১০।০৩৭
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৩৭
সূর্য্য দেবতা। অভিতপা ঋষি।

১। হে পুরোহিতগণ! যে সূর্যদেব মিত্র ও বরুণকে দেখিতে পান, যার দীপ্তি অতি উজ্জ্বল; যিনি দূর হইতে সকল বস্তু দৃষ্টি করেন, যিনি দেবতাদিগের বংশে জন্ম গ্রহণ করিয়াছেন, যিনি সকল বস্তু পরিষ্কার করিয়াদেন, যিনি আকাশের পুত্রস্বরূপ, সেই সূর্য্যদেবকে নমস্কার কর, পূজা কর, স্তব কর।

২। সেই যে সত্যবাক্য (১) আকাশ এবং দিবা যাকে অবলম্বন করা বর্তমান কাছে, বিশ্বভুবন এবং প্রাণিবর্গ যাহার আশ্রিত, যাঁহার প্রভাবে প্রতিদিন জল প্রবাহিত হইতেছে এবং সূর্যদেব উদয় হইতেছে, সেই সত্যবাক্য যেন আমাকে সকল বিষয়ে রক্ষা করে।

৩। হে সূৰ্য্যদেব! যখন তুমি বেগবান ঘোটক রথে যোজনা পূর্বক আকাশ পথে গমন কর, তখন কোনও দেবরহিত জীব তোমার নিকটে আসতে পায় না। তোমার সেই চিরপরিচিত অসাধারণ জ্যোতিঃ তোমার সঙ্গে সঙ্গে যায়, সেই অসাধারণ জ্যোতিঃ ধারণপূর্বক তুমি উদয় হও।

৪। হে সূর্যদেব! যে জ্যোতির দ্বারা তুমি অন্ধকার নষ্ট কর এবং যে কিরণের দ্বারা সমস্ত বিশ্বজগৎ প্রকাশ কর, তাহার দ্বারায় আমাদিগের সর্ব প্রকার দরিদ্রতা নষ্ট কর, আমাদিগের পাপ ও রোগ ও দুঃস্বপ্ন দূর কর।

৫। হে সূর্যদেব! তুমি অক্লিষ্টভাবে বিশ্বভুবনের ক্রিয়াকলাপ রক্ষা করিবার জন্য প্রেরিত হইয়াছ, তু্মি প্রাতঃকালের হোম হইলে উদয় হও। হে সূৰ্য্য! অদ্য আমবা যখন তোমার নাম উচ্চারণ করি, তখন যেন দেবতাগণ আমাদিগের যজ্ঞ সফল করেন।

৬। দ্যাবাপৃথিবী এবং জলগণ এবং ইন্দ্র এবং মরুতগণ আমাদিগের আহ্বানবাক্য শ্রবণ করুন। সূর্যের কৃপা দৃষ্টি থাকিতে আমরা যেন দুঃখভাগী না হই। আমরা যেন দীর্ঘজীবী হইয়া বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত সৌভাগ্যশালী থাকি।

৭। হে বন্ধুবর্গের সৎকারকারী সূৰ্য্যদেব! যেমন তুমি দিন দিন উদয় হও, আমরা যেন প্রত্যহই তোমাকে প্রশস্ত মনে, প্রশস্ত চক্ষে দর্শন করি, যেন প্রত্যহই নীরোগ শরীরে সন্তানসন্ততি পরিবৃত হইয়া তোমার নিকট কোন দোষে দোষী না হইয়া তোমার দর্শন পাই। যেন আমরা চিরজীবী হইয়া তোমার দর্শন পাই।

৮। হে সর্বত্র দৃষ্টিকারী সূৰ্য্য! তুমি বিপুল জ্যোতি ধারণ কর, তোমার দ্বীপ্তি উজ্জল, সকলের চক্ষেই তুমি সুখকর। যখন তোমার সেই মূৰ্ত্তি আকাশের উর্ধদেশে আরোহণ করে, আমরা যেন জীবন্ত শরীরে তাহা নিত্য দর্শন করি।

৯। তোমার যে পতাকার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত বিশ্বজগৎ প্রকাশ পায়, আবার প্রতি রাত্রে অন্ধকারাচ্ছন্ন ও অন্তর্ধান হয়, হে পিঙ্গলবর্ণ কেশধারী সূৰ্য্য। তুমি তোমার সেই চমৎকার পতাকা লইয়া দিন দিন উদয় হও, আমরাও যেন কোন দোষের দোষী না হইয়া উহার দর্শন পাই।

১০। তোমার দৃষ্টি আমাদিগের কল্যাণ করুক, তোমার দিবস ও তোমার কিরণ, তোমার শীতলত্ব ও তোমার উত্তাপ কল্যাণকর হউক, আমরা গৃহেই অবস্থিত করি, বা পথে যাত্রা করি, সর্বদা তাহা কল্যাণ করুক। হে সূৰ্য্য! বিবিধ সম্পত্তি আমাদিগকে বিতরণ কর।

১১। হে দেবগণ! আমাদিগের অধিকারভুক্ত যে দুই প্রকার প্রাণিবর্গ আছে, অর্থাৎ দ্বিপদ ও চতুষ্পদ, সকলকে তোমরা সুখী কর। সকল প্রাণীই আহার করুক, পান করুক, হৃষ্টপুষ্ট, বলিষ্ঠ হউক এবং আমাদিগের সংসর্গে তাহারা অবিচ্ছিন্ন সচ্ছন্দতা লাভ করুক।

১২। হে ধনসম্পন্ন দেবতাগণ! কথায় হউক, বা মানসিক ক্রিয়া দ্বারা হউক, যাহা কিছু অপরাধের কাৰ্য্য আমরা দেবতাদিগের নিকট করিয়া থাকি, যে ব্যক্তি দানধর্মে বিমুখ এবং কেবল আমাদিগের অনিষ্ট কামনা করে উহার পাপ তোমরা সেই ব্যক্তির স্কন্ধে আরোপিত কর।

————

(১) মূলে “সত্য উক্তিঃ” আছে। সত্যই আকাশ ও দিবা ও প্রাণিবর্গ, বৃষ্টি ও সূর্য্য ও বিশ্বভুবনের অবলম্বন।