৪০. রাবণ কর্ত্তৃক অমরাবতী আক্রমণ

রাবণ কর্ত্তৃক অমরাবতী আক্রমণ

অন্তরীক্ষে ঠাট কটক উঠে মুড়ে মুড়ে।
রাত্রি দুই প্রহরে অমরাবতী বেড়ে।।
বিষম অমরাবতী না পারে লঙ্ঘিতে।
অসংখ্য বেড়িয়া ঠাট রহে চারিভিতে।।
ত্রিভুবন জিনি স্থান অমর-নগরী।
প্রবাল মাণিক্য মণি শোভে সারি সারি।।
সুবর্ণ-নির্ম্মিত পুরী বিচিত্র গঠন।
উভেতে প্রাচীর তিন শতেক যোজন।।
শত যোজন সুরপুরী আড়ে পরিসর।
দীর্ঘে ওর নাহি তার বায়ু-অগোচর।।
একৈক যোজন এক দুয়ার গঠন।
বহু অক্ষৌহিণী ঠাট দ্বারের রক্ষণ।।
সোণার কপাট খিল পর্ব্বতের চূড়া।
সোণার হুড়কা তায় নবরত্ন বেড়া।।
শত অক্ষৌহিণী ঠাট ইন্দ্রের গণনা।
চারি অংশ করি সেনা চারি দ্বারে থানা।।
ঐরাবত উচ্চৈঃশ্রবা থাকে চারি দ্বার।
কাহারো নাহিক শক্তি পথ লঙ্ঘিবারে।।
শত বৃন্দ ভিতরে আছয়ে অন্তঃপুরী।
শচী দেবকন্যা তথা পরমা সুন্দরী।।
পরমা সুন্দরী শচী তিনি মুখ্যা রাণী।
ত্রিভুবন জিনি রূপ দেবতা-মোহিনী।।
পদ্মকোটি ঘর আছে পুরীর ভিতর।
নানা রত্নে পরিপূর্ণ পরম সুন্দর।।
রত্নেতে নির্ম্মিত ঘর দুয়ার চৌতারা।
দেবকন্যাগণ তাহে রূপে মনোহরা।।
স্থানে স্থানে শোভিত বিচিত্র নাট্যশালা।
দেবগণ লয়ে ইন্দ্র করে তাতে খেলা।।
নাহি শোক দুঃখ, নাহি অকাল-মরণ।
ত্রিভুবন জিনি স্থান ভুবন-মোহন।।
সদানন্দময় সে অমরাবতী নাম।
যত দেব আসি তথা করয়ে বিশ্রাম।।
নানা রঙ্গে নৃত্য করে বহু পক্ষিগণ।
কুসুম-গন্ধেতে সবে আনন্দে মগন।।
প্রমাদ পড়িল তাহা ইন্দ্র নাহি জানে।
অমরা-নগরী গিয়া বেড়িল রাবণে।।
রাবণ বেড়িল স্বর্গ শুনি পুরন্দর।
দেবগণ লয়ে গেল বিষ্ণুর গোচর।।
বিষ্ণুর নিকটে ইন্দ্র করেন স্তবন।
রাবণে মারিয়া রক্ষা কর দেবগণ।।
দেখিয়া ইন্দ্রের ত্রাস হাসে নারায়ণ।
দেবগণে আশ্বাসিয়া বলেন বচন।।
নারায়ণ বলেন শুনহ পুরন্দর।
এ শরীরে আমি না মারিব লঙ্কেশ্বর।।
তোমারে কহি যে ইন্দ্র শুনহ কারণ।
আমা বিনা কারো হাতে না মরে রাবণ।।
ব্রহ্মা বর দিয়াছেন তপে হয়ে তুষ্ট।
বিনা নর বানরেতে না মরিবে দুষ্ট।।
পৃথিবী-মণ্ডলে আমি হব অবতার।
সবংশেতে রাবণেরে করিব সংহার।।
দেবতার হাতে কভু না মরে রাবণ।
যুদ্ধ করি খেদাড়িয়া দেহ দেবগণ।।
বিষ্ণুর আজ্ঞায় ইন্দ্র যায় শীঘ্রগতি।
যুঝিবার সাজিলেন অমরের পতি।।
ত্রিভুবন উপরে ইন্দ্রের অধিকার।
দশ দিক্পাল আসি হৈল আগুসার।।
দক্ষিণে কুবের আর কৈলাস উত্তরে।
যক্ষ রক্ষ লয়ে আইলা যুঝিবারে তরে।।
একবার রাবণের যুদ্ধে পাইল লাজ।
আরবার আইল কুবের যক্ষরাজ।।
যম মৃত্যু সংগ্রামে আইল দুই জন।
একবার যুদ্ধে দোঁহে জিনিল রাবণ।।
ভঙ্গ দিয়া পলাইল রাবণের যুদ্ধে।
আরবার আইল ইন্দ্রের অনুরোধ।।
পাতালেতে বাসুকিরে জিনিল রাবণ।
সেই কোপে যুঝিতে আইল নাগগণ।।
আইল তিরাশি কোটি চিত্রানী শঙ্খিনী।
যাহার বিষের জ্বালে কাঁপয়ে মেদিনী।।
একবার বরুণেরে জিনেছে রাবণ।
সেই কোপে যুঝিবারে আইল বরুণ।।
মরুত অসুর আর আইল বিদ্যাধর।
ভূত প্রেত পিশাচাদি আইল বিস্তর।।
চন্দ্র সূর্য্য আইল নক্ষত্র আদি বার।
রাবণের রণেতে আইল বার বার।।
শনি রাহু কেতু আদি যত গ্রহগণ।
রাত্রি আর ঝড় বৃষ্টি এল সর্ব্বজন।।
সমর দেখিতে আইলেন মহেশ্বরী।
চৌষট্টি যোগিনী তাঁর সঙ্গে সহচরী।।
দেবীর অসীম মূর্ত্তি ষোড়শী বগলা।
ইন্দ্রাণী রুদ্রাণী দেবী ব্রহ্মাণী কমলা।।
নারসিংহী বারাহী ধরেন নানা কলা।
কাত্যায়নী চামুণ্ডা গলেতে মুণ্ডমালা।।
রণে আইলেন দেবী বেশ ভয়ঙ্কর।
আছুক অন্যের কাজ দেবে লাগে ডর।।
রক্তবীজ আদি করি মারিলা কটাক্ষে।
রাবণের তরে রহিলেন অন্তরীক্ষে।।