ঋগ্বেদ ০৭।০১৮

ঋগ্বেদ ০৭।০১৮
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৭ম মণ্ডল  সূক্ত ০১৮

ইন্দ্র দেবতা, কেবল ২২ ঋক হইতে ২৫ ঋক পর্যন্ত সুদাস রাজার যজ্ঞের দান স্তব করা হইয়াছে বলিয়া উহাই দেবতা। বসিষ্ঠ ঋষি।

১। হে ইন্দ্র! আমাদের পিতাগণ স্তুতি করতঃ তোমা হইতেই সমস্ত মনোহর ধন লাভ করিয়াছেন। তোমা হইতে গাভীসমূহ সুখে দোহনক্ষম হয়, তোমাতে অশ্বগণ আছে এবং তুমি দেবাভিলাষী ব্যক্তিকে অধিকরূপে ধন দান কর ।

২ । হে ইন্দ্ৰ! তুমি জায়াগণের সহিত রাজার ন্যায় দীপ্তির সহিত বাস কর। হে মঘবন! তুমি বিদ্ব্যান ও কবি হইয়া স্তোতাদিগকে রূপ দান কর এবং গো ও অশ্বদ্বারা রক্ষা কর। আমরা তোমাকে কামনা করি, তুমি আমাদিগকে ধনাৰ্থে সংস্কৃত কর।

৩। হে ইন্দ্ৰ! এই যজ্ঞের স্পৰ্দ্ধমান ও রমণীয় স্তুতি সকল তোমার নিকট উপস্থিত হয়, তোমার ধন আমাদের অভিমুণে গমন করুক। আমরা তোমার অনুগ্ৰহ লাভ করিয়া সুখী হইব ।

৪। সুতৃণবিশিষ্ট ধেনুর ন্যায় তোমাকে দোহন করিতে ইচ্ছা করিয়া, বসিষ্ঠ স্তোত্র সৃজন করিতেছেন। সমস্ত লোকে তোমাকেই গাভীগণের পতি বল; ইন্দ্ৰ, আমাদের সুস্তুতির নিকট আগমন করুন।

৫। স্তুতিযোগ্য ইন্দ্ৰ, নদীসমূহ প্রথিত করতঃ সুদাসের জন্য তলস্পর্শযোগ্য ও সুখে পারযোগ্য করিয়াছেন। স্তোতার জন্য নদীগণের উৎসাহবান ও রোধবান শাপ দূর করিয়াছেন।

৬। যজ্ঞশীল, দানকারী, তুৰ্বশ্বনামে রাজা ছিলেন। মৎস্যের ন্যায় নিয়ন্ত্রিত হইলেও ভৃগু ও দ্রুহ্যুগণ ধনাৰ্থ সুদাস এবং তুর্বশের পরস্পর সাক্ষাৎ করাইয়া দিয়াছিলেন (১) এই উভয়ের মধ্যে সখা, সখাকে বধ করিয়াছিলেন।

৭। হব্যসমূহের পাচক, ভদ্রমুখ, অপ্রবৃদ্ধ ও বিষাণহস্ত মঙ্গলকর ব্যক্তিগণ ইন্দ্রের স্তুতি করে। ইন্দ্ৰ সোমপানে মত্ত হইয়া আর্য্যের গাভীসমূহ হিংসকগণ হইতে আনয়ন করিয়াছেন, স্বয়ং লাভ করিয়াছেন এবং যুদ্ধে মনুষ্যগণকে বধ করিয়াছেন।

৮। দুরভিসন্ধিবিশিষ্ট মন্দমতিগণ খনন করত: অদীনা নদীর কুল ভেদ করিয়া দিয়াছিল। সুদাস মহিমাদ্বারা পৃথিবী ব্যাপ্ত করিয়াছিলেন। চয়মানের পুত্র কবি, পালিত পশুর ন্যায় শয়ন করিয়াছিল।

৯। নদীর জল গন্তব্য প্রদেশাভিমুখেই নদীতে গমন করিয়াছিল। অগন্তুব্য প্রদেশাভিমুখে গমন করে নাই এবং সুদাসের অশ্ব গম্য প্রদেশে গমন করিয়া ছিল। ইন্দ্ৰ, সুদাসের জন্য মনুষ্যগণের মধ্যে অপত্যবিশিষ্ট জলক অমিবদিগকে অপত্যগণের সহিত বশ করিয়াছিলেন।(২)

১০। রক্ষকবিহীন গাভীসমূহ যবের জন্য সেরূপ গমন করে, মাতাকতৃক প্রেরিত একত্ৰিত মরুৎগণ পূৰ্বকৃত প্ৰতিজ্ঞা অনুসারে মিত্র ইন্দ্রের অভিমুখে সেই রূপ গমন করিয়াছিলেন। তাঁহাদের নিযৎগণ হৃষ্ট হুইয়া শীঘ্র গমন করিয়াছিল।

১১। সুদাস রাজা যশোলাভের জন্য দুইটী জনপদের একবিংশ জন লোককে বিনাশ করিয়াছিলেন। যজ্ঞগৃহে যুবা অধ্বর্য্যু যেরূপ কুশ ছেদন করে, সেইরূপ তিনি শত্ৰুগণকে ছেদন করেন। শূর ইন্দ্র, তাঁহার সাহায্যার্থে মরুৎগণকে প্ৰসৰ করিয়াছেন।

১২। আর বজ্রবাহু ইন্দ্ৰ, শ্রুত, কবষ, বৃদ্ধ ও দ্রুহ্যুকে আনুপূৰ্বরূপে জলমধ্যে নিমগ্ন করিয়াছিলেন। এই সময়ে যাহারা তাঁহাকে কামনা করিয়া তাঁহার স্তুতি করিয়াছিল, তাঁহারা সখ্যের জন্য বরণ করিয়া সখ্য লাভ করিয়াছিল ।

১৩। ইন্দ্ৰ নিজ বলদ্বারা উহাদিগের দৃঢ় পুরীসমস্ত এবং সপ্তপ্রকার রক্ষার উপায়ে তৎক্ষণাৎ বিদীর্ণ করিয়াছিলেন। অনুর পুত্রের গৃহ তৃৎসুকে দান করিয়াছিলেন। আমরা যেন দুষ্টবাক্যবিশিষ্ট মনুষ্যকে জয় করিতে পারি।

১৪। অনুর ও দ্রুহ্যুর গবাভিলাষী যন্ঠীশত এবং ৬৬৬৬ সংখ্যক পুত্ৰগণ পরিচৰ্য্যাভিলাষী সুদাসের জন্য শয়িত হইয়াছিল, এই সমস্ত কাৰ্য্য ইন্দ্রের বীৰ্য সূচক।

১৫। তৃৎসুগণ ইন্দ্রের সহিত যুদ্ধে সঙ্গত হইয়া নিম্নগামী জলের ন্যায় ধাবিত হইয়াছিল। দুর্মিত্ৰ অজ্ঞান শক্ৰগণ বাধাপ্ৰাপ্ত হইয়া সুদাসকে সমস্ত ভোগ্যবস্তু প্ৰদান করিয়াছিল।

১৬। সুদাস বীরের হিংসাকারী, ইন্দ্ৰরহিত, হব্যপাতা, উৎসাহমান ব্যক্তিদিগকে ইন্দ্ৰ ভূমিতে প্রেরণ করিয়াছিলেন। তিনি ক্ৰোধকারীর ক্রোধের বাধা প্ৰদান করিয়াছিলেন । সুদাসের শত্ৰু পলায়নমার্গ অবলম্বন করিয়াছিল।

১৭। ইন্দ্র তখন ক্ষুদ্র সুদাসের দ্বারা এক মহৎ কাৰ্য্য করাইয়াছিলেন। প্রবল সিংহকে ছাগদ্বারা হত করিয়াছিলেন। সূচীদ্বারা যুপ কাষ্ঠ কাটিয়া ফেলিয়াছিলেন। সমস্ত ধন সুদাস রাজাকে প্ৰদান করিয়াছিলেন।

১৮। হে ইন্দ্র! তোমার বহুতর শত্রু বশীভূত হইয়াছিল। উৎসাহযুক্ত ভেদকে বশীভূত কর। যে তোমার স্তব করে, এই ভেদ তাহারই অনিষ্ট করে, ইহার বিরুদ্ধে নিশিত যোদ্ধাকে উৎসাহিত কর।

১৯ । এই যুদ্ধে ইন্দ্ৰ ভেদকে বিনাশ করিয়াছিলেন। যমুনা তাঁহাকে সন্তুষ্ট করিয়াছিলেন। তৃৎসুগণও তাঁহাকে সৃষ্ট করিয়াস্থিল। অজ, শিগ, যক্ষু এই তিন জনপদ ইন্দ্রের উদ্দেশে অশ্বেৰ মস্তক উপহার দিয়াছিল।

২০। হে ইন্দ্র! তোমার পুরাতন অনুগ্রহ ও ধন ঊষার ন্যায় বর্ণনার অতীত। নতুন অনুগ্রহ এবং ধনও বর্ণনার অতীত। তুমি মান্যমানের পুত্র দেবককে বধ করিয়াছ। স্বয়ং মহাশৈল হইতে শম্বরকে ভেদ করিয়াছ।

২১। হে ইন্দ্ৰ! অনেক শক্ৰ যাহাকে হিংসা করিতে ইচ্ছা করে সেই পরাশর বসিষ্ঠ(৩) তোমাকে কামনা করিয়া গৃহে আগমন করতঃ তোমার স্তব করিয়াছিল। তাহারা তোমার সখ্য বিস্মৃত হয় না, যেহেতু তুমি ভোজ বিস্মৃত হওনা বলিয়া তাহাদের সর্বদাই সুদিন থাকে।

২২। হে দেবশ্ৰেষ্ঠ! দেববান রাজার পৌত্র, পিজবনেরপুত্র, সুদাসের দুই শত গো ও দুইখানি রথ আমি ইন্দ্ৰকে স্তব করিয়া প্ৰাপ্ত হইয়াছি। হোতা যেমন যজ্ঞগৃহে গমন করে, আমি সেইরূপ গমন করিতেছি।

২৩। দানাঙ্গদুত্ত স্বর্ণালঙ্কারবিশিষ্ট, দুৰ্গতিতে ঋজুগামী ও পৃথিবীস্থিত, পিজবনপুত্ৰ সুদাসের প্রদত্ত চারটি অশ্ব পুত্রবৎ পালনীয় বসিষ্ঠকে পুত্রের অন্নার্থে বহন করিতেছে (8)

২৪। যে সুদাসের যশ বিস্তীর্ণ দ্যাবাপৃথিবীর মধ্যে অবস্থিত, যে দাতাশ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে ধন দান করেন। সক্তলোক তাঁহাকে ইন্দ্রের ন্যায় স্তব করে। নদীসকল যুদ্ধে যুধ্যামধি নামক শক্রকে বিনাশ করিয়াছেন।

২৫। হে নেতা মরুৎগণ! এই সুদাস রাজার পিতা, দিবোদাসের ন্যায় তোমরাও ইহাকে সেবা কর। পিজবনপুত্রের গৃহ রক্ষা করুন। ইহার বল বিনাশরহিত এবং অশিথিল হউক।

———-

(১) সুদাস রাজার ঐ ঐ ঋকে উল্লেপ না থাকিলেও সায়ণ বলেন তুর্বশ রাজা সুদাসের সহিত দেখা করিতে গিয়াছিলেন।

(২) ৭।৮৩।৭ ঋকের টীকা দেখ।

(৩) মূলে “পরাশরঃ বশিষ্ঠঃ” আছে।

(৪) যুদ্ধদিনে বসিষ্ঠ ইন্দ্রে স্তুতি করিয়াছিলেন। যুদ্ধে জয় লাভ করিয়া সুদাস রাজা বসিষ্ঠকে ২০০ গো, ২টি রথ ও ২টি অশ্ব দান করিয়াছিলেন।