ঋগ্বেদ ০৮।০৩৩

ঋগ্বেদ ০৮।০৩৩
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ৩৩
ইন্দ্র দেবতা। কণ্বগোত্রীয় প্রিয়মেধ ঋষি।

১। হে বৃত্রহা! আমরা সোম অভিষব করিয়াছি। নিম্নাভিমুখে জলের ন্যায় আমরা তোমার অভিমুখে গমন করিব, পবিত্র সোম প্রশ্রুত হইলে স্তোতাগণ তোমার উপাসনা করে।

২। হে নিবাসপ্রদ ইন্দ্র! অভিযুত সোম নির্গত হইলে উকথবিশিষ্ট নেতাগণ স্তোত্র করিতেছে। ইন্দ্র কখন সোমের জন্য তৃষ্ণার্ত হইয়া বৃষভের ন্যায় শব্দ করত যজ্ঞ স্থানে আগমন করিবেন?

৩। হে শত্রুদমনকারী ইন্দ্র! কণ্বগণকে সহস্বসংখ্যক অন্ন দান কর। হে মঘবা, বিচক্ষণ ইন্দ্র! আমরা ধৃষ্ট, পিশঙ্গরূপবিশিষ্ট ও গোমান অন্ন যাচঞা করিতেছি।

৪। হে মেধ্যাতিথি! সোম পান কর। যিনি অশ্বদ্বয়কে রথে যোজিত করেন, যিনি সোমে সহায় হন, যিনি ব্রজী এবং যাহার রথ হিরন্ময়, সোমজনিত মত্ততা হইলে পর সেই ইন্দ্রের স্তুতি কর।

৫। যাহার বামহন্ত সুন্দর, দক্ষিণহস্ত সুন্দর, যিনি ঈশ্বর ও সুত্রুতু যিনি সহস্রকৰ্ত্তা, যিনি বহুধনশালী, যিনি পুরী ভেদ করেন এবং যিনি যজ্ঞে স্থির, সেই ইন্দ্রের স্তুতি করি।

৬। বিনি ধর্ষক, যিনি শত্ৰুগণকর্তৃক অপরিবৃত্ত, যুদ্ধে যাহার আশ্রয় গ্রহণ করা হয়, যিনি প্রভুত বলবান, সোমপায়ী এবং বহুস্তুত সেই ইন্দ্র স্বকাৰ্য্যে সমর্থ যজমানের দুগ্ধপ্রদ গাভীস্বরূপ।

৭। যিনি সুন্দর হনুবিশিষ্ট, সোমদ্বারা পরিতৃপ্ত এৰং বলপূর্বক পুরী ভেদ করেন, সোমাভিষব হইলে ঋত্বিকগণের সহিত সোমপায়ী সেই ইন্দ্রকে কে জানে? কে বা অন্ন দান করে?

৮। শত্রুগণের অন্বেষণকারী হস্তী যেরূপ মদ জল ধারণ করে (১), সেইরূপ ইন্দ্র যজ্ঞে মত্ততা ধারণ করেন। হে ইন্দ্র! তমাকে কেহ নিয়মিত করিতে পারে না, তুমি সোমাভিমুখে আগমন কর। তুমি বীৰ্য প্রভাবে সর্বত্র বিচরণ করিয়া থাক।

৯। ইন্দ্র উগ্র হইলে শত্রুরা তাঁহাকে আচ্ছাদিত করিয়া রাখিতে পারে না, তিনি অচল, তিনি যুদ্ধে অলঙ্কৃত হন। ধনবান ইন্দ্র যদি স্তোতার আহ্বান শ্রবণ করেন, অন্যত্র গমন করেন না, কেবল তথায় আগমন করেন।

১০ হে উগ্র! তুমি সত্যই এইরূপ, তুমি অভীষ্টবৰ্ষী, তুমি কামবৰ্ধিগণকর্তৃক আকৃষ্ট এবং আমাদের শত্রু কর্তৃক অপরিবৃত। তুমি অভীষ্টবর্ষী বলিয়া খ্যাত আছ, দুরে এবং সমীপে অভীষ্টবর্ষী বলিয়া খ্যাত আছ।

১১। হে মঘবন! তোমার অশ্বরজ্জু অভীষ্টবৰ্ষী; হিরিণ্ময়ী কশা অভীষ্টবৰ্ষী এবং তোমার অশ্বদ্বয় অভীষ্টবৰ্ষী, হে শতক্রতু! তুমি অভীষ্টাবর্ষী।

১২। হে অভীষ্টবৰ্ষী! তোমার অভিষবণকারী অভীষ্টবর্ষী হইয়া অভিষব করুন; হে ঋজুগামী! ধন দান কর; হে ইন্দ্র! অশ্বাভিমুখে স্থিত বর্ষিতা তোমার জন্য জলে সোম ধারণ করিয়াছেন।

১৩। হে বলবান ইন্দ্র! সোমরূপ মধুপানার্থ আগমন কর। সুকর্মা ধনবান এই ইন্দ্র আমাদের নিকটে আগমন না করিয়া স্তুতি, স্তোত্র এবং উকথ শ্রবণ করেন।

১৪। হে বৃত্রহা শতক্রতু! তুমি রণস্থ এবং ঈশ্বর, রথে যোজিত অশ্বগণ অন্যের যজ্ঞ তিরস্কার করিয়া তোমাকে আমাদের যজ্ঞে আনয়ন করুন।

১৫। হে মহামহ! অদ্য আমাদের নিকটবর্তী স্তোম ধারণ কর। হে দীপ্তসোমপা ইন্দ্র! তোমার মত্ততার জন্য আমাদের যজ্ঞ কলযাণকর হউক।

১৬। যে বীর ইন্দ্র আমাদিগের নেতা, তিনি তোমার, আমার এবং অন্যের শাসনে প্রীত হন না।

১৭। ইন্দ্রই তাহা বলিয়াছেন যে, স্ত্রীর মন দুঃশাস্য, স্ত্রীর ক্রতু লঘু।

১৮। সোমাভিমুখে গমনকারী অশ্বমিথুন ইন্দ্রের রথ বহন করে। অভীষ্টকর্মী ইন্দ্রের রথ অশ্ববিষয়ে শ্রেষ্ঠ।

১৯। হে প্রয়োগিন! তুমি অধোদেশ নিরীক্ষণ কর, উৰ্দ্ধদেশ নিরীক্ষণ করিও না। পাদদ্বয় সংশ্লিষ্ট কর, অবয়ব গোপন কর, যেহেতু তুমি স্তোতা হইয়াও স্ত্রী হইয়াছ (২)।

————

(১) দানযুক্ত মত্তহস্তীর উল্লেখ এখানে পাওয়া যায়।

(২) প্রয়োগী পুরুষ হইয়াও স্ত্রী হইয়া গিয়াছিলেন। সায়ণ।