৩৫. রাবণের কুশদ্বীপে গমন ও মহাপুরুষের সহিত যুদ্ধ

রাবণের কুশদ্বীপে গমন ও মহাপুরুষের সহিত যুদ্ধ

অগস্ত্য বলেন শুন জানকী-বল্লভ।
রাবণের দিগ্বিজয় কহি আমি সব।।
জম্বুদীপ পার হয়ে গেল লঙ্কেশ্বর।
কুশদ্বীপে দেখ এক পুরুষ-প্রবর।।
সুমেরু-পর্ব্বত যেন দেহের আকার।
দেবের দেবতা যেন দেবতার সার।।
বার যোজনের পথ আড়ে পরিসর।
বার শত যোজন শরীর দীর্ঘতর।।
রাবণ বলিছে হে পুরুষ কেবা তুমি।
দেহ রণ সংগ্রাম চাহিয়া আমি ভ্রমি।।
পুরুষের কাছে গিয়া দশানন তর্জ্জে।
অজগর-সর্প যেন সে পুরুষ গর্জ্জে।।
পুরুষ বলেন আমি ঘুচাই বিষাদ।
ততদিন তোর আর সব অপরাধ।।
কুড়ি হাতে রাবণ সে নানা অন্ত্র এড়ে।
পুরুষের গায়ে ঠেকি উখারিয়া পড়ে।।
নর নহে পুরুষ আপনি নারায়ণ।
বাণ ব্যর্থ যায় দেখি চিন্তিত রাবণ।।
পর্ব্বত যুগল যেন ঊরু দুই খণ্ড।
আজানুলম্বিত দুই মহাবাহু দণ্ড।।
অষ্ট বসু আছে সেই পুরুষ-শরীরে।
বহিছে সাগর সপ্ত পুরুষ-উদরে।।
দশদিকপাল আছে পুরুষের পাশে।
ঊনপঞ্চাশৎ বায়ু সহ বায়ু বৈসে।।
হৃৎখণ্ডে পুরুষের ব্রহ্মার বসতি।
নাভিপদ্ম-আসনে বৈসেন হৈমবতী।।
তাঁহার ললাটে সন্ধ্যা গায়ত্রী লিখন।
অদ্ভুত দেখিল যেন মেঘের পতন।।
দেব দৈত্য গন্ধর্ব্ব দানব বিদ্যাধর।
তিন কোটি দেবকন্যা তাঁহার দোসর।।
করণ নক্ষত্র যোগ গ্রহ তিথি বার।
গাত্রে লোমাবলীরূপে আছে অবতার।।
বাসুকির বিষজালে বিশ্ব দগ্ধ করে।
সে বাসুকি পুরুষের মস্তক উপরে।।
রসনায় সরস্বতী সদা স্ফূর্ত্তিমতী।
চন্দ্র সূর্য্য দুই চক্ষু সদা করে দ্যুতি।।
রাবণেরে চারি হাতে ধরেন তখন।
বিশ হাতে রাবণ হইল অচেতন।।
অচেতন হয়ে ভূমে লোটায় রাবণ।
পুরুষ গেলেন পরে পাতাল-ভুবন।।
উলটিয়া চাহিতে লাগিল লঙ্কেশ্বর।
দেখিতে না পায় কিছু হইল কাতর।।
শরীর ঝাড়িয়া শুক সারণেরে পুছে।
পুরুষ আমারে মারি গেল কার কাছে।।
শুক সারণ বলে শুনহ লঙ্কেশ্বর।
তোমারে মারিয়া গেল পাতাল-ভিতর।।
রাবণ পাতালে গেল পুরুষ-উদ্দেশে।
কোটি চতুর্ভুজ দেখে পুরুষের পাশে।।
সকল পাতাল-পুরী করে নিরীক্ষণ।
মায়ারূপী তিনি তাঁরে না চিনে রাবণ।।
ত্রাস পেয়ে মনে মনে চিন্তিত রাবণ।
পুরুষ রাবণে দেখা দেন ততক্ষণ।।
পুরুষ সুবর্ণখাটে হরিষ অন্তরে।
তিন কোটি দেবকন্যা পরিচর্য্যা করে।।
বসিয়াছে দেবকন্যাগণ কুতূহলে।
কামার্ত্ত রাবণ ধরিবারে যায় বলে।।
কোপদৃষ্টে পুরুষ রাবণ পানে চায়।
অগ্নিতে পুড়িয়া ভূমে রাবণ লোটায়।।
উঠ উঠ বলিয়া পুরুষ ডাকে তারে।
উঠিয়া রাবণ সে গায়ের ধূলা ঝাড়ে।।
রাবণ বলিছে তুমি কোন্ অবতার।
পরিচয় দেহ তুমি ভুবনের সার।।
পুরুষ ডাকিয়া বলে শুন রে রাবণ।
তোরে পরিচয় দিব কোন্ প্রয়োজন।।
যোড়হাত করিয়া বলিছে লঙ্কেশ্বর।
ব্রহ্মার প্রসাদে মোর কারে নাহি ডর।।
তুমি হে আমারে মার তবে সে মরণ।
তোমা বিনা অন্য হাতে না মরে রাবণ।।
রাবণের কথা শুনি পুরুষের হাস।
নিতান্ত আমার হাতে হইবে বিনাশ।।
পরিচয় দিলেন পুরুষ রাবণেরে।
রাবণ বিদায় হয়ে তথা হৈতে সরে।।
শ্রীরাম বলেন কহ মুনি মহাশয়।
সে পুরুষ কোন্ জন দেহ পরিচয়।।
অগস্ত্য বলেন তিনি ভুবনের সার।
চতুর্ভুজ তিন কোটি তাঁর পরিবার।।
জিজ্ঞাসা করেন পুনঃ কৌশল্যা-নন্দন।
তথা হৈতে আর কোথা গেল সে রাবণ।।
অগস্ত্য বলেন রাম কর অবধান।
রাবণের পূর্ব্বকথা কহি তব স্থান।।