রুবাইয়াৎ – ০২


খাজার কাছে আমার আছে একটি মাত্র আর্জি
ছাড়ো আদেশ করো দোয়া যদি বা হয় মর্জি-
আমার চলা সাদামাটা তোমার হাঁটা বাঁকা
লাগাও চশমা ধোঁয়া চোখে মুক্তি দিতে আর্জি।


আমার আগুন দেয়না ধোঁয়া মেঘ করে না এ বাটে
আমার পেশায় মজুদ আছে মুনাফা নাই এ ঘাটে
ভাবেন যিনি মদ পিয়াসী জানেন তিনি আমারে
সত্য করে বলতে গেলে পানশালা নাই এ বাটে।


পুরানো সে মদের দোকান আজকে আমার ঠিকানা
বাঁধা আছে সেথায় আমার মন-মন-আত্মা সবখানা
সুখের আশা বিদায় দিয়ে ভয় ভীতিকে বন্দীর রেখে-
যাচ্ছে ভেলা আকাশ পাতাল উজান বেয়ে অজানা।


তোমার কাছে খবর নাই মুক্তি আছে কোন কাননে
তোমার জানা নাই মুক্তা ছাপা কে দেয় কোন বিজনে
পরের মুখে শুনবে এথায় প্রেমের কথা গল্পো ছলে
কল্পো কথা সকল সময় পাবে যে তুমি অন্ধ জনে।


আমি জানি সেথায় আছে দারুণ এক রহস্য বাঁকা
কোনটা ভালো কোনটা মন্দ গল্পো সেটা বন্ধ থাক
আমার বিশ্ব ধোঁয়ায় ভরা খুলতে নারি তাহার ঢাক
কোথায় আমার চন্দ্রকুঠির সে কথাটা গোপন থাক।


কোরান মজিদ করছে নাজিল মস্ত একটা ফরমান
রজব এবং শাবান মাসে নিষেধ আছে মদ্য পান
আল্লা রাছুল বলেন হেঁকে দুটি মাস মোদের দান
সিয়ামেরই রমজান মাসে করবে শুধুই মদ্যপান!


শুক্রবার যে জুমার নামাজ মুসলমানদের তর
ঘটি ভরে পান করো মদ ক্ষণিক যখন অবসর
করবে যদি মদ্য পান এক পেয়ালা অন্য বার
করবে পান দুই পেয়ালা আজ যখন শুক্রবার!


যখন যেথায় দেখবে তুমি গোলাপ বাগের ঝাঁক
জানবে সেথায় বইছে সদাই রক্ত গঙ্গার বাঁক
যেথায় পাবে থোকা থোকা গোলাপ কুঁড়ির তাক
জানবে সেথায় তিল বদনী ডাকায় তাহার নাক


আমার ঘটে দেখছে যে মন্দ সে তো তরল চুনি
মদের ঘটি দেহ যে তাঁর মদ তো আত্মা শুনি
কেলাস মতো পেয়ালা যে হাসছে সফেদ পানি
লুকিয়ে আছে আজ রক্ত ঝরা হৃদয়খানি জানি।

১০
খৈয়ামের খ্যাতির পরে দুনিয়া রবে অনুক্ষণ
খ্যাতির সাথে নাম তার বিলীন হবে বিলক্ষণ
অকাল সময় দৃষ্টি মোদের থাকবে অন্যখান
জন্ম মৃত্যু কখন হবে সুতায় বাঁধা বিলক্ষণ।

১১
আশার পিছে ঘুরে ঘুরে জীবন হলো অচল
এথায় জীবন আছে আমার তিলের সমান সচল
ভাবনা এখন জীবন আমার হবেনা আবার সচল
যতোক্ষণ না ভাগ্য আমার দারুণ ভাবে সচল।

১২
দুনিয়াটা ব্যর্থ যে তাই খুঁজছি তোমায় সকল বাট
ধনী কিংবা দুঃস্থ জনে পায়না খুঁজে তোমার হাট
যদিও তুমি দোরের গোড়ায় শুনি না তোমার ডাক
আমরা সবাই অন্ধ তাই দেখি নাতো তোমার ঘাট।

১৩
জানবে তবে হারবে যেথা মদের হাটের খাজা
সেথায় আছে বদের হাঁড়ি ইতর জনের রাজা
রাতটি ভরে দেবে তোমায় ইতরামি আর সাজা
জানবে তবে চাইবে ক্ষমা পরের দিন সে খাজা।

১৪
তাকে যদি পেতে চাও ছাড়ো দারা-পুত্র-পরিজন
জেগে ওঠ ছুড়ে ফেলো জীবনের সকল প্রয়োজন
জীবন বন্ধন রোধে ঝেড়ে ফেলো সকল প্রিয়জন
জেগে ওঠ ঝেড়ে ফেলো আজ সকল আয়োজন।

১৫
জ্ঞানী গুণী বিজ্ঞ জনে জীবন তোমার করবে দান
মূর্খ লোকের সঙ্গ ত্যাগ জানবে সেটা সত্য জ্ঞান
বিজ্ঞ জনের গরল দান এক নিমেষে করো পান
কিন্তু বোকার ওষুধ দান করো সদাই প্রত্যাখ্যান।

১৬
পাখির মতো উড়ে এসে বসে হেথা করি এক ধ্যান
দিনে দিনে ভাবি হবে মনের মতো কোনো এক যান
পাইনি যদিও কাউরে আমি যার আছে সকল জ্ঞান
তাইতো আজও তাকিয়ে আছি সেই যে পথের পান।

১৭
আশার আলো পাবো বলে চুমু দেই মদের ঘটে
গোপন পথের দিশা পাবো জানি যে তোমার তটে
আমার ঠোঁটে বিলীন হয়ে বলে সে যে চুপিসারে-
পান কর! যাবার পর ফেরে না কেউ নিজের তটে।

১৮
কি আছে কি নাই সেসব তো আমার জানা ভাই
জ্ঞান গরিমা বুদ্ধি সুদ্ধি উঁচু নিঁচুর মধ্যে তাহা পাই
জ্ঞান বুদ্ধি হাসি খুশী বিদায় দেন তখন তিনি ভাই
মদের ঘোরে ঘোরের তিনি উচ্চ-ভবে পৌঁছে সাঁই।

১৯
তোমার কোনো সরম নাই কি বলেছ পাপের কথা
দেওয়া পাপ নেওয়া পাপ সকল পাপ পাপে গাঁথা
জিতবে যেথা ছাড়বে সেথা সকল কভা জানবে সেথা
সঙ্গে কিছু নারবি নিতে নিয়ম কানুন জানবে হেথা।

২০
সকল কাজে করব যে খেদ কিন্তু নারি মদে ছেদ
সকল কাজে বিধান দেবো কিন্তু মদে আছে ভেদ
তেমন হলে হবো কি আজ খাঁটি একটি মুসলমান
ছাড়ব আমি মদের নেশা তাতে আছে বিষম খেদ।

[মূল ইংরেজী অনুবাদক – E. H. Winfield
বাংলা অনুবাদক – মোহাম্মদ আতাউর রহমান]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *