১২. চাঁদের পাহাড় – দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

গুহার মধ্যে ঢুকে শঙ্কর টর্চ জ্বেলে দেখলে (নতুন ব্যাটারী তার কাছে তখনো ডজন দুই ছিল) গুহাটা ছোট, বেশ একটা ছোটখাটো ঘরের মতো, মেঝেটাতে অসংখ্য ছোট ছোট পাথর ছড়ানো। গুহার এক কোণে চোখ পড়তেই শঙ্কর অবাক হয়ে গেল। একটা ছোট্ট কাঠের পিঁপে! এখানে কি করে এল কাঠের পিঁপে?
দু-পা এগিয়েই সে চমকে উঠল।
গুহার দেয়ালের ধার ঘেঁষে শায়িত অবস্থায় একটা সাদা নরকঙ্কাল, তার মুন্ডুটা দেয়ালের দিকে ফেরানো। কঙ্কালের আশেপাশে কালো কালো থলে ছেঁড়ার মতো জিনিস, বোধহয় সেগুলো পশমের কোটের অংশ। দু’খানা বুট জুতো কঙ্কালের পায়ে তখনো লাগানো। একপাশে একটা মরচে পড়া বন্দুক।
পিঁপেটার পাশে একটা ছিপি-আঁটা বোতল। বোতলের মধ্যে একখানা কাগজ, ছিপিটা খুলে কাগজখানা বার করে দেখলে, তাতে ইংরেজীতে কি লেখা আছে।
পিঁপেটাতে কি আছে দেখবার জন্যে যেমনি সে সেটা নাড়াতে গিয়েছে, অমনি পিঁপের নিচ থেকে একটা ফোঁস ফোঁস শব্দ শুনে ওর শরীরের রক্ত ঠান্ডা হয়ে গেল। নিমেষের মধ্যে একটা প্রকান্ড সাপ মাটি থেকে হাত তিনেক উঁচু হয়ে ঠেলে উঠল। বোধ হয় ছোবল মারবার আগে সাপটা এক সেকেন্ড দেরি করেছিল। সেই এক সেকেন্ড দেরি করার জন্যে শঙ্করের প্রাণ রক্ষা হল। পরমুহূর্তেই শঙ্করের ৪৫ অটোম্যাটিক কোল্ট গর্জন করে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে অতবড় ভীষণ বিষধর স্যান্ড ভাইপারের মাথাটা ছিন্নভিন্ন হয়ে, রক্ত মাংস খানিকটা পিঁপের গায়ে, খানিকটা পাথরের দেওয়ালে ছিটকে লাগল। আলভারেজ ওকে শিখিয়েছিল, পথে সর্বদা হাতিয়ার তৈরি রাখবে। এ উপদেশ কতবার তার প্রাণ বাঁচিয়েছে।
অদ্ভুত পরিত্রাণ! সব দিক থেকেই। পিঁপেটা পরীক্ষা করে দেখা গেল সেটাতে অল্প একটু জল তখনো আছে। খুব কালো শিউ গোলার মতো রং বটে, তবুও জল। ছোট পিঁপেটা উঁচু করে তুলে পিঁপের ছিপি খুলে ঢক্‌ঢক্‌ করে শঙ্কর সেই দুর্গন্ধ কালো কালির মতো জল আকন্ঠ পান করলে। তারপর সে টর্চের আলোতে সাপটা পরীক্ষা করলে। পুরো পাঁচ হাত লম্বা সাপটা, মোটাও বেশ। এ ধরনের সাপ মরুভূমির বালির মধ্যে শরীর লুকিয়ে শুধু মুন্ডুটা উপরে তুলে থাকে— অতি মারাত্মক রকমের বিষাক্ত সাপ!
এইবার বোতলের মধ্যের কাগজখানা খুলে মন দিয়ে পড়লে। যে ছোট্ট পেন্সিল দিয়ে এটা লেখা হয়েছে— বোতলের মধ্যে সেটাও পাওয়া গেল। কাগজখানাতে লেখা আছে…

“আমার মৃত্যু নিকট। আজই আমার শেষ রাত্রি। যদি আমার মরণের পরে, কেউ এই ভয়ঙ্কর মরুভূমির পথে যেতে যেতে এই গুহায় এসে আশ্রয় গ্রহণ করেন তবে সম্ভবতঃ এই কাগজ তাঁর হাতে পড়বে।
আমার গাধাটা দিন দুই আগে মরুভূমির মধ্যে মারা গিয়েছে। এক পিঁপে জল তার পিঠে ছিল, সেটা আমি এই গুহার মধ্যে নিয়ে এসে রেখে দিয়েছি, যদিও জ্বরে আমার শরীর অবসন্ন। মাথা তুলবার শক্তি নেই। তার উপর অনাহারে শরীর আগে থেকেই দুর্বল।
আমার বয়স ২৬ বছর। আমার নাম আত্তিলিও গাত্তি। ফ্লোরেন্সের গাত্তি বংশে আমার জন্ম। বিখ্যাত নাবিক রিওলিনো কাভালকান্তি গাত্তি— যিনি লেপান্টোর যুদ্ধে তুর্কীদের সঙ্গে লড়েছিলেন, তিনি আমার একজন পূর্বপূরুষ।
রোম ও পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভবঘুরে হয়ে গেলাম সমুদ্রের নেশায়— যা আমাদের বংশগত নেশা। ডাচ-ইন্ডিজ যাবার পথে পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে জাহাজডুবি হল।
আমরা সাতজন লোক অতি কষ্টে ডাঙা পেলাম। ঘোর জঙ্গলময় অঞ্চল আফ্রিকার এই পশ্চিম উপকূল। জঙ্গলের মধ্যে শেফু জাতির এক গ্রামে আমরা আশ্রয় নিই এবং প্রায় দু’মাস সেখানে থাকি। এখানেই দৈবাৎ এক অদ্ভুত হীরের খনির গল্প শুনলাম। পূর্বদিকে এক প্রকান্ড পার্বত্য ও ভীষণ আরণ্য অঞ্চলে নাকি এই হীরের খনি অবস্থিত।
আমরা সাতজন ঠিক করলাম এই হীরের খনি যে করে হোক, বার করতেই হবে। আমাকে ওরা দলের অধিনায়ক করলে। তারপর আমরা দুর্গম জঙ্গল ঠেলে চললাম সেই সম্পূর্ণ অজ্ঞাত পার্বত্য অঞ্চলে। সে গ্রামের কোনো লোক পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে রাজী হল না। তারা বলে, তারা কখনও সে জায়গায় যায় নি, কোথায় তা জানে না, বিশেষতঃ এক উপদেবতা নাকি সে বনের রক্ষক। সেখান থেকে হীরে নিয়ে কেউ ফিরে আসতে পারে না।
আমরা দমবার পাত্র নই। পথে যেতে যেতে ঘোর কষ্টে বেঘোরে দুজন সঙ্গী মারা গেল। বাকি চারজন আর অগ্রসর হতে চায় না। আমি দলের অধ্যক্ষ, গাত্তি বংশে আমার জন্ম, পিছু হটতে জানি না। যতক্ষণ প্রাণ আছে, এগিয়ে যেতে হবে এই জানি। আমি ফিরতে চাইলাম না।
শরীর ভেঙে পড়তে চাইছে। আজ রাতেই আসবে সে নিরবয়ব মৃত্যুদূত। বড় সুন্দর আমাদের ছোট্ট হ্রদ সেরিনো লাগ্রানো, ওরই তীরে আমার পৈতৃক প্রাসাদ, কাষ্টোলি রিওলিনি। এতদূর থেকেও আমি সেরিনো লাগ্রানোর তীরবর্তী কমলালেবুর বাগানের লেবুফুলের সুগন্ধ পাচ্ছি। ছোট্ট যে গির্জাটি পাহাড়ের নিচেই, তার রূপোর ঘন্টার মিষ্টি আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।
না, এসব কি আবোল-তাবোল লিখছি জ্বরের ঘোরে। আসল কথাটা বলি। কতক্ষণই বা আর লিখব?
আমরা সে পর্বতমালা, সে মহাদুর্গম অরণ্যে গিয়েছিলাম। সে খনি বার করেছিলাম। যে নদীর তীরে হীরে পাওয়া যায়, এক বিশাল ও অতি ভয়ানক গুহার মধ্যে সে নদীর উৎপত্তি স্থান। আমি সেই গুহার মধ্যে ঢুকে এবং নদীর জলের তীরে ও জলের মধ্যে পাথরের নুড়ির মতো অজস্র হীরে ছড়ানো দেখতে পাই। প্রত্যেকটি নুড়ি টেট্রাহেড্রন ক্রিস্ট্যাল, স্বচ্ছ ও হরিদ্রাভ। লন্ডন ও আমস্টারডামের বাজারে এমন হীরে নেই।
এই অরণ্য ও পর্বতের সে উপদেবতাকে আমি এই গুহার মধ্যে দেখেছি— ধুনোর কাঠের মশালের আলোয়, দূর থেকে আবছায়া ভাবে। সত্যিই ভীষণ তার চেহারা! জ্বলন্ত মশাল হাতে ছিল বলেই সেদিন আমার কাছে সে ঘেঁষেনি। এই গুহাতেই সে সম্ভবতঃ বাস করে। হীরের খনির সে রক্ষক, এই প্রবাদের সৃষ্টি সেই জন্যেই বোধ হয় হয়েছে।
কিন্তু কি কুক্ষণেই হীরের খনির সন্ধান পেয়েছিলাম এবং কি কুক্ষণেই সঙ্গীদের কাছে তা প্রকাশ করেছিলাম। ওদের নিয়ে আবার যখন সে গুহায় ঢুকি, হীরের খনি খুঁজে পেলাম না। একে ঘোর অন্ধকার, মশালের আলোয় সে অন্ধকার দূর হয় না, তার উপরে বহুমুখী নদী, কোন স্রোতটার ধারা হীরের রাশির উপর দিয়ে বইছে, কিছুতেই আর বার করতে পারলাম না।
আমার সঙ্গীরা বর্বর, জাহাজের খালাসি। ভাবলে, ওদের ফাঁকি দিলাম বুঝি। আমি একা নেব এই বুঝি আমার মতলব। ওরা কি ষড়যন্ত্র আঁটলে জানি নে, পরদিন সন্ধ্যেবেলা চারজনে মিলে অতর্কিতে ছুরি খুলে আমায় আক্রমণ করলে। কিন্তু তারা জানতো না আমাকে, আত্তিলিও গাত্তিকে। আমার ধমণীতে উষ্ণ রক্ত বইছে আমার পূর্বপূরুষ রিওলিনি কাভালকান্তি গাত্তির, যিনি লেপান্টোর যুদ্ধে ওরকম বহু বর্বরকে নরকে পাঠিয়েছিলেন। সান্টা কাটালিনার সামরিক বিদ্যালয়ে যখন আমি ছাত্র, আমাদের অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ ফেন্সার (Fencer) এন্টোনিও ড্রেফুসকে ছোরার ডুয়েলে জখম করি। আমার ছোরার আঘাতে ওরা দু’জন মারা গেল, দু’জন সাংঘাতিক ঘায়েল হল, নিজেও আমি চোট পেলাম ওদের হাতে। আহত বদমাইস দুটোও সেই রাত্রে ভবলীলা শেষ করল। ভেবে দেখলাম এখন এই গুহার গোলকধাঁধার ভিতর থেকে খনি খুঁজে হয়তো বার করতে পারবো না। তাছাড়া আমি সাংঘাতিক আহত, আমায় সভ্যজগতে পৌঁছুতেই হবে। পূর্ব দিকের পথে ডাচ উপনিবেশে পৌঁছুবো বলে রওনা হয়েছিলুম। কিন্তু এ পর্যন্ত এসে আর অগ্রসর হতে পারলুম না। ওরা তলপেটে ছুরি মেরেছে, সেই ক্ষতস্থান উঠল বিষিয়ে। সেই সঙ্গে জ্বর। মানুষের কি লোভ তাই ভাবি। কেন ওরা আমাকে মারলে? ওরা আমার সঙ্গী, একবারও তো ওদের ফাঁকি দেওয়ার কথা আমার মনে আসেনি!
জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ হীরক খনির মালিক আমি, নিজের প্রাণ বিপন্ন করে তা আমি আবিষ্কার করেছি। যিনি আমার এ লেখা পড়ে বুঝতে পারবেন, তিনি নিশ্চয়ই সভ্য মানুষ ও খৃস্টান। তাঁর প্রতি আমার অনুরোধ, আমাকে তিনি যেন খৃস্টানের উপযুক্ত কবর দেন। অনুগ্রহের বদলে ঐ খনির স্বত্ব তাঁকে আমি দিলাম। রাণী শেবার ধনভান্ডারও এ খনির কাছে কিছু নয়!
প্রাণ গেল, যাক, কি করবো? কিন্তু কি ভয়ানক মরুভূমি এ! একটা ঝিঁঝি পোকার ডাক পর্যন্ত নেই কোনোদিকে! এমন সব জায়গাও থাকে পৃথিবীতে! আমার আজ কেবলই মনে হচ্ছে পপলার ঘেরা সেরিনো লাগ্রানো হ্রদ আর দেখব না, তার ধারে যে চতুর্দশ শতাব্দীর গির্জাটা, তার সেই বড় রূপোর ঘন্টার পবিত্র ধ্বনি, পাহাড়ের ওপরে আমাদের যে প্রাচীন প্রাসাদ কাস্টোলি রিওলিনি, মুরদের দুর্গের মতো দেখায়… দূরে আমিব্রিয়ার সবুজ মাঠ ও দ্রাক্ষাক্ষেত্রের মধ্যে দিয়ে ছোট্ট ডোরা নদী বয়ে যাচ্ছে… যাক, আবার কি প্রলাপ বকছি।
গুহার দুয়ারে বসে আকাশের অগণিত তারা প্রাণ ভরে দেখছি শেষবারের জন্যে। …সাধু ফ্রাঙ্কোর সেই সৌর স্তোত্র মনে পড়ছে—
স্তুত হোন প্রভূ মোর, পবন সঞ্চার তরে, স্থির বায়ু তরে,
ভগিনী মেদিনী তরে, নীল মেঘ তরে, আকাশের তরে,
তারকা সমূহ তরে, সুদিন কুদিন তরে, দেহের মরণ তরে।
আর একটা কথা। আমার দুই পায়ে জুতোর মধ্যে পাঁচখানা বড় হীরে লুকানো আছে। তোমায় তা দিলাম, হে অজানা পথিক বন্ধু। আমার শেষ অনুরোধটি ভুলো না। জননী মেরী তোমার মঙ্গল করুন।

কম্যান্ডার আত্তিলিও গাত্তি
১৮৮০ সাল। সম্ভবতঃ মার্চ মাস।”

হতভাগ্য যুবক!
তার মৃত্যুর পরে সুদীর্ঘ তিরিশ বছর কেটে গিয়েছে, এই তিরিশ বছরের মধ্যে এ পথে হয়তো কেউ যায়নি, গেলেও গুহাটার মধ্যে ঢোকেনি। এতকাল পরে তার চিঠিখানা মানুষের হাতে পড়ল।
আশ্চর্য যে কাঠের পিঁপেটাতে তিরিশ বছর পরেও জল ছিল কি করে?
কিন্তু কাগজখানা পড়েই শঙ্করের মনে হল, এই লেখায় বর্ণিত ঐটেই সেই গুহা— সে নিজে যেখানে পথ হারিয়ে মারা যেতে বসেছিল! তারপর সে কৌতূহলের সঙ্গে কঙ্কালের পায়ের জুতো টান দিয়ে খসাতেই পাঁচখানা বড় বড় পাথর বেরিয়ে পড়ল। এ অবিকল সেই পাথরের নুড়ির মতো, যা এক পকেট কুড়িয়ে অন্ধকার গুহার মধ্যে সে পথ চিহ্ন করেছিল এবং যার একখানা তার কাছে রয়েছে। এ পাথরের নুড়ি তো সে রাশি রাশি দেখেছে গুহার মধ্যে সেই অন্ধকারময়ী নদীর জলস্রোতের নিচে, তার দুই তীরে! কে জানতো যে হীরের খনি খুঁজতে সে ও আলভারেজ সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে এসে ছ’মাস ধরে রিখটারসভেল্ড পার্বত্য অঞ্চলে ঘুরে-ঘুরে হয়রান হয়ে গিয়েছে— এমন সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে সে সেখানে গিয়ে পড়বে! হীরে যে এমন রাশি রাশি পড়ে থাকে পাথরের নুড়ির মতো— তাই বা কে ভেবেছিল! আগে এসব জানা থাকলে, পাথরের নুড়ি সে দু-পকেট ভরে কুড়িয়ে বাইরে নিয়ে আসতো!
কিন্তু তার চেয়েও খারাপ কাজ হয়ে গিয়েছে যে, সে রত্নখনির গুহা যে কোথায়, কোনদিকে, তার কোনো নক্সা সে করে আনেনি বা সেখানে কোনো চিহ্ন রেখে আসেনি, যাতে আবার সেটা খুঁজে নেওয়া যেতে পারে। সেই সুবিস্তীর্ণ পর্বত ও আরণ্য অঞ্চলের কোন জায়গায় সেই গুহাটা দৈবাৎ সে দেখেছিল, তা কি তার ঠিক আছে, না ভবিষ্যতে সে আবার সে জায়গা বার করতে পারবে? এ যুবকও তো কোনো নক্সা করেনি, কিন্তু সাংঘাতিক আহত হয়েছিল রত্নখনি আবিষ্কার করার পরেই, এর ভুল হওয়া খুব স্বাভাবিক। হয়তো এ যা বার করতে পারতো নক্সা না দেখে— সে তা পারবে না।
হঠাৎ আলভারেজের মৃত্যুর পূর্বের কথা শঙ্করের মনে পড়ল। সে বলেছিল— চল যাই, শঙ্কর, গুহার মধ্যে রাজার ভান্ডার লুকোনো আছে! তুমি দেখতে পাচ্ছ না, আমি দেখতে পাচ্ছি।
শঙ্কর গুহার মধ্যেই সেই নরকঙ্কালটা সমাধিস্থ করলে। পিঁপেটা ভেঙে ফেলে তারই দু’খানা কাঠে মরচে পড়া পেরেক ঠুকে ক্রুশ তৈরি করলে ও সমাধির ওপর সেই ক্রুশটা পুঁতলে। এ ছাড়া খৃস্টধর্মাচারীকে সমাধিস্থ করবার অন্য কোনো রীতি তার জানা নেই। তারপরে সে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলে, এই মৃত যুবকের আত্মার শান্তির জন্য।
এসব শেষ করতে সারাদিনটা কেটে গেল। রাত্রে বিশ্রাম করে পরদিন আবার সে রওনা হল। কঙ্কালের চিঠিখানা ও হীরেগুলি যত্ন করে সঙ্গে নিল।
তবে তার মনে হল, এই অভিশপ্ত হীরের খনির সন্ধানে যে গিয়েছে, সে আর ফেরেনি। আত্তিলিও গাত্তি ও তার সঙ্গীরা মরেছে, জিম কার্টার মরেছে, আলভারেজ মরেছে। এর আগেই বা কত লোক মরেছে তার ঠিক কি? এইবার তার পালা। এই মরুভূমিতেই তার শেষ, এই বীর ইটালিয়ান যুবকের মতো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *