ঋগ্বেদ ১০।০৩২

ঋগ্বেদ ১০।০৩২
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৩২
ঋষি ও দেবতা পূর্ববৎ।

১। যজ্ঞকর্তা ব্যক্ত ইন্দ্রকে ধ্যান করিতেছেন, ইন্দ্র তাহার সেবা গ্রহণ করিবার জন্য আপনার অশ্বদ্বয়কে সেই দিকে প্রেরণ করিতেছেন, অশ্ব দুটা বিচিত্র গতিতে আসিতেছে। যজমান প্রসন্নমনে উত্তম উত্তম সামগ্রী দিতেছে, ইন্দ্রও উত্তম উত্তম বর লইয়া আসিতেছেন। যখন ইন্দ্র সোমরস ও আহারীয় দ্রব্যের আস্বাদ পান, তখন আমাদিগের স্তব ও আমাদিগের হোমের দ্রব্য উভয়ই গ্রহণ করেন।

২। হে ইন্দ্র! তোমাকে বিস্তর লোকে স্তব করে। তুমি আলোক বিস্তার করিতে করিতে ভিন্ন ভিন্ন স্বর্গীয় ধামে বিচরণ কর, তুমি জ্যোতিঃ লইয়া পৃথিবীতে আগমন করিয়া থাক। তোমার যে দুই ঘোটক তোমাকে যজ্ঞে বহন করিয়া আনে, তাহারা আমাদিগকে ধনবান করুক, কারণ ধন আমাদিগের নাই, ধনের জন্যই আমরা এই সকল প্রার্থনাবাক্য উচ্চারণ করিতেছি।

৩। পুত্র জন্ম গ্রহণ করিয়া পিতার নিকট যে ধন প্রাপ্ত হয়, সেই অতি চমৎকার ধন, ইন্দ্র আমাকে দিতে ইচ্ছুক হউন। পত্নী মিষ্ট বচনের দ্বারা স্বামীকে আপনার নিকটে আহ্বান করিতেছেন। সোমরস উত্তমরূপে প্রস্তুত হইয়া, সেই পৌরুষসম্পন্নের প্রতি যাইতেছে।

৪। স্তুতিস্বরূপ গাভীগণ যে স্থানে মিলিত হইয়াছে, সেই স্থানকে তোমার উজ্জ্বল দীপ্তিদ্বারা আলোকযুক্ত কর। স্তবসমূহের যে প্রাচীন ও পূজনীয় মাতা আছেন, তাহার সাত পুত্র সেই স্থানে উপস্থিত আছেন ।

৫। দেবতাদিগের নিকট যে অগ্নি গমন করেন, তিনি তোমাদিগের হিতার্থে দেখা দিয়াছেন, তিনি একাকী রুদ্রদিগের সঙ্গে শীঘ্র আপন স্থানে গমন করেন। এই যে অমর দেবতাগণ, ইহাদিগের বলের হ্রাস হইতেছে, অতএব বন্ধুবর্গ পরিবেষ্টিত হইয়া যজ্ঞীয় মধু ইহাদিগের জন্য ঢালিয়া দাও, তাহা হইলে ইহারা বর দিবেন।

৬। দেবতাদিগের উদ্দেশে যে সমস্ত পুণ্যানুষ্ঠান হয়, বিদ্বান ইন্দ্র তাহা রক্ষা করেন । তিনি বলিয়া দিয়াছেন, যে অগ্নি জলের মধ্যে নিগূঢ়ভাবে সমর্পিত আছেন। হে অগ্নি! সেই উপদেশ অনুসারে আমি তোমার দিকে আসিয়াছি।

৭। যদি কেহ কোন স্থান না জানে, তবে সে যে ব্যক্তি জানে, তাহাকে জিজ্ঞাসা করে, অভিজ্ঞ ব্যক্তির উপদেশ পাইলে, সে সেই অভিলষিত স্থানে উপনীত হইতে পারে। অভিজ্ঞ ব্যর উপদেশের এই গুণ যদি জল অন্বেষণ কর, তবে যে স্থানে জল আছে, সেই স্থানে যাইতে পারবে।

৮। অদ্যই ইনি জীবন পাইয়াছেন, এই কয়েক দিন ধরিয়া ক্রমশঃ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইয়াছেন, জননীর উধঃ চোষণ করিয়াছেন। এই যুবা অবস্থাতেই ইহার জরা উপস্থিত হইয়াছে। ইনি অক্লিষ্টকর্মা, ধন্যাঢ্য ও মনঃপ্রসাদসম্পন্ন হইয়াছেন(১)।

৯। হে কলস! হে কুরুশ্রবন! তুমি যজ্ঞ দিতেছ, তোমার জন্য এই সকল স্তব রচনা করিলাম। সেই মধবান ইন্দ্র, তোমাদিগের পক্ষে দাতা হউন, আর এই যে সোম, যাহাকে অমি হৃদয়ে ধারণ করতেছি, তিনিও দাতা হউন।

————

(১) বোধ হয়, অগ্নি ত্বরিত উৎপত্তি ও বৃদ্ধি ও হ্রাসের বিষয় ইহাতে গোবৎসের সহিত রূপক করিয়া বর্ণনা করা অভিপ্রেত। সায়ণের ব্যাখ্যা নিতান্ত অসঙ্গত।