ঋগ্বেদ ১০।০০৮

ঋগ্বেদ ১০।০০৮
ঋগ্বেদ সংহিতা।। ১০ম মণ্ডল।। সূক্ত ৮
প্রথমে অগ্নি, পরে ইন্দ্র দেবতা। ত্রিশিরা ঋষি।

১। প্রকাণ্ড পতাকা লইয়া অগ্নি যাইতেছেন। বৃষের ন্যায় শব্দ করিতেছেন, শব্দে দ্যুলোক ও ভূলোক শব্দায়মান। গগনের কি দূর, কি নিকট, সকল স্থান ব্যাপিয়া ফেলিলেন। জলের ভাণ্ডারের নিকট, অর্থাৎ আকাশে, তিনি প্রকাণ্ড মূর্তিতে (অর্থাৎ বিদ্যুতের আকারে) বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইলেন।

২। অগ্নি অল্পবয়স্ক বৃষের ন্যায় আমোদ করিলেন, দেখ তাঁহার শিখাই তাহার ককুদ। বৎসটী দেখতে সুশ্রী, কত খেলা খেলিতেছে, শব্দ করিতেছে। দেবারাধনার কালে কত উৎসাহ প্রদর্শন করিতেছে এবং সর্বাগ্রে আপনা হইতেই আপন স্থানে যাইতেছে।

৩। দ্যুলোক ও ভূলোক অগ্নির পিতা মাতার তুল্য, তাঁহাদিগের মস্তকে ইনি আরোহণ অর্থাৎ শিখা বিস্তার করেন। এই বীরের অস্থিরমূর্তিকে যজ্ঞে আধান করা হইল। ইনি যখন চলিলেন, তখন যজ্ঞ স্থানের লোকেরা চতুর্দিগব্যাপী ইহার দীপ্তিবিশিষ্ট মূর্তিসমূহের নিকটবর্তী হইল।

৪। হে ধন স্বরূপ! প্রতি দিন প্রভাতে তুমি অগ্রে আসিয়া থাক। রাত্রি ও দিনের সন্ধিসময়ে তুমি দীপ্তিশালী হও। তুমি নিজ দেহ হইতে সূর্যের ন্যায় তেজঃ উৎপাদনপূর্বক যজ্ঞের জন্য সপ্তস্থানে উপবেশন কর।

৫। হে অগ্নি! তুমি মহত্ত্বযুক্ত যজ্ঞের চক্ষুস্বরূপ। যখন তুমি যজ্ঞের জন্য গমন কর, তৎকালে তুমি আবরণকারী রক্ষাকর্তা হইয়া থাক। হে বুদ্ধিমান! তুমি জলের পৌত্র (১)। যাহার আহুতি গ্রহণ কর, তুমি তাহার দূত হইয়া থাক।

৬। হে অগ্নি! তুমি যে আকাশে নিযুৎ নামক ঘোটকের সহিত বায়ুর সঙ্গে মিলিত হও, তথায় তুমি যজ্ঞের নির্বাহকর্তা এবং জলের প্ৰেরণকর্তা হইয়া থাক। তুমি আকাশের দিকে তোমার মস্তক উত্তোলন কর। হে অগ্নি। সর্ববস্তু প্রদানকারিণী শিখাস্বরূপ তোমার হিরার উপর তুমি হোমের দ্রব্য বহন কর।

৭। ত্রিত যজ্ঞ করিয়া এই প্রার্থনা করিলেন, তাহার ইচ্ছা যে, যজ্ঞের মধ্যে পিতার ধ্যান করিয়া নানা বিপদে রক্ষা পান। তিনি প্রার্থনার অনুরোধে পিতা মাতার নিকটে উপযুক্ত বাক্য বলি বলিতে যুদ্ধের অস্ত্র বইতে গেলেন।

৮। আপ্তের পুত্র সেই ত্রিত, ইন্দ্রকর্তৃক প্রেরিত হইয়া নিজ পিতার যুদ্ধাস্ত্র সকল গ্রহণপূর্বক যুদ্ধ করিলেন। সপ্ত রশ্মি ত্রিশিরাকে (২) বধ করিলেন। ত্বষ্টার পুত্রের গাভী সমস্ত অপহরণ করিলেন।

৯। শিষ্টপালনকর্তা ইন্দ্র, অভিমানী ও সর্বব্যাপিতেজোবিশিষ্ট ত্বষ্টার পুত্রকে বিদীর্ণ করিলো। তিনি গাভীদিগকে আহ্বান করিতে করিতে ত্বষ্টার পুত্র বিশ্বরূপের তিন মস্ত ছেদন করন (৩)।

——

 (১) জলের পুত্র মেঘ, মেঘের পুত্র বিদ্যুৎ, অর্থাৎ অগ্নি। সায়ণ।

(২) “The three-headed seven-rayed (monster).”-Muir’s Sanscrit Tests, vol. V (1844), p. 230.

(৩) ইন্দ্রের ও ত্রিতের ত্বষ্টার সহিত বৈরভাব ছিল এবং ইন্দ্র ত্বষ্টার পুত্র বিশ্বরূপকে হনন করেন, এরূপ একটী বৈদিক আখ্যান আছে, তাহা পুর্বেই বলা হইয়াছে।