ঋগ্বেদ ০৮।০২১

ঋগ্বেদ ০৮।০২১
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ২১
শেষ দুইটি ঋকের চিত্র রাজার দান দেবতা; অবশিষ্টের ইন্দ্র দেবতা। কণ্বের পুত্র সোভরি ঋষি।

১। হে অপূর্ব ইন্দ্র! আমরা তোমাকে স্থূল ব্যক্তির ন্যায় পোষণ করতঃ রক্ষা লাভের অভিলাষে সংগ্রামে তোমার আহ্বান করিতেছি। তুমি নানা রূপধারী।

২। হে ইন্দ্ৰ! যজ্ঞ রক্ষার্থ তোমার নিকট যাইতেছি। এই ইন্দ্র শত্ৰুদিগের অভিভবকর, তিনি যুবা এবং উগ্র, তিনি আমাদিগের অভিমুখে আগমন করুন। আমরা সখা, হে ইন্দ্র! তুমি ভজনীয় ও রক্ষাকারী, আমরা তোমাকেই বরণ করিতেছি।

৩। হে অশ্বপতি, গোপতি, উর্বরাপতি, সোমপতি ইন্দ্র! আগমন কর। এই সকল সোম তোমারই, তুমি পান কর।

৪। আমরা বন্ধুরহিত মেধাবী, তুমি বন্ধুমান, তোমারই সঙ্গে বন্ধুতা করিব। হে অভিলাষপ্রদ ইন্দ্র! তোমার যে তেজ আছে, সেই সমস্ত তেজের সহিত সোম পানার্থ আগমন কর।

৫। হে ইন্দ্র! গব্যমিশ্ৰিত মদকর স্বৰ্গপ্ৰাপ্তির হেতুস্বরূপ তোমার সোমে পক্ষীসমূহের ন্যায় নিষণ্ন হইয়া আমরা তোমারই স্তব করিতেছি।

৬। হে ইন্দ্র! এই স্তোত্রের সহিত তোমার অভিমুখে তোমারই স্তব করিব। তুমি কেন বারংবার চিস্তা করিতেছি? হে হরিযুক্ত ইন্দ্র! আমাদের অভিলাষ আছে, তুমি দাতা, আমাদিগের কৰ্ম্ম তোমারই নিকটে আছে।

৭। হে ইন্দ্র! তোমার রক্ষা লাভ করিয়া আমরা নতুন হইব। হে বজ্রধারী ইন্দ্র! পুর্বে জানিতাম না, যে তুমি মহান। সম্প্রতি জানিয়াছি।

৮। হে শূর ইন্দ্র! আমরা তোমার সখিত্ব জানিয়াছি, তোমার ভোজ্য জানিয়াছি। হে বজ্রবান ইন্দ্র! তোমার সখ্য ও ধন যাচঞা করিতেছি। হে বাসপ্রদ, সুন্দর হনুবিশিষ্ট ইন্দ্র! গোযুক্ত সমস্ত অন্নে আমাদিগকে তীক্ষ্ণ কর।

৯। হে সখাগণ, যে ইন্দ্র পুৰ্ব্বকালে এই প্রশস্ত ধন আমাদিগকে আনিয়া দিয়াছিলেন, তোমাদের রক্ষার্থ তাঁহাকেই স্তব করিতেছি।

১০। হরিদ্বর্ণ অশ্বযুক্ত, সাধুগণের পালক, শত্রুগণের অভিভবকর ইন্দ্রকে, যে কেহ আনন্দিত হয়, সেই স্তব করে। মঘবা ইন্দ্র তাঁহার স্তোতা বলিয়া আমদিগকে শত গোসমূহ ও অশ্বসমূহ আনয়ন করিয়া দিন।

১১। হে অভিলাষপ্রদ ইন্দ্র! তোমাকে সহায় করিতা গোবিশিষ্ট লোকদিগের সহিত যুদ্ধে অতি ক্রোধান্বিত শত্রুকে নিরাকৃত করিব।

১২। হে পুরুহূত ইন্দ্র! আমাদিগের হিংসাকারিগণকে যুদ্ধে জয় করিব। পাপবুদ্ধি লোককে পরাভূত করিব। মরুৎগণের সাহায্যে বৃত্রকে বধ করিব। কৰ্ম্ম বৰ্দ্ধিত করিব। হে ইন্দ্র! আমাদের কৰ্ম্ম সকল রক্ষা কর।

১৩। হে ইন্দ্র! তুমি জন্মাবধি শত্রুরহিত ও বহুকাল হইতে বন্ধুরহিত। তুমি যে বন্ধুত্ব ইচ্ছা কর, সে কেবল যুদ্ধদ্বারা লাভ করিয়া থাক।

১৪। হে ইন্দ্র! ধন্যবান মানবকে বন্ধুতার জন্য কেন আশ্রয় কর না? সুরা প্রমত্ত ব্যক্তি তোমার হিংসা করে। যখন মনুষ্যের কার্পণ্য দূর কর, তখনই সে পিতার ন্যায় তোমায় আহ্বান করে।

১৫। হে ইন্দ্র! আমরা তোমার মত দেবতার বন্ধুত্বে বঞ্চিত হইয়া সোমাভিষবশূন্য যেন না হই। সোম অভিযুত হইলে একত্রে উপবেশন করিব।

১৬। হে গোপ্রদ ইন্দ্র! আমরা তোমার। আমরা যেন ধন শূন্য না হই। অষ্ঠের কাছে যেন গ্রহণ করিতে না হয়। তুমি স্বামী, তুমি দৃঢ় ধন আমাদের নিকট স্থাপন কর। তোমার দান কেহই হিংসা করিতে পারে না।

১৭। আমি হব্যদায়ী। ইন্দ্র কি আমায় এই ধন দিয়াছেন? সৌভাগ্যবতী সরস্বতী কি দিয়াছেন? অথবা হে চিত্র! তুমিই দিয়াছ? (১)

১৮। অন্য যে রাজা সরস্বতীতীরে বাস করে, মেঘ বৃষ্টিদ্বারা পৃথিরীকে যেরূপ প্ৰীত করে, সেইরূপ চিত্র রাজাই সহস্র এবং অযুত ধনদানদ্বারা তাহদিগকে প্রীত করেন।

————

(১) চিত্র নামক রাজা সরস্বতীতীরে যজ্ঞ করিয়াছিলেন। সোভরি তাঁহার যজ্ঞে বহুধন লাভ করতঃ এই দুইটি ঋকের দ্বারা তাঁহার দানের স্তুতি করিয়াছিলেন। সায়ণ।