প্রথম ভাগ
দ্বিতীয় ভাগ

বাঙ্গালা শাসনের কল

বাঙ্গালা শাসনের কল *

পূর্ব্ববঙ্গবাসী কোন বর, কলিকাতানিবাসী একটি কন্যা বিবাহ করিয়া গৃহে লইয়া যান। কন্যাটি পরমাসুন্দরী, বুদ্ধিমতী, বিদ্যাবতী, কর্ম্মিষ্ঠা এবং সুশীলা। তাঁহার পিতা মহা ধনী, নানা রত্নে ভূষিতা করিয়া কন্যাকে শ্বশুরগৃহে পাঠাইলেন। মনে ভাবিলেন, আমার মেয়ের কোন দোষ কেহ বাহির করিতে পারিবে না। সঙ্গের লোক ফিরিয়া আসিলে তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন হে! বাঙ্গালেরা মেয়ের কোন দোষ বাহির করিতে পারিয়াছে?” সঙ্গের লোক বলিল, “আজ্ঞে হাঁ—দোষ লইয়া বড় গণ্ডগোল গিয়াছে।” বাবু জিজ্ঞাসা করিলেন-“সে কি? কি দোষ?” ভৃত্য বলিল, “বাঙ্গালেরা বড় নিন্দা করিয়াছে, মেয়ের কপালে উল্কি নাই।” আমরা এই বঙ্গদর্শনে কখনও সর্ জর্জ্ কাম্বেল্ সাহেব সম্বন্ধে কোন কথা বলি নাই। যাঁহার নিন্দা তিন বৎসরকাল বাঙ্গালাপত্রের জীবনস্বরূপ ছিল, তাঁহার কোন উল্লেখ না থাকাতে আমাদের ভয় করে যে, পাছে কেহ বলে যে, বঙ্গদর্শনের উল্কি নাই আমরা অদ্য বঙ্গদর্শনকে উল্কি পরাইতে প্রবৃত্ত হইলাম।
তবে এই উল্কি বড় সামান্য নহে। যে পত্র বা পত্রিকা (কোন্‌গুলি পত্র আর কোন্‌গুলি পত্রিকা, তাহা আমরা জানি না—কি করিলে পত্র পত্রিকা হইয়া যায়, তাহাও অবগত নহি) যে পত্র বা পত্রিকা একবার কপালে এই উল্কি পরিয়াছেন, তিনি বঙ্গদেশ মোহিয়াছেন, মুগ্ধ হইয়া বঙ্গীয় পাঠকগণ তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ছুটিয়াছে এবং সাম্বৎসরিক অগ্রিম মূল্যে বরণ করিয়া তাঁহাকে ঘরে তুলিয়াছে। যে এই উল্কি পরে, তাহার অনেক সুখ।
এক্ষণে সর্ জর্জ্ কাম্বেল্ এতদ্দেশ ত্যাগ করিয়া গিয়াছেন—ইহাতে সকলেই দুঃখিত। এ পৃথিবীতে পরনিন্দা প্রধান সুখ—বিশেষ যদি নিন্দিত ব্যক্ত উচ্চশ্রেণীস্থ এবং গুণবান্ হয়, তবে আরও সুখ। সর্ জর্জ্ কাম্বেল্ গুণবান্ হউন বা না হউন, উচ্চশ্রেণীস্থ বটে। তাঁহার নিন্দায় যে সুখ, তাহাতে এক্ষণে বঙ্গদেশের লোক বঞ্চিত হইল। ইহার অপেক্ষা আর গুরুতর দুর্ঘটনা কি হইতে পারে? এই যে গুরুতর দুর্ভিক্ষবহ্নিতে দেশ দগ্ধ হইতেছিল, তাহারেও আমরা কোন মতে প্রাণ ধারণ করিতেছিলাম, খবরের কাগজ চলিতেছিল, বাঙ্গালী বাবু গল্পের মজলিসে অশ্লীল গল্প ছাড়িয়া, সর্ জর্জের নিন্দা করিয়া বোতল শেষ করিতেছিলেন। কিন্তু এক্ষণে? হায়! এক্ষণে কি হইবে!
এইরূপে সর্ব্বজননিন্দার্হ হওয়া সচরাচর দেখা যায় না। অনেকে বলিবেন, সর্ জর্জ্ কাম্বেলের অসাধারণ দোষ ছিল, এই জন্যই তিনি এইরূপ অসাধারণ নিন্দনীয় হইয়াছিলেন। আমাদিগের বিশ্বাস আছে, যে এইরূপ সর্ব্বজননিন্দনীয় হয়, যাহার নিন্দায় সকলের তুষ্টি জন্মে, সে হয় অসাধারণ দোষে দোষী বা অসাধারণ গুণে গুণবান্—নয় ত দুইই। জিজ্ঞাস্য, সর্ জর্জ্ কাম্বেল্, অসাধারণ দোষে দোষী, না অসাধারণ গুণে গুণবান্ বলিয়া তাঁহার এই নিন্দাতিশয্য হইয়াছিল?
তাঁহার পূর্ব্বগামী শাসনকর্ত্তা সর্ উইলিয়ম্ গ্রে। সর্ উইলিয়ম্ গ্রের ন্যায় কোন লেঃ গবর্ণর প্রতিষ্ঠা প্রাপ্ত হয়েন নাই। সর জর্জ্ কাম্বেল্ ও সর্ উইলিয়ম্ গ্রের এই ভাগ্য-তারতম্য কোন্ দোষে বা কোন্ গুণে? কোন্ গুণে সর্ উইলিয়ম্ সকলের প্রিয়, কোন্ দোষে সর্ জর্জ্ সকলের অপ্রিয়?

—————-
*“সর্ উইলিয়াম গ্রে ও সর্ জর্জ্ কাম্বেল্” ইতি শীর্ষক একটি প্রবন্ধ ১২৮২ সালের বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হইয়াছিল। তাহার এক অংশ মাত্র এখানে গৃহীত হইল।
—————-

যাঁহারা এই কথার মীমাংসা করিতে ইচ্ছুক, তাঁহাদিগকে একটা কথা বুঝাইতে হয়। এই ব্রিটিশভারতীয় শাসনপ্রণালী দূর হইতে দেখিতে বড় জাঁক, শুনিতে ভয়ানক, বুঝিতে বড় গোল—ইহার প্রকৃতি কি প্রকার? এক লেঃ গবর্ণর কর্ত্তৃক যে এই বৃহৎ রাজ্য শাসিত হয়, সে কোন্ রীতি অবলম্বন করিয়া?
সে রীতি দুই প্রকার। একটি রীতি একটি সামান্য উদাহরণের দ্বারা বুঝাইব। মনে কর, বাঁধের কথা উপস্থিত। কমিশনারের রিপোর্টে হউক, বোর্ডের রিপোর্টে হউক, ইঞ্জিনিয়রদিগের রিপোর্টে হউক, সম্বাদপত্রে হউক, লেঃ জর্জ্ জানিলেন যে, নদীতীরস্থ প্রাচীন বাঁধসকল রক্ষিত হইতেছে না—তাহার উপায় করা কর্ত্তব্য। তখন লেঃ গবর্ণরের হুকুম হইল যে, রিপোর্ট্ তলব কর। এই হুকুমে যদি কোন বিশেষ গুণশালিত্ব বা যোগ্যতা থাকে, তবে সে গুণশালিত্ব বা যোগ্যতা লেঃ গবর্ণরের। সেক্রেটারি সাহেব হুকুম পাইয়া, বোর্ডে চিঠি লিখিলেন—তাঁহার চিঠিতে কথাটা একটু বিস্তৃতি পাইল—তিনি বলিলেন, ইহার বিশেষ অবস্থা জানিবে—অধীনস্থ কর্ম্মচারীদের অভিপ্রায় কি, তাহা লিখিবে, ইহার কিরূপ উপায় হইতে পারে, তাহা লিখিবে। বোর্ড্, ঐ পত্রখানির একাদশ খণ্ড অতি পরিষ্কার অনুলিপি প্রস্তুত করিয়া, একাদশ কমিশনারের নিকট পাঠাইলেন। একাদশ কমিশ্যনর অনুলিপি প্রাপ্ত হইয়া, তাহার কোণে পেনসিলে প্রাপ্তির তারিখ লিখিয়া বাক্সে ফেলিলেন, তাঁহার গুরুতর কর্ত্তব্য কার্য্য সমাপ্ত হইল। বাক্স প্রাচীন প্রথানুসারে যথাসময়ে চাপরাশি-স্কন্ধে আরোহণ করিয়া, কেরাণীর নিকট পৌঁছিল। কেরাণী তাহার আর এক এক খণ্ড পরিষ্কার অনুলিপি প্রস্তুত করিয়া, সাত দিনের মিয়াদ লিখিয়া দিয়া, কালেক্টরদিগের নিকট পাঠাইলেন। যে পথে মহাজন যায়, সেই পথ,—দোর্দ্দণ্ড প্রচণ্ড প্রতাপান্বিত শ্রীল শ্রীযুক্ত কালেক্টর বাহাদুর, চুরুট খাইতে খাইতে চিঠির কোণে লিখিলেন “সব্‌ডিবিসন্ ও ডেপুটিগণ বরাবর।” চিঠি এইরূপে বড় ডাকঘর হইতে মেজো ডাকঘরে, মেজো ডাকঘর হইতে ছোট ডাকঘরে, এবং তথা হইতে শেষে আটচালানিবাসী বোতামশূন্য চাপকানধারী কাল-কোল নাদুস-নুদুস ডিপুটি বাহাদুরের ছিন্নপাদুকামণ্ডিত শ্রীপাদপদ্মযুগলে মধুলব্ধ ভ্রমরের ন্যায় আসিয়া পড়িল। ডিপুটি বাহাদুরেরা উপরস্থ নিকট ফেলফোর রিপোর্ট তলব করিলেন—সবইন্‌স্পক্টর পরওয়ানা কনষ্টেবলের হাওয়ালা করিল—কনষ্টেবল যে গ্রামে বাঁধ, সেইখানে কাল কোর্ত্তা, কাল দাড়ি এবং মোটা রুল লইয়া দর্শন দিয়া এক অন্নাভাবে শীর্ণ ক্লিষ্ট চৌকিদারকে ধরিল। ধরিয়াই জিজ্ঞাসা করিল যে, “তোদের গাঁয়ের বাঁধ থাকে না কেন রে?” চৌকিদার ভীত হইয়া বলিল, “আজ্ঞা, জমীদারে মেরামত করে না, আমি গরিব মানুষ কি করিব?” কনষ্টেবল তখন জমিদারী কাছারিতে পদরেণু অর্পণ করিয়া গোমস্তাকে কিছু তম্বী করিলেন। গোমস্তা জমীদারী খাতায় পাঁচ টাকা খরচ লিখিয়া কনষ্টেবল বাবুকে দেড় টাকা পারিতোষিক দিয়া বিদায় করিলেন। কনষ্টেবল আসিয়া সব্‌ইনস্পক্টর সমক্ষে রিপোর্ট করিলেন, “বাঁধ সব বেমেরামত—জমীদার মেরামত করে না—জমীদার মেরামত করিলেই মেরামত হইতে পারে।” ডিপুটি বাহাদুর লিখিলেন, “বাঁধ সব বেমেরামত,-জমীদারেরা মেরামত করে না—তাহারা মেরামত করিলেই হয়।” কালেক্টর বাহাদুর সেই সকল কথা লিখিলেন, অধিকন্তু “এক্ষণে জমীদারদিগকে বাঁধ মেরামত করিতে বাধ্য করা উচিত।” কমিশ্যনর সেই সকল কথা লিখিয়া বোর্ডে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এক্ষণে কি প্রকারে জমীদার বাঁধ মেরামত করিতে বাধ্য হইতে পারে?” বোর্ড্ তত্তদুক্তি পুনরুক্ত করিয়া, একটা যাহা হয় উপায় নির্দিষ্ট করিলেন। সেক্রেটারি সাহেব সেই সকল কথা সাজাইয়া লিখিয়া এক রিজলিউসনের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করিয়া পাঠাইলেন, লেঃ গবর্ণর সাহেব সম্মত হইয়া তাহাতে দস্তখত করিয়া দিলেন। আজ্ঞা দেশে প্রচারিত হইল; লেঃ গবর্ণর বাহাদুরের যশ দেশেবিদেশে ঘোষিল। যাহারা মিত্রপক্ষ, তাহারা গবর্ণর বাহাদুরের প্রশংসা করিতে লাগিল—শত্রুপক্ষ নানাজাতীয় ইংরেজী বাঙ্গালায় তাঁহাকে গালি পাড়িতে লাগিল। নষ্টের গোড়া চৌকিদার নির্ব্বিঘ্নে স্বদেশে কোদালি পাড়িতে লাগিল।

বাস্তবিক যে এইরূপ কোন প্রকৃত ঘটনা ঘটিয়াচে, এমত নহে। একটি কল্পিত ঘটনা অবলম্বন করিয়াই এ সকল কথা লিখিলাম। এইরূপ যে সচরাচরই ঘটিয়া থাকে, এমত নহে। কিন্তু অনেক সময়ে ঘটে। সৌভাগ্যক্রমে যাঁহারা সুযোগ্য শাসনকর্ত্তা, তাঁহারা এ প্রথা অবলম্বন করেন, অযোগ্যেরা করিয়া থাকেন। এইরূপ কার্য্যপ্রণালীকে “কলে শাসন” বলা যাইতে পারে। ধর্ম্মের কলের ন্যায় শাসনের কলও বাতাসে নড়িয়া থাকে; কোন দিক হইতে কোন কর্ম্মচারীর রিপোর্টের বাতাস বা অন্য প্রকার ফাপি উঠিয়া কালে লাগিলে কল চলিতে আরম্ভ করে; তদন্তের হুকুম হইতে কলের দম আরম্ভ হইয়া বোর্ড কমিশ্যনর প্রভৃতি অধোধঃ পর্য্যায়ক্রমে ঘুরিয়া আবার লেঃ গবর্ণর পর্য্যন্ত আসিয়া সহি মোহরের মঞ্জুরি মুদ্রিত করিয়া দিয়া বন্ধ হয়। যেমন কলের ধুতি, কলের সূতা প্রভৃতি সামগ্রী আছে, তেমনি কলের তৈয়ারি রাজাজ্ঞাও আছে।
যে লেঃ গবর্ণর এইরূপ কলে শাসন করেন, তিনি সুমানুষ হইলে হইতে পারেন; তদ্ভিন্ন তাঁহার বুদ্ধিমত্তা, যোগ্যতা বা অন্য গুণের প্রশংসার কারণ দেখা যায় না। তিনি কখন আপন বুদ্ধির চালনা করেন না , কোন বিষয়ের সন্ধিবেনা করিবার জন্য তাঁহাকে নিজে কষ্ট পাইতে হয় না। তিনি পরিশ্রম স্বীকার করিয়া কখনও কোন নূতন বিষয়ে প্রবৃত্ত হয়েন না; পরিশ্রম স্বীকার করিয়া কোন বিষয়ের যথার্থ্য স্বয়ং মীমাংসা করেন না। তিনি শাসনযন্ত্রের একটি অংশ মাত্র—যখন রাজ্যের কল বাতাসে নড়িল, তখন তিনিও নড়িলেন, কলে চালিত হইয়া মঞ্জুরিলিপি সমেত সহিমোহর করিয়া দিয়া জলে থামিলেন। সেইরূপ ঘণ্টা পূর্ণ হইলে, ঘড়ির মুরদ, বাহির হইয়া, ঠংঠং করিয়া ঘণ্টা বাজাইয়া আবার কলে মিশিয়া যায়।
সর্ উইলিয়ম্ গ্রে ও সর্ জর্জ কাম্বেলে প্রধান প্রভেদ এই যে, সর্ উইলিয়ম্ গ্রে কলে শাসন করিতেন, সর্ জর্জ কাম্বেল তাহা করিতেন না।
কলে শাসনের অনেক গুণ আছে। তাহার ফল ভাল হউক, মন্দ হউক, লোকের অসন্তোষের সম্ভাবনা অতি অল্প। যাহা পূর্ব্বাপর চলিয়া আসিতেছে, তাহা নিতান্ত অনিষ্টকর হইলেও লোকে তাহাতে সন্তুষ্ট; পূর্ব্বপ্রচলিত রীতি অত্যন্ত অনিষ্টকারী হইলেও লোকে তাহার সংশোধনে অসন্তুষ্ট। পুরাতনের মন্দও ভাল, নূতনের ভালও মন্দ। কলের শাসন শাসনই নহে; যিনি কলে শাসন করেন, তিনি কিছু করেন না, বলিলেই হয়। অতএব কলের শাসনে পুরাতনের কিঞ্চিন্মাত্র সংস্করণ ভিন্ন নূতন কখন ঘটে না। যাহা আছে, তাহাই প্রায় বজায় থাকে, যাহা নাই অথচ আবশ্যক, প্রায় তাহা ঘটিয়া উঠে না। এজন্য লোকেও অসন্তোষ জন্মে না; বিশেষ এদেশীয় লোক পুরাতনের অত্যন্ত অনুরাগী, নূতনে অত্যন্ত বিরক্ত।
সর্ উইলিয়ম্ গ্রে, কলে শাসন করিতেন, সুতরাং লোকের বড় প্রিয় ছিলেন। সর্ জর্জ্ কাম্বেল্ কলে উদ্দেশ্য করিতেন না, এজন্য লোকের বড় অপ্রিয় হইয়া উঠিয়াছিলেন। রাজ্যশাসন উভয়েরই উদ্দেশ্য; কিন্তু সর্ উইলিয়ম্ গ্রের উদ্দেশ্য ছিল কেবল শাসনের কল চালান; সর্ জর্জ কাম্বেল্ সে উদ্দেশ্য, সিদ্ধ করিয়াছিলেন। তাঁহার শাসনে সুফল ফলিয়াছে, সর্ উইলিয়ম্ গ্রের শাসনে কুফল ফলিয়াছে, এ কথা বলাও আমাদের অভিপ্রায় নহে। কেবল বলিতে চাই যে, সর্ জর্জ কাম্বেল্ আপন বুদ্ধিতে চলিতেন, এ বৃহৎ রাজ্যশাসন জন্য চিন্তা করিতেন; উদ্দেশ্যগুলি স্থির করিয়া, তাহার সাধনে প্রাণপণে যত্ন করিতেন; যে কার্য্য কর্ত্তব্য এবং সাধ্য বলিয়া বুঝিতেন, কিছুতেই তাহা হইতে বিরত হইতেন না। সর উইলিয়ম্ গ্রে এ সকল কিছুই করিতেন না। যাহা হয়, আপনি হউক; কেহ কল টিপিয়া দেয় ত কল চলুক—আমি কিছুর মধ্যে থাকিব না। নিজের বুদ্ধি, গ্রে সাহেব প্রায় খরচ করিতেন না; জমার অঙ্কে কিছু ছিল কি না বলা যায় না। নিজের যত্ন প্রায় তাঁহার কোন বিষয়ে ছিল না। তাঁহার দ্বারা যে কিছু সৎকার্য্য সিদ্ধ হইয়াছে—তাহা কলে; তাঁহার দ্বারা যে কিছু অনিষ্ট ঘটিয়াছে, তাহা কলে। তিনি উচ্চ শিক্ষার পোষক ছিলেন বলিয়া বাঙ্গালীমহলে বড় প্রশংসিত; কিন্তু বাঙ্গালীবাবুদিগের মত, আসল কথাটা কি, তাহা বুঝেন নাই; কেবল আট্‌কিন্সন সাহেব কল টিপিয়া দিয়াছিলেন বলিয়া কলের পুত্তলী সর্ উইলিয়ম্ গ্রে উচ্চশিক্ষার পোষকতা করিয়াছিলেন, ঘড়ির মুরদ ঘড়ি পিটিয়া দিয়া কলে লুকাইয়াছিলেন।
এমন নহে যে, সর্ জর্জ কাম্বেলের সময় কলে শাসন একেবারে ছিল না। শাসনের কল চিরকাল বজায় আছে, যিনি ইচ্ছা, তিনি শাসনকর্ত্তা হউন, সে কল মধ্যে বাতাসে নড়িবে; সকল শাসনকর্ত্তাকেই শাসনের কল চালাইয়া কতকগুলি কার্য্য সম্পন্ন করিতে হইবে। তবে সর্ জর্জ্ কাম্বেল্ কলে সিদ্ধ তত্ত্বগুলি অবশ্যগ্রাহ্য মনে করিতেন না; ইচ্ছানুসারে তাহা ত্যাগ করিতেন; ইচ্ছানুসারে তত্তৎস্থানে নূতন সিদ্ধান্ত আদিষ্ট করিতেন। সর্ জর্জ কাম্বেল্ কল নিজে চালাইতেন, স্বয়ং কলের অংশ ছিলেন না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *