৪৭. কুক্কুর ও সন্ন্যাসীর বিবাদ এবং কালিঞ্জর রাজের বিবরণ

কুক্কুর ও সন্ন্যাসীর বিবাদ এবং কালিঞ্জর রাজের বিবরণ

লক্ষ্মণ বলেন, প্রভু উচিত এ নয়।
সাত দিন হৈল রাজকার্য্য নাহি হয়।।
সাত দিন হইয়াছে সীতার বর্জ্জন।
সীতার শোকেতে কর্ম্মে কিছু নাহি মন।।
রাজা হৈয়া রাজকর্ম্ম না করে জিজ্ঞাসা।
পরিণামে নরক ভিতরে হয় বাসা।।
রাজ্যচর্চ্চা ছাড়িলেন পূর্ব্বে রাজা নৃগ।
সেই পাপে নরক ভুঞ্জিল চারি যুগ।।
পুষ্কর দেশের রাজা নাম নৃগেশ্বর।
ধর্ম্মেতে ধার্ম্মিক রাজা গুণের সাগর।।
প্রভাসের তীরে রাজা করিল গমন।
এক লক্ষ ধেনুদানে তুষিল ব্রাহ্মণ।।
অগ্নিবৈশ্যের এক ধেনু ছিল তার পালে।
নৃগরাজ দান কৈল ধেনুর মিলালে।।
অগ্নিবৈশ্য ব্রাহ্মণেরে জগতে বাখানি।
তপে জপে ব্রহ্মচর্য্যে দ্বিজ মহাজ্ঞানী।।
ধেনুর শোকেতে দ্বিজ জরজর তনু।
নানা দেশে তত্ত্ব করে না পাইল ধেনু।।
ভ্রমিতে ভ্রমিতে গেল প্রভাসের তীরে।
আপনার ধেনু দেখে পালের ভিতরে।।
ধেনু দেখি ব্রাহ্মণের হরষিত মন।
জীববৎসা বলি মুনি ডাকিল তখন।।
হাম্বা রবে এল ধেনু অগ্নিবৈশ্য পাশে।
ধেনু লয়ে দ্বিজবর চলিল হরিষে।।
যারে দান দিয়াছিল নৃগ মহীপালে।
সেই দ্বিজ ধাইয়া আইল হেনকালে।।
অগ্নিবৈশ্য ধেনু লয়ে করিছে গমন।
গো-চোর বলিয়া তারে ধরিল ব্রাহ্মণ।।
ধেনু লাগি বিসম্বাদ হইল দুই জনে।
রাজদ্বারে মহাযুদ্ধ ব্রাহ্মণে ব্রাহ্মণে।।
দ্বারী দিয়া ভূপতিরে কহিল সংবাদ।
ধেনু লাগি দুই দ্বিজে হতেছে বিবাদ।।
লক্ষ ধেনু দান তুমি কৈলে যেইকালে।
অগ্নিবৈশ্যের ধেনু এক ছিল সেই পালে।।
এতেক শুনিয়া রাজা ভাবয়ে বিষাদ।
অবিচারে দান করি পড়িল প্রমাদ।।
এতেক ভাবিয়া রাজা না দিল দর্শন।
রাজদ্বারে হুড়াহুড়ি বিপ্রদুই জন।।
দুই বিপ্র কোন্দাল করয়ে রাজদ্বারে।
দুই প্রহর হৈল দেখা না পায় রাজারে।।
ভূপে দেখা না পাইয়া দোঁহে হৈল তাপ।
ক্রোধভরে দুই বিপ্র ভূপে দিল শাপ।।
পরধন দান করে লাগিল কোন্দল।
দেখা না পাইয়া বিপ্র ছাড়ে রাজস্থল।।
দেখা না পাইয়া ভূপে বলে কটূত্তর।
কেঁকলাস হয়ে থাক নগর ভিতর।।
উভয়ে মিলিয়া ঘরে গেলেন ব্রাহ্মণ।
প্রমাদ পড়িল এত দিয়া পরধন।।
ব্রহ্মশাপ নৃগরাজা ভুঞ্জে চিরকাল।
না করে রাজ্যের চর্চ্চা এতেক জঞ্জাল।।
রাম বলে, জানি শাস্ত্রে কহে মুনি ঋষি।
অবিচারে ধর্ম্মকার্য্য কৈলে পাপরাশি।।
চিরদিন তোমরা করহ রাজ্যখণ্ড।
করেছ ভূপতি মোরে দিয়া ছত্রদণ্ড।।
এত বলি শ্রীরাম বসিল সভা করি।
রাজদ্বারে লক্ষ্মণ বসেন হয়ে দ্বারী।।
আইল বশিষ্ঠ-মুনি কুলপুরোহিত।
কশ্যপ নারদ আদি হৈল উপনীত।।
পাত্র মিত্র লয়ে চর্চ্চা করেন ভরতে।
লক্ষ্মণ আছেন দ্বারে স্বর্ণছড়ি হাতে।।
মুনিগণ কহিছেন শুনহ লক্ষ্মণ।
রঘুনাথ সঙ্গেতে করাহ দরশন।।
প্রজা সব বলে শুন ঠাকুর লক্ষ্মণ।
রামের পালনে সুখী আছে প্রজাগণ।।
রাম হেন রাজা নাহি দেখি কোন যুগে।
পুত্র ও পৌত্রেতে লোক আছে নানা ভোগে।।