৩০. রাবণ কর্ত্তৃক বাসুকির পরাজয় ও নিপাতকের সহিত যুদ্ধ

রাবণ কর্ত্তৃক বাসুকির পরাজয় ও নিপাতকের সহিত যুদ্ধ

শ্রীরাম বলেন মুনি জিজ্ঞাসি কারণ।
বিষম শুনিনু আমি যমের তাড়ন।।
পাপীর প্রহার শুনি লাগে চমৎকার।
পাতক করিলে কি না হয় প্রতীকার।।
মুনি বলে রাম ‍তুমি কর অবধান।
তব অবতারেতে পাপীর পরিত্রাণ।।
যেইজন শুদ্ধচিত্তে শুনে রামায়ণ।
যমের সহিত তার নাহি দরশন।।
ইহা বিনা পাপীর নাহিক পরিত্রাণ।
রামনাম শুনিবেক পাপী সাবধান।।
চারি বেদ অধ্যয়নে যত পুণ্য হয়।
একবার রামনামে ততো ফলোদয়।।
শুনিয়া মুনির কথা রামের উল্লাস।
কহ কহ বলি রাম করেন প্রকাশ।।
সেথা হৈতে কোথা গেল দুষ্ট দশানন।
কহ কহ শুনি মুনি অপূর্ব্ব কথন।।
মুনি বলে রাবন জিনিল সর্ব্বদেশ।
পাতাল জিনিতে শেষে করিল প্রবেশ।।
বাসুকির বিষে দগ্ধ হয় ত্রিভুবন।
তাহারে জিনিতে যায় পাতাল-ভুবন।।
চলিল রাবণ রাজা অদ্ভুত সাজনি।
আইল তিরাশী কোটি কালভুজঙ্গিনী।।
এক এক ভুজঙ্গের বিষে বিশ্ব পোড়ে।
নাগিনী তিরাশী কোটি রাবণেরে বেড়ে।।
চারিভিতে বেড়ে সর্প রাবণ ফাঁফর।
রাবণে এড়িয়া সেনাপতি দিল রড়।।
রাবণ মুদগর ঘোর ফেলে চারিভিতে।
পলায় নাগিনী সব না পারে সহিতে।।
বাসুকিরে এড়িয়া পলায় উভরড়ে।
আসিয়া রাবণ রাজা বাসুকিরে বেড়ে।।
বাসুকি করিল বিষ-বাণ অবতার।
ব্রহ্মজাল বাণে রাবণ করিল সংহার।।
বিষজাল মহাবিষ বাসুকিতে এড়ে।
রাবণ সে বিষজাল সহিতে না পারে।।
মায়াধারী রাবণ সে জানে নানা সন্ধি।
বাসুকিরে মহাজাল-বাণে করে বন্দী।।
বাসুকিরে বন্দী করি তার পুরী লোটে।
বিচিত্র আবাস ঘর নাগপুরে বটে।।
বন্দী হয়ে বাসুকি মানিল পরাজয়।
রাবণ তাহার প্রতি দিলেক অভয়।।
শত মুখ সহস্র মস্তক যেই ধরে।
যায় বিষাগ্নিতে সর্ব্ব চরাচর পুড়ে।।
মুখে জ্বলে অগ্নি যার শিরে জ্বলে মণি।
হেন সবে সর্পেরে পাতালে গিয়া জিনি।।
জিনিয়া সর্পের দেশ নামে ভোগবতী।
নিপাতকের রাজ্যেতে চলিল শীঘ্রগতি।।
নিপাতকের রাজ্যে তার কারে নাহি ডর।
পাইয়া ব্রহ্মার বর রাবণ দুর্দ্ধর।।
রাবণ ডাকিয়া বলে নিপাতকের ঠাঁই।
লঙ্কার রাবণ আমি আজি যুদ্ধ চাই।।
নিপাতক রাজা সেই যম-দরশন।
ধাইয়া আইল শীঘ্র করিবারে রণ।।
শেল জাঠি ঝকড়া যে অস্ত্র খরশান।
খাঁড়া আর ডাঙ্গস বিচিত্র ধনুর্ব্বাণ।।
নানা অস্ত্র লইয়া উভয়ে করে রণ।
উভয়ের অস্ত্র গিয়া ছাইল গগন।।
দুই হস্তী রণে যেন দন্ত হানাহানি।
দুই সূর্য্য তেজে যেন ছাইল মেদিনী।।
দুই সিংহ রণে যেন ছাড়ে সিংহনাদ।
দুই জনে যুদ্ধ করে নাহি অবসাদ।।
উভয়ের যুদ্ধেতে হইল মহামার।
সকল পাতালপুরী হৈল অন্ধকার।।
কেহ কারে নাহি পারে দুজনে সোসর।
দুইজনে যুদ্ধ করে মাসেক অন্তর।।
একমাস যুদ্ধ করে কেহ কারে নারে।
দেবগণ লয়ে ব্রহ্মা আইল সত্বরে।।
ব্রহ্মা বলে নিপাতক শুনহ বচন।
তোমারে জিনিতে নাহি পারিবে রাবণ।।
নিপাতকে প্রবোধিয়া বিরিঞ্চি তখন।
রাবণের প্রতি কিছু কহেন বচন।।
রাবণ তোমারে বলি শুনহ বচন।
নিপাতকে জিনিতে না পারিবে কখন।।
মম বরে দুইজন হয়েছ দুর্জ্জয়।
দুই জনে প্রীতি করি থাকহ নির্ভয়।।
কেবা লঙ্ঘিবারে পারে ব্রহ্মার বচন।
দুইজনে প্রীতি করে ছাড়ি অস্ত্রগণ।।
নানা ভোগে রাবণেরে রাখিল সম্মানে।
এক বর্ষ রাবণ রহিল সেই স্থানে।।