ঋগ্বেদ ০৬।৪৬

ঋগ্বেদ ০৬।৪
ঋগ্বেদ সংহিতা । ৬ষ্ঠ মণ্ডল । সূক্ত 
ইন্দ্র দেবতা। ভরদ্বাজ ঋষি।

১। হে ইন্দ্র! আমরা স্তবকারী, আমরা অন্নলাভার্থ তোমাকে আহ্বান করি। মানবগণ শত্রু জয়াথ এবং অশ্বসঙ্কুল সংগ্রামে তোমাকেই আহ্বান করেন, কেন না তুমি সাধুগণের রক্ষাকারী।

২। হে বিচিত্র বজ্রপাণি বজ্রী! তুমি সংগ্রামে বিজয়ী পুরুষকে যেরূপ প্রচুর অন্ন প্রদান কর, তদ্রূপ তুমি আমাদিগের স্তবে প্রসন্ন হইয়া আমাদিগকে যথেষ্ট গো ও রপ বহনপটু অশ্ব প্রদান কর; তুমি শক্র নিহন্তা ও পরাক্রমশালী।

৩। যিনি প্রবল শক্রগণের নিধনকারী ও সৰ্ব্বদশী, আমরা সেই ইন্দ্রেক আহ্বান করিতেছি। হে সহস্রশেফ, অতুল ধনসম্পন্ন, সৎপালক ইন্দ্ৰ! তুমি রণস্থলে আমাদিগের সমৃদ্ধি বিধান কর।

৪। হে ইন্দ্র! ঋকে যে প্রকার বর্ণিত আছে, তুমি সেই প্রকার রূপ সম্পন্ন। তুমি তুমুল সংগ্রামে বৃষভের নায় নিরতিশয় ক্রোধ সহকারে আমাদিগের শক্রগণকে আক্রমণ কর। যাহাতে আমরা সন্ততি, জল ও সূর্য্য সন্দর্শন, অর্থাৎ বহুকাল ভোগ করিতে পারি, তজ্জন্য তুমি রণস্থলে আমাদিগের রক্ষক হও।

৫। হে শোভন হনুযুক্ত অদ্ভুত বজ্রপানি! তুমি যে অন্নদ্বারা এই স্বর্গ ও পৃথিবীকে পোষণ করিতেছ, আমাদিগের নিকট সেই প্রকৃষ্টতম, নিরতিশয় বলকর ও পুষ্টিকর অন্ন আনয়ন কর।

৬। হে দীপ্তিশালী ইন্দ্ৰ! তুমি আমাদিগকে রক্ষা করিবে বলিয়া তোমাকে আহ্বান করিতেছি; তুমি দেবগণের মধ্যে বলিষ্ঠতম ও শক্রবিজয়ী। হে গৃহদাতা! তুমি অখিল রাক্ষসগণকে দূরীভূত কর এবং আমাদিগের শক্রগণকে মুজেয় কর।

৭। হে ইন্দ্র! মানবগণের মধ্যে যে কিছু বল ও ধন আছে এবং পঞ্চ ক্ষিতিতে(১) যে কিছু অন্ন আছে, অখিল মহৎ বলসহকারে তৎসমুদয় আমাদিগকে প্রদান কর।

৮। হে ঐশ্বৰ্য্যশালী ইন্দ্ৰ! শক্রগণের সহিত যুদ্ধ প্রবৃত্ত হইলে যাহাতে আমরা সংগ্রামে শক্ৰ সংহার করিতে পারি, তজ্জন্ত তুমি আমাদিগকে তৃক্ষু দ্রুহ্য ও পৃরু সম্বন্ধীয় সমগ্র বল প্রদান কর।

৯। হে ইন্দ্ৰ! হব্যরূপ ধনসম্পন্ন ব্যক্তিগণকে ও আমাকে এরূপ একটা গৃহ প্রদান কর, যাহা ত্ৰিধাতু ও ত্রিবরুথ(২) ও সমৃদ্ধ ও আচ্ছাদক এবং তাইদিগের নিকট হইতে দীপ্তিসম্পন্ন আয়ুধ সকল দূরীকৃত কর।

১০। হে ঐশ্বৰ্য্যশালী ইন্দ্র! যাহারা আমাদিগের ধেনু সকল হরণ করিবার মানসে শক্রবৎ আমাদিগকে আক্রমণ করে, অথবা যাহারা ধৃষ্টতাসহকারে আমাদিগের স্তবে প্রসন্ন হইয়া তাহাদিগের নিকট হইতে আমাদিগের দেহ রক্ষা করিবার জন্য আমাদিগের সন্নিহিত হও।

১১। হে ইন্দ্ৰ! তুমি সম্প্রতি আমাদিগের সমৃদ্ধি বিধানে অমুকুল হও। যৎকালে পক্ষবিশিষ্ট, তীক্ষাগ্ৰ, দীপ্ত শত্রুপক্ষীয় বাণ সকল (৩) আকাশ হইতে পতিত হয়, তৎকালে যিনি আমাদিগের নেতা, রণস্থলে তাহাকে তুমি রক্ষা করিও।

১২। যৎকালে বীরগণ শক্র সমক্ষে নিজদেহ প্রদর্শন করে ও মুখদায়ক পৈতৃক স্থান সকল পরিত্যাগ করে, তৎকালে তুমি আমাদিগে নজের ও স স্তfতগণের দেহ রক্ষার নাম স্তু অজ্ঞা ত ভাবে কবচ প্রদান করি ও এবং শত্রুগণকে দূরীভূত কারও।

১৩। মহাসংগ্রামের উদ্যোগ হইলে, তুমি বিষম মার্গের উপর দিয়া আমাদিগের অশ্বগণকে, কুটিল প্রদেশগামা দ্রুতগতি আমিষার্থী শ্যেন পক্ষীর ন্যায় প্রেরিত কর।

১৪। যদিও অশ্বগণ ভীতিবশতঃ উচ্চৈঃস্বরে রব করে, তথাপি নিম্নগামী নদীসমূহের ন্যায় সেই বেগগামী দৃঢ়সংযত অশ্বগণ আমিষার্থী পক্ষিগণের ন্যায় ধমুলাভের নিমিত্ত প্রবৃত্ত সংগ্রামে পুনঃ পুনঃ প্রধাবিত হয়।

————–
(১) মূলে “পঞ্চক্ষিতিনাং” আছে।

(২) মূলে “ত্রিধাতু” ও “ত্রিবরূথাং” আছে। “ত্রিধাতু” অর্থে সায়ণ “ত্রিভূমিকাকং” করিয়াছেন। “As if the houses were constructed ot more than one mate rial, or wood, brick and stone.”

(৩) “Feathered, sharp-pointed, shining shafts.”—Wilson. ধনুপাশের উল্লেখ ঋগ্বেদের অনেক স্থলেই আছে।

(৪) যুদ্ধে অশ্বের যেরূপ ব্যবহার হইত এই ১৩ ও ১৪ নং সূক্তে তাহার সুন্দর বর্ণনা পাওয়া যায়।