১৪. সংযোজন : “রামায়ণের উৎস কৃষি” সম্বন্ধে মন্তব্য – শ্রী শ্রীজীব ন্যায়তীর্থ

১৪. সংযোজন : রামায়ণের উৎস কৃষিসম্বন্ধে মন্তব্য শ্রী শ্রীজীব ন্যায়তীর্থ

শ্ৰীযুক্ত জিতেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় মহাশয় যে অসাধারণ পরিশ্রম করিয়া এই গ্রন্থ রচনা করিয়াছেন, তজ্জন্য তিনি বিশেষ ধন্যবাদার্হ।

‘বাল্মীকি-রামায়ণট সাধারণভাবে একটি ধর্মগ্রন্থ বলিয়াই পরিচিত। পূর্বে এবং ইদানীন্তন কালেও রামায়ণ-পারায়ণ অর্থাৎ এক সপ্তাহের মধ্যে সপ্তকাও রামায়ণের পাঠ সমাপনই রামায়ণ-পারায়ণের অর্থ। একজন পাঠক ও দুইজন ধারক ব্ৰতী হইয়া এই ধর্মানুষ্ঠান করিয়া থাকেন।

এজন্য আমার বাল্যকালে আমাদের গৃহেও রামায়ণ-পারায়ণ অনুষ্ঠানটি হইয়াছিল এবং আমাকে ১৫/১৬ বৎসর বয়সে রামায়ণের উপর কথকতা ভঙ্গিতে ব্যাখ্যান দিতে হইয়াছিল, সেইজন্য বাল্মীকি রামায়ণের বহুলাংশ আমার পঠিত ও আলোচিত।

এই গ্রন্থকার যাহা মনে করিয়াছেন, আমিও তাহাই মনে করি যে, রামায়ণের রূপকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করিলে বামায়ণের মাহাত্ম্য—অর্থাৎ ধর্মগ্রন্থস্বরূপতা বা ঐতিহাসিকতা নষ্ট হইবে—তাহা নহে।

কারণ ইহা ভারতীয় ভাবধারার পরম্পর সিদ্ধ।

(১) ঋগ্বেদের ১ মণ্ডল ১৬৪ সূক্তের ২০ সংখ্যক মন্ত্রটি—‘দ্বা সুপর্ণা সযুজা সখায়া’ ইত্যাদি, একটি রূপক। সংসার—একটি অশ্বত্থ বৃক্ষ। জীব ও ঈশ্বর যেন দুই পক্ষী—একজন কর্মফল ভোজন করে, আর একজন সাক্ষী, অথচ ইহা একটি মন্ত্র।

সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শনে ৩৭০ নং সিলে ইহার একটি চিত্রও পাওয়া গিয়াছে। সেই চিত্রে একটি অশ্বত্থবৃক্ষ আর তাহাতে দুইটি পক্ষী মুখোমুখী বসিয়া আছে।

এই প্রমাণ দৃষ্টে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ৺বেণীমাধব বড়ুয়া এই চিত্রটি আবিষ্কার করিয়া বলিয়াছিলেন ইহা বৈদিক সভ্যতারই প্রতীক। স্যর্‌ জন মার্শ্যাল সিন্ধুসভ্যতা অনার্য্য-সভ্যতার নিদর্শন— যাহা বলিয়াছিলেন, তাহ প্রমাণ সিদ্ধ নহে। ইহা ব্যতীত শবদাহ চিত্র (দগ্ধ বংশখণ্ড, একটি কলস প্রভৃতি) আরও অনেক নিদর্শন পরে আবিষ্কত হইয়াছে, তাহাতে আর্য্য-সভ্যতারই পরিচয় পাওয়া যায়। শবদাহ প্রথা— আর্য্যদেরই ‘ভস্মান্তং শরীরম্ (ঈশোপনিষৎ-যজুৰ্বেদ)। অনার্য্যদের কবর দেওয়াই প্রথা—রামায়ণে (অরণ্যকাণ্ড, চতুর্থ সৰ্গ ২২ শ্লোক) প্রমাণ পাওয়া যায়—রাক্ষসাং গতসত্ত্বানামেষ ধৰ্ম্ম সনাতনঃ। অবটে যে নিধীয়ন্তে তেষাং লোকাঃ সনাতনাঃ ৷ ভূগর্ভে যাহাদের দেহ প্রোথিত হয়, তাহাদের নিত্যলোক প্রাপ্তি হয়, গতপ্রাণ রাক্ষসদের (অনার্যাদের) ইহাই চিরন্তন ধর্ম। এই গ্রন্থকার সিন্ধু সভ্যতা প্রসঙ্গে আর্য্য-অনার্যের সংমিশ্রণ কথার উল্লেখ করিয়াছেন–রামায়ণ-আলোচনার মধ্যে ইহা অপ্রাসঙ্গিক ও সন্দিগ্ধ বিষয়।

(২) ঋগ্বেদের (১০ মণ্ডলের ১০ম সূক্ত) যম-যমী বিষয়ক মন্ত্রগুলি দিন-রাত্রির রূপকরূপে প্রকাশিত।

(৩) শ্রীমদভাগবতে চতুর্থ স্কন্ধে ২৭-২৯ অধ্যায়ে পুরঞ্জন উপাখ্যান বর্ণনার পর উপসংহারে ইহা যে রূপক, তাহা বলা হইয়াছে, এরূপ বহু রূপক চিন্তার দৃষ্টান্ত দেখান যাইতে পারে। সুতরাং গ্রন্থকারের রূপকবাদ দোষাবহ নহে।

গ্রন্থকার স্বীকার করিয়াছেন যে, ওয়েবার সাহেবের লেখা হইতে এই রূপকবাদের প্রেরণা পাইয়াছেন, তাহাও আমি দোষের মনে করি না। বরাহকৃত বৃহৎসংহিতায় (জ্যোতিষ গ্রন্থ) লিখিত হইয়াছে যে,—
ম্লেচ্ছা হি যবনা স্তেষু সম্যক্‌ শাস্ত্রং ব্যবস্থিতম্।
ঋষিবৎ তেহপি পুজ্যন্তে কিমন্যে ব্রাহ্মণ ব্রুবাঃ॥
ম্লেচ্ছ (বর্ণহীন) যবন (গ্রীক, রোমক)দের নিকটে জ্যোতিষ শাস্ত্র সম্যগ্‌ভাবে প্রতিষ্ঠিত, তাহারাও ঋষিবৎ সম্মানের পাত্র, অন্য যাহারা ব্রাহ্মণতুল্য তাহাদের ত’ কথাই নাই। সুতরাং বিদেশীয় মনীষীর প্রেরণাও দোষাবহ নহে; যদি তাহা সত্যভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। আমি সংস্কারমুক্ত চিত্তে নিরপেক্ষভাবে এই গবেষণা গ্রন্থের আলোচনা করিবার চেষ্টা করিতেছি।

(ক) সীতা শব্দের অর্থ লাঙ্গল পদ্ধতি—হলরেখা, ইহা অভিধান সম্মত, এ বিষয়ে দ্বিমত হইতে পারে না।

ওয়েবার সাহেবও বলিয়াছেন—সীতা = furrow of plough, সীতার সহিত সম্বন্ধ-স্থাপনের উদ্দেশ্যে রামকে এজন্য হলধর রাম সহ অভিন্ন কল্পনা করিতে হইয়াছে। সেই কারণে রামায়ণকে মহাভারতের পরবর্তী গ্রন্থ বলা ব্যতীত উপায় ছিল না। নতুবা ‘হলধর রাম’ রামায়ণে অজ্ঞাত পুরুষ। সুতরাং সঙ্গতি থাকে না। আমাদের গ্রন্থকার বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় ‘রাম’ অর্থে ‘মেঘ’ কল্পনা করিয়াছেন। এই কল্পনার মূলে আবেস্তার ‘রামাহুর’ ও আরবী ভাষায় ‘রামা’ শব্দ সহ রাম’ শব্দের সম্বন্ধ কল্পনা করিয়া ‘মেঘ” অর্থ সঙ্গতির চেষ্টা করিয়াছেন। (ইংরাজী Ram এবং Rum শব্দ দুইটি সহ কোন অর্থগত সাদৃশ্য না থাকায় তাহা উল্লিখিত হয় নাই।)

এই গবেষণা গ্রন্থে দশটি পরিচ্ছেদ আছে—(১) প্রাকৃকথা  (২) আদি শ্লোক—মা নিষাদ (৩) প্রথম নাম—পৌলস্ত্য বধ (৪) রাম জন্ম-কথা (৫) রাম নামের উৎস (৬) সম্পাতি রহস্য (৭) কৃষিশ্রী সীতা (৮) ইক্ষ্বাকু বংশ (৯) কুশ বংশ (১০) জনক বংশ।

(খ) প্রাকৃ-কথা প্রসঙ্গে গ্রন্থাকারের মন্তব্য—“মূল কাহিনীর সঙ্গে উত্তরকাণ্ড প্রায় সম্পর্কহীন।” ইহার তাৎপৰ্য্য ঠিক বুঝা যায় না। কারণ সীতার বনবাস, রামায়ণ বক্তা বাল্মীকির আশ্রমে সীতার গমন, লবকুশের উৎপত্তি—উত্তরকাণ্ডেই বর্ণিত।

মহাকবি কালিদাস ও ভবভূতি উত্তরকাণ্ডের ঘটনা লইয়া রঘুবংশ, উত্তর রামচরিত এবং আরও অনেক কবি উত্তরকাণ্ডকে পূৰ্ববতী ছয় কাণ্ডের সহিত সংযুক্ত বলিয়া গ্রহণ করিয়াছেন। এই গ্রন্থকারও উত্তরকাণ্ডের বর্ণিত বেদবতীর উপাখ্যান (৭১ পৃঃ) সীতার পূর্ব-জন্ম-কথার আলোচনা করিয়াছেন। (গ) “অনুরূপভাবে বালকাণ্ডের অধিকাংশ উপাখ্যানগুলির সঙ্গে মূল কাহিনীর সম্পর্ক বিশেষ নাই। ঐ কাহিনীগুলির জন্য রাম কাহিনীর দেবত্ব মানিতে হয়।” (২য় পৃষ্ঠা)…… “রাম কাহিনীর মানবিক সত্ত সুপ্রতিষ্ঠিত”।

এই উক্তির সহিত লঙ্কাকাণ্ডের দুইটি শ্লোকার্থ তুলনা করিলে রাম নিজেই স্বীকার করিতেছেন যে আমি মানব।

আত্মানং মানুষং মন্যে রামং দশরথাত্মজম্।
সোহহং যশ্চ যতশ্চাহং ভগবাংস্তদূরবীতু মে॥
আমি নিজেকে দশরথতনয় মানুষ রাম বলিয়াই জানি। আমি কে বা কোথা হইতে আগত, সে কথা ভগবান আপনিই বলুন। ব্রহ্মা উত্তর করিলেন—

সীতা লক্ষ্মীর্ভবান বিষ্ণুদেব কৃষ্ণঃ প্রজাপতিঃ।
বধাৰ্থং রাবণস্যেহ প্রবিষ্টে মানুষীং তনুম্॥
সীতা লক্ষ্মী, আপনি বিষ্ণু দেব কৃষ্ণ ও প্রজাপতি।

সুতরাং এবিষয়ে বালকাণ্ড ও উত্তরকাণ্ডের সহিত লঙ্কাকাণ্ডের পূর্ণ সঙ্গতি (১১৯সর্গ ১১, ২৭ ও ২৮ শ্লোক) দেখা যায়।

(ঘ) “বাল্মীকি নারদের মুখে রাম কাহিনী প্রথম শুনেছিলেন, সুতরাং বাল্মীকি রাম কাহিনীর স্রষ্টা ন’ন। প্রচলিত একটি কাহিনী” ইত্যাদি এ মন্তব্যও লেখকের সমীচীন নহে। কারণ, বাল্মীকি জিজ্ঞাসা করিলেন— “কোন্বিহ সাম্প্রতং লোকে গুণবান কশ্চ বীৰ্য্যবান” ইত্যাদি। সাম্প্রতম্‌—বর্তমান সময়ে, ইহলোকে এই ভূখণ্ডে কে এমন ব্যক্তি আছেন যিনি গুণবান বীৰ্য্যবান ধৰ্মজ্ঞ কৃতজ্ঞ প্রভৃতি গুণসম্পন্ন?

নারদ তপঃ স্বাধ্যায়রত, বাল্মীকিও তপস্বী—উভয়ই জ্ঞানী। যেরূপ প্রশ্ন—তাহারই অনুরূপ উত্তর কি হইবে? একটি “প্রচলিত কাহিনী”? ইহা কি বর্তমান ব্যক্তি না কল্পিত ব্যক্তি? দশরথ তনয় রাম যে বাল্মীকির সমসাময়িক-ইহা পূর্বাপর ঘটনাবলির দ্বারাই প্রমাণিত।

রাম-কাহিনীর স্রষ্টা রাম নিজেই। বাল্মীকি বা নারদ কেহই নহেন। পর্য্যটক নারদ তাহ প্রত্যক্ষভাবে জানিয়াছেন, বাল্মীকি তাঁহার মুখে শুনিতে চাহিলেন। মনে হয় বাল্মীকি লোকমুখে যাহা শুনিয়াছিলেন তাহা সত্য কিনা জানিবার জন্য (verify করিবার জন্য) সর্বজ্ঞ যোগী নারদকে জিজ্ঞাসা করিলেন। ইহা কল্পিত কোন কাহিনী নহে। এই বৃত্তান্ত জানার পর তমসা নদীতে স্নান করিতে গেলেন। স্নানান্তে কলশ রাখিয়া বল্কল (পরিধেয় বস্ত্র) গ্রহণ করিলেন।

(ঙ) গ্রন্থকার বন্দ্যোপাধ্যায় কলশ ও বল্কল শব্দে দুইটি বাদ্যযন্ত্র একটিকে রাখিয়া অপরটিকে গ্রহণ করিলেন, এইরূপ অর্থ করেন। স্নানের সময়ে বাল্মীকি যদি একজন কৃষক ও অথচ সঙ্গীতবিশারদ হন, তাহা হইলেও স্নানকালে দুইটি বাদ্যযন্ত্র স্কন্ধে লইয়া বা শিষ্যের স্কন্ধে চাপাইয়া লইয়া যাওয়ার কল্পনা কি স্থান কাল বিরুদ্ধ নহে? কলশ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থও সমীচীন নহে। ‘কলম্’ অব্যক্ত মধুরং শব্দং শ্বতি (শো + ড), সো ও শো ধাতুর অর্থ বিনাশ করা। বাদ্যের বিপরীতাৰ্থ প্রকাশক হইতেছে। বল্কল শব্দের ব্যুৎপত্তি যাহা দেখান হইয়াছে, তাহাও কোন ব্যাকরণ বা অভিধান সম্মত নহে।

(চ) এখন দেখা যাউক, “আদি শ্লোক—মা নিষাদ” ইত্যাদি শ্লোকের অর্থ—(লেখকের অভিপ্রেত) সঙ্গতিপূর্ণ হইয়াছে কি না?

মা অর্থে ‘লক্ষ্মী, নিষদ এবং নিষাদ সমার্থক যার অর্থ পতি (ইহা কোন অভিধানে পাওয়া যায় না); সুতরাং ‘মা নিষাদ’ শব্দে লক্ষ্মীপতি অর্থাৎ নারায়ণ। নার (জল) এ যার অয়ন (শয়ন, আশ্রয়) সহজ কথায় ‘মেঘ” (১৩পৃঃ)।

‘ক্ৰৌঞ্চ’ অর্থে রাক্ষস বিশেষ। রক্ষ (রক্ষা করা) ধাতু নিষ্পন্ন রাক্ষস শব্দের অর্থ যাহা হইতে (ধনাদি) রক্ষিত হয় (রাক্ষস শব্দের এরূপ অর্থ কোন অভিধানে বা প্রয়োগে দেখা যায় না)। ‘প্রাণ জগতের সৃষ্টি এবং স্থিতির মূলে দাবাপৃথ্বী; এই দ্যৌঃ এবং পৃথ্বী আদিম পিতা ও মাতা। স্থূলভাবে দ্যেীঃ অর্থে অন্তরীক্ষের সূৰ্য্য এবং পৃথী অর্থে কর্ষণযোগ্য ভূখণ্ড, এই দুই এর সংযোগ মূলতঃ মানবসমাজের অগ্রগতির উৎস’। ‘সূৰ্য্য এবং পৃথিবী সকল সময়েই মিথুনাবদ্ধ থাকিলেও—(ইহা লেখকের কল্পনামাত্র। কোথায় সূৰ্য্য আর কোথায় পৃথিবী?) “দক্ষিণায়নাদির প্রাক্‌কালে গ্রীষ্মঋতুতে ধরিত্রী উত্তপ্ত হয়ে উঠে—এই তপ্ত অবস্থাকে মহাকাব্যে কামমোহিত বলা হইয়াছে।” ইহাও কি কল্পনা-মাত্র নহে? পৃথিবীকে সূর্য্যের সহিত মিথুনরূপে গ্রহণ অত্যন্ত কষ্ট কল্পিত। দ্যাবাপৃথ্বীকে মিথুনপদে বরং গ্রহণ করা যায়।

(ছ) কামমোহিত শব্দে–‘গ্রীষ্মকালে উত্তপ্ত ইহাও কষ্টকল্পিত।

মেঘবন্দনার মধ্যে বলা হইয়াছে—’হে মেঘ! শাশ্বতকালের জন্য প্রতিষ্ঠা লাভ কর’—মেঘ যদি পর্জন্যদেবও হয়, তাহা হইলেও কেহ মেঘের চিরস্থায়ি প্রতিষ্ঠার কামনা করে না। ‘কালে বর্ষতু পর্জন্যঃ’ ইহাই বলা হয়। শশ্বহদ্‌ বৰ্ষতু পর্জন্যঃ ইহা চিন্তার অতীত।

যেমন মেঘ না থাকিলে কৃষি হয় না, ধরিত্রী বন্ধ্যা থাকে, তেমনই মেঘের চিরস্থিতিও বাঞ্ছনীয় নহে। অতিবৃষ্টি অথবা বহুদিনব্যাপী মেঘের আচ্ছাদানবশতঃ কৃষিশ্রী বিনষ্ট হইয়া থাকে।

এরূপ অসঙ্গতি চিন্তনীয়।

দ্বিতীয় অসঙ্গতি এই যে,—পৃথিবী গ্রীষ্মকালে উত্তপ্ত হইবার পর মেঘ আবিভূত হইলে বা বর্ষণ হইলে বাল্মীকি কেন সর্বজীবই আনন্দ বা শান্তি লাভ করে। গ্রন্থকারও লিখিয়াছেন– “প্রচও গ্রীষ্মের পর মেঘের আবির্ভাব শান্তি বা আরাম প্রদান করে।” (৪২ পৃঃ) কিন্তু ঐ দ্বিতীয় সর্গে বর্ণিত হইয়াছে—ঋষের্ধর্মাত্মনস্তস্য কারুণ্যং সমপদ্যত। শোকাৰ্ত্তস্য প্রবৃত্তো মে শ্লোকো ভবতু নান্যথা। ‘শোকঃ শ্লোকত্বমাগতঃ’।

অর্থাৎ মহৰ্ষির করুণরসের উদ্ভব হইল—‘শোকাৰ্ত্ত আমার এই বাণী শ্লোকরূপে পরিণত হউক’—শোকই শ্লোক হইল-ইত্যাদি মূল বাক্যের সহিত গ্রন্থকারের রূপকবাদ অত্যন্ত অসঙ্গত হইতেছে না কি? রূপকবাদ স্বীকার করিলেও পূর্বাপর সামঞ্জস্য অবশ্য চিন্তনীয় মনে করি।

(জ) ‘মূল কাহিনীর সঙ্গে আপাত দৃষ্টিতে ক্ৰৌঞ্চবধের কোন সম্পর্ক নাই।’ ইহাও লেখকের অমূলক আশংকা। কারণ সংস্কৃত ভাষায় তখনও কোন ছন্দোবদ্ধ বাণীর উৎপত্তি হয় নাই। সেই উৎপত্তির কারণরূপে বলা হইয়াছে—বাল্মীকি হৃদয়ের শোকময় ভাবোচ্ছদাস। ক্ৰৌঞ্চবধ ঘটনা দর্শন—ভাবোচ্ছাসের কারণ। ইতিপূর্বে নারদের মুখে রামবৃত্তান্ত শুনিয়াছেন, সেই বিষয়বস্তু (Plot) অবলম্বন করিয়া শ্লোকময় রামায়ণ রচনা করা হইয়াছে—ইহাতে অসঙ্গতি কি আছে? বরং লক্ষ্মী (সীতা)পতি রাম যে ক্ৰৌঞ্চেরমিথুন রাক্ষসদম্পতি রাবণ ও মন্দোদরীর একটি (পুরুষ) রাবণকে বধ করিয়া চিরন্তন গৌরব লাভ কর—এই অর্থটিই ব্যঞ্জিত হইয়াছে। অবশ্য ইহা পরবর্তীকালে টিকাকারদের উদ্ভাবিত অর্থান্তর; রূপকবাদে কম্পিত অর্থ অপেক্ষা এই ব্যঞ্জনালভ্য অর্থ সঙ্গতিপূর্ণ মনে হয় না কি?

ঋষিমুখ হইতে স্বতঃস্ফূর্ত এই ছন্দোবদ্ধ বাণী যে বহুলার্থদ্যোতক তাহাই পরবর্তী মণীষীরা প্রমাণিত করিয়াছেন।

(ঝ) গবেষণা গ্রন্থে লিখিত হইয়াছে যে—“ভারতের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে বেদ রচনা শুরু হয়”—এই রচনা ঋষি নামধারী মানবগোষ্ঠী দ্বারা সংসাধিত হইয়াছিল—ইহাই লেখকের অভিপ্রায় মনে হয়, কিন্তু রামায়ণের আদিশ্লোক বাল্মীকির মুখ হইতে প্রকাশিত হওয়ায় তাহার বিস্ময়ের সীমা ছিল না। বিস্ময়ের কারণ, ছন্দোবদ্ধ তন্ত্রীলয়সমন্বিত এই বাণী। অথচ বেদ যদি মনুষ্যরচিত হয়—তাহাতে শত শত অনুষ্টুপ ছন্দের শ্লোক থাকিতে বাল্মীকির বিস্ময়ের কারণ কি? বস্তুতঃ বেদ যে অপৌরুষেয়-ইহা নির্ণয়ের পক্ষে আদিকবি বাল্মীকির এই বিস্ময় অন্যতম কারণরূপে গ্রহণ করা যাইতে পারে।

(ঞ) লেখকের একটি উদ্ভট মন্তব্য—যথা (৪ পৃঃ) “নাসাকর্ণচ্ছেদন হিন্দু সমাজে প্রাচীনকাল হতে বিবাহ অনুষ্ঠানের একটি রীতি। সেই রীতি শূৰ্পণখার ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হ’ল কেন?”

কন্যাকালে (বিবাহের বহু পূর্বে) মেয়েদের নাক-কান বিঁধান হয় অলঙ্কার পরিধানের জন্য। আর তাড়কা ও শূৰ্পণখার নাসাকর্ণচ্ছেদন বিরূপ করিবার জন্য, উভয় কাৰ্য্যকে এক পর্যায়ে ফেলার অর্থ আমাদের অবোধ্য।

(ট) “শূর্পণখার নাসাকর্ণচ্ছেদকালে ‘সত্যবাদী রাম’ লক্ষ্মণকে অবিবাহিত বলিয়াছিলেন—অথচ উভয়ের এক সময়ে বিবাহ হইয়াছিল।” ইহা লেখকের মন্তব্য।

রাম সত্যবাদী এবং ধর্মজ্ঞ; ধর্মশাস্ত্রে আছে যেমন, ‘ন নর্মযুক্তং বচনং হিনস্তি’ অর্থাৎ পরিহাস করিয়া মিথ্যা বলিলে দোষ হয় না। তেমনই ‘ন স্ত্রীষু’ ‘ন বিবাহকালে’ ‘প্রাণাত্যায়’—স্ত্রীলোকের নিকট, বিবাহসময়ে, প্রাণবিনাশ কালেও মিথ্যাভাষণ দোষাবহ নহে। সুতরাং রাম চরিত্রের কোন অসঙ্গতি হয় নাই।

(ঠ) ঊর্মিলা, মন্থরা, শূৰ্পণখা, মাণ্ডবী, শ্রুতকীর্তি এবং বিশ্বামিত্র প্রভৃতি কতকগুলি প্রাসঙ্গিক চরিত্রের পরবর্তী বৃত্তান্তের মধ্যে উল্লেখ না থাকায় রামায়ণ গ্রন্থের ত্রুটি লক্ষ্য করিয়াছেন লেখক মহাশয়।

অলঙ্কার শাস্ত্রানুসারে কাব্যে বা নাটকে দ্বিবিধ চরিত্র অঙ্কিত করা হয়। (১) আধিকারিক (২) প্রাসঙ্গিক। আধিকারিক অর্থাৎ প্রধান নায়ক নায়িকাদের চরিত্র শেষ পর্যন্ত বর্ণনীয়। আর প্রাসঙ্গিক চরিত্রগুলি যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই বর্ণনীয়। ইহাকে ত্রুটি বলা যায় না। (সাহিত্য দর্পণ; ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ)

(ড) “বলা হয়েছে যে রাম অযোধ্যার রাজপথে লবকুশকে গান গাইতে দেখে রাজপ্রাসাদে ডেকে এনেছিল। উত্তরকাণ্ডে বাল্মীকি অশ্বমেধ যজ্ঞে লবকুশকে এনেছিল—ইহা বলা হয়েছে।”

রাজপ্রাসাদে লবকুশকে ডেকে আনার পর তারা যে আর বাল্মীকির আশ্রমে ফিরে যাওয়ার প্রমাণ না থাকিলে—ইহা একটি অসঙ্গতি বা ত্রুটি বলা যাইতে পারে।

(ঢ) আদি নামকরণ–পৌলস্ত্যবধ—ইহা হইতে অগস্ত্য নক্ষত্রের উদয় ও দক্ষিণায়ন সূৰ্য্যগতির সঙ্কেত-যাহ বর্ণিত হইয়াছে তাহা উপাদেয়, তবে বধ শব্দের অর্থটি পরিস্ফুট হয় নি।

(ণ) রাম জন্ম কথা—এই প্রকরণটি লেখকের অসাধারণ প্রতিভার পরিচায়ক। দুই একটি শব্দের অর্থ কষ্ট কল্পিত—যথা ঋষ্যশৃঙ্গ—মৃগশিরা নক্ষত্র। ঋষ্য শব্দের অর্থ মৃগ, ইহা কল্পিত। অঙ্গনা অর্থে কন্যারাশি–ইহা সহজবোধ্য। অঙ্গনা শব্দে বৃষ, কৰ্কট, বৃশ্চিক, মীন ও মকর রাশি বুঝায়—ইহার প্রমাণ উল্লিখিত হয় নাই। তথাপি এই প্রকরণে রূপকরামও যে ‘উচ্চস্থে গ্রহপঞ্চকে—মেষং গতে পুষণি—লগ্নে কর্কটকে’ ইহার সহিত সামঞ্জস্য করা হইয়াছে—ইহাই প্রতিভার পরিচায়ক। কৌশল্য, কৈকেয়ী, সুমিত্র শব্দেরও রূপকার্থ গ্রহণীয়।

(ত) ‘রাম নামের উৎস’। এই গ্রন্থকারের মতে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা অতি প্রাচীন, এবং রাম শব্দটি ঐ ভাষা হইতে ভারতে প্রবেশ করিয়াছে। অথচ ইউরোপীয় সভ্যতা যে ৪০০০ চার হাজার বৎসরের অধিক পুরাতন নহে, ইহা সর্বস্বীকৃত। ডঃ হারম্যান জ্যাকবি সাহেবও প্রমাণ করিয়াছেন যে, ‘কৃত্তিকাঃ প্রাব্য ন চ্যবন্তে’—শতপথব্রাহ্মণের এই কৃত্তিকানক্ষত্রের তাৎকালিক অবস্থান এবং বৰ্ত্তমান অবস্থান দ্বারা জোতিষগণনার ফলে অন্তত পাঁচ হাজার বৎসর পাওয়া যায়। এবং বালগঙ্গাধর তিলক মহোদয় তাহার ‘Orion’ নামক প্রবন্ধেও ঐরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছেন। ‘রাম নামের উৎস’ প্রকরণটি তেমন ভাল লাগিল না।

ভারতবর্ষের বৈদিক মন্ত্রগুলিকে কৃষকসঙ্গীত (চাষার গান) বলিয়া ইউরোপীয় মনীষিগণ অনেকদিন পূর্বেই উদ্‌ঘোষিত করিয়াছিলেন। সমগ্র বেদে যেমন ইন্দ্র, পর্জন্য, বরুণ প্রভৃতি মেঘবাহন দেবতার উল্লেখ আছে—তেমনিই অগ্নি, অশ্বিদ্বয়, বিশ্বদেব, সরস্বতী, ঋভুগণ, সবিতা, দ্যাবাপৃথিবী, বিষ্ণু, বায়ু, মরুৎ, রুদ্র, সোম, ঊষা, সূৰ্য্য প্রভৃতি বহু মেঘসম্বন্ধহীন দেবতারও স্তুতি আছে। বস্তুতঃ বৈদিক মন্ত্রগুলি যজ্ঞ সম্পাদনের জন্যই ব্যবহৃত হইত। কৃষিকার্য্যের অঙ্গীভূত গীতি নহে। এই যজ্ঞের পরম্পরা রামায়ণেও আসিয়াছে—অশ্বমেধ, পুত্রেষ্ঠি প্রভৃতি যজ্ঞের কথা বার বার উল্লিখিত হইয়াছে।

(থ) সম্পাতি রহস্য প্রকরণে বলা হইয়াছে যে,—‘হনুমানরা জানত যে সীতাকে রাবণ হরণ ক’রে লঙ্কায় রেখেছে, সুতরাং সম্পাতির ব্যাপারটি উদ্দেশ্যবিহীন, এজন্য ইহা রহস্যময় এবং রূপক কল্পনার ইঙ্গিত রয়েছে’ (৪৮ পূঃ)। লেখক মহোদয়ের এটি প্রমাদপূর্ণ মন্তব্য। কেননা, রামায়ণের কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ডে ৪২ সৰ্গ হইতে ৫৫ সর্গ পর্যন্ত সীতার অন্বেষণ বৃত্তান্ত হনুমান ও বানরগণের দ্বারা কিরূপভাবে সম্পাদিত হইয়াছিল, তাহার বর্ণনা আছে, সম্পাতি পক্ষী আসিয়া সীতার হরণের পর লঙ্কায় অবস্থানের কথা জানাইয়া দেয়। হনুমানরা যে জানিত না, ইহা স্পষ্ট বলা আছে।

(দ) ‘কৃষিশ্রী সীতা’ এই প্রকরণে—বৈদিক মন্ত্রে সীতার উল্লেখ (ঋগ্বেদ ৪ মণ্ডল ৫ অঃ ৫৭ সূত্ত্বে ৬৭ মন্ত্র) আছে। সীতা শব্দে লাঙ্গল পদ্ধতি বা ‘সীতাধার কাষ্ঠ’ অর্থাৎ লাঙ্গল বলা হইয়াছে। ইহা অভিধানেও উক্ত হইয়াছে, ইহা নিঃসন্দেহ। ‘সীতা’ শব্দের রূপক অর্থ সর্বস্বীকৃত। ‘কৃষিশ্রী’ অর্থটি তাহা হইতে টানিয়া আনিতে হইবে।

(ধ) ইক্ষ্বাকুবংশ, কুশবংশ ও জনকবংশ–এই তিন অধ্যায়ে বহু কষ্টকল্পনা করা হইয়াছে। একটি দৃষ্টান্ত দিই—জনক শব্দে ‘বীজ’ গ্রহণ করা হইয়াছে। জনক যদি ‘বীজ’ হয়, আর সীতা যদি লাঙ্গল পদ্ধতি হইতে উৎপন্ন কৃষিশ্রী হয়, তাহা হইলে জনকের লাঙ্গল কর্ষণের ফলে বসুন্ধরা হইতে সীতার উৎপত্তি—এ অংশটি সঙ্গত হয় কি?

(ন) অশ্বত্থ শব্দে অশ্বিনীনক্ষত্র ইঙ্গিত করা হয়েছে (৪৯ পৃঃ), ইহাও কষ্টকল্পনা।

(প) নিশা শব্দের অর্থ—মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, ধনুঃ ও মকর রাশি। কর অর্থ হস্তপ্রান্ত।

‘সুতরাং নিশাকর শব্দে কর্কট ও মেঘরাশির প্রান্তদ্বয় ইঙ্গিত করেছে।’ এখানে বক্তব্য এই যে,–এরূপ প্রান্তদ্বয় পাইবার কোন যুক্তি দেখান হয় নাই।

(ফ) ‘রামায়ণের ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ স্বতন্ত্রভাবে আলোচনার যোগ্য। বর্তমানে ঐ প্রসঙ্গ পাশ কাটিয়ে রামায়ণের কৃষিভিত্তিক সত্তা নিয়ে আপাততঃ আলোচনা হচ্ছে।’ (১১ পৃঃ)

“বাল্মীকি তার মহাকাব্য রচনার উদ্দেশ্যমূলকভাবে রূপকের আশ্রয় নিয়েছেন পুরোপুরি।” “সুতরাং ব্যক্তি ও স্থান নামগুলি অধিকাংশক্ষেত্রেই রূপক মানতে হবে, নতুবা রামায়ণের বিবিধার্থবোধক বিশেষণটি ব্যর্থ হয়” ইত্যাদি। এখানে আমাদের মনে একটি প্রশ্ন জাগে যে,—ব্যক্তি ও স্থান নামগুলির রূপক মানতে হবে, রামায়ণে যে কয়টি প্রসিদ্ধ ঘটনা আছে, তাহার সহিত সামঞ্জস্য রক্ষা করা এই রূপক বাদে উচিত কি না চিন্তনীয়।

(১) পৌলস্ত্যবধ (২) রাম ও সীতার চৌদ্দবৎসর বনবাস বা নির্বাসন (৩) বনবাসকালে সীতা হরণ (৪) সীতার বনবাস (৫) বাল্মীকির আশ্রমবর্ণনায় কোন কৃষির উল্লেখ আছে কি না?

(১) পৌলস্ত্যবধের রূপক ব্যাখ্যা ভালই হইয়াছে, তবে বধ শব্দের অর্থ পরিস্ফুট হয় নাই।

(২) রাম ও সীতার চৌদ্দ বৎসর বনবাসকালে অর্থাৎ মেঘ ও কৃষিশ্রী বর্জিত অযোধ্যা বা যে কোন ভূখণ্ড কি দশায় উপস্থিত হইয়াছিল তাহার বর্ণনা রামায়ণে দেখা যায় না। রামায়ণে, চৌদ্দবৎসর অনাবৃষ্টি বা কৃষি উৎপন্ন হয় নাই এরূপ উল্লেখ নাই।

(৩) বনবাসকালে সীতাহরণ—ওয়েবার সাহেব লিখিয়াছেন যে,— দাক্ষিণাত্যে তখন কৃষিকাৰ্য্য ছিল না, তাই হলধর সহ লাঙ্গল পদ্ধতির প্রচলনই সীতার বনবাসের উদ্দেশ্য। এ বিষয়ে বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় কিছু লিখেন নাই।

(৪) সীতার পুনঃ বনবাস রূপকবাদে ব্যাখ্যাত হয় নাই।

(৫) বাল্মীকির আশ্রমবর্ণনায় কোথাও দেখা গেল না যে,—বাল্মীকির আশ্রমে কৃষিক্ষেত্র ছিল, এমনকি বাল্মীকির একখানা লাঙ্গল ছিল, একথারও উল্লেখ নাই। জনকের লাঙ্গল ছিল, কিন্তু তিনি ত রামায়ণ রচয়িতা নহেন। রূপকবাদে তিনি ত ‘বীজ’ মাত্র। বাল্মীকি যে সঙ্গীতজ্ঞ কবি ইহার প্রমাণ পাওয়া যায় কিন্তু তিনি যে কৃষক বা কৃষিক্ষেত্রের পরিচালক, ইহার প্রমাণ নাই। শুধু নামগুলির অর্থান্তর অনুসন্ধান করিলেই কি সমগ্র রামায়ণের রূপকবাদ স্থাপিত হইবে? ঘটনাগুলির সামঞ্জস্য বিধান কি আবশ্যক নহে?

আমি যতদুর পারি, পরিশ্রম করিয়া নিরপেক্ষভাবে শ্রীযুক্ত জিতেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় মহাশয়ের লিখিত এই গবেষণা গ্রন্থ পাঠ করিয়াছি এবং আমার মনে যে প্রশ্নগুলি জাগিয়াছে তাহা অন্তে সন্নিবেশিত করিয়াছি।

আমার শেষকথা এই যে, ‘রামায়ণের উৎস কৃষি’ এই রামায়ণ শব্দের অর্থ যদি রামায়ণ গ্রন্থ হয়, তাহা হইলে বাল্মীকিকে কোন না কোন সময়ে ‘কৃষিশ্রী’ দর্শনের ঘটনা উল্লিখিত হওয়া উচিত ছিল। যেমন ক্ৰৌঞ্চ মিথুনের অন্যতমকে বধ করার ঘটনা হইতে রামায়ণের রচনার প্রবৃত্তি জাগিয়াছিল। রামায়ণে বর্ষাবর্ণনায় বা শরৎকাল বর্ণনায় বহু শ্লোকের মধ্যে দুই একটি শ্লোকে কৃষির বর্ণনা আছে মাত্র। আর যদি রামায়ণের অর্থ হয় ‘মেঘের আগমন’ তাহা হইলে ‘কৃষির উৎস রামায়ণ’– এইরূপ বিপরীত নামকরণ হওয়া উচিত।

আমি যদি ভ্রমবশতঃ কিছু ত্রুটিপুর্ণ উক্তি করিয়া থাকি, তাহ বার্ধকাবশতঃ মার্জনীয়। ইতি—

–শ্রী শ্রীজীব ন্যায়তীর্থ

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *