২৮. রাবণের যমলোক দর্শন

রাবণের যমলোক দর্শন

কহ কহ বলি রাম করেন প্রকাশ।
আর কিছু কহ ত পুরাণ ইতিহাস।।
সেখানে হারিয়া কোথা গেল সে রাবণ।
কহ কহ শুনি মুনি অপূর্ব্ব কথন।।
মুনি বলে যুদ্ধ চাহি বেড়ায় রাবণ।
নারদের সনে পথে হইল দর্শন।।
নারদেরে প্রণাম করিল দশানন।
আশীর্ব্বাদ করিয়া কহেন তপোধন।।
রাবণ ব্রহ্মার বর পেলে বহু তপে।
দেব দৈত্য স্থির নহে তোমার প্রতাপে।।
রোগে শোকে লোক সব জরায় পীড়িত।
কেহ হাসে কেহ কান্দে কেহ আনন্দিত।।
অবশ্য মরণ-পথ কেহ নাহি দেখি।
বন্ধু বান্দবের শোকে সর্ব্বলোকে দুঃখী।।
যমের মুখে পড়িয়াছে সকল সংসার।
যমেরে এড়িয়া অন্যে মার কি আচার।।
তোমার সংগ্রামে যম পাবে পরাজয়।
যমেরে মারিয়া লোকে করাও নির্ভয়।।
বিষ্ণু দৈত্য মারি লোকে করিলেন সুখী।
লোকের হিতার্থে সর্প খায় গরুড়-পাখী।।
পাইয়া ব্রহ্মার বর জিনিলে ভুবন।
তোমার বাণেতে স্থির নহে দেবগণ।।
যমেরে মারিয়া নাশ লোকের তরাস।
যম হেতু লোক মরে লোকে উপহাস।।
যমেরে মারিয়া বীর কর উপকার।
রাবণ তাঁহার কথা করিল স্বীকার।।
শুনিয়া মুনির কথা বলিছে রাবণ।
স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতাল জিনিব ত্রিভুবন।।
আগে মর্ত্ত্য জিনিব তৎপরেতে পাতাল।
তবে সে জিনিব গিয়া অষ্টলোকপাল।।
ছোট জিনে বড় জিনি এই পরিপাটী।
বড় জিনে ছোট জিনি পৌরুষেতে ঘাটি।।
মুনি বলে যদি যমে না কর দমন।
তবেত রহিবে সর্ব্বলোকের মরণ।।
কুড়ি পাটি দশনে সে দশমুখে হাসে।
চতুর্দ্দিকে কেয়া যেন ফুটে ভাদ্রমাসে।।
ভুবন জিনিব আমি কৌতুকের তরে।
তোমার আজ্ঞায় যাব যমে জিনিবারে।।
মুনির বচনে যায় রাবণ দক্ষিণে।
সে গেলে নারদ মুনি ভাবে মনে মনে।।
হেন জন নাহি যে যমের নহে বশ।
যমেরে জিনিতে যায় বড়ই সাহস।।
যত প্রাণী আছে যম সবার ঈশ্বর।
ভুবন-বৃত্তান্ত যত তাহার গোচর।।
পাইয়া ব্রহ্মার বর দুর্জ্জয় রাবণ।
শমনের সহ যুদ্ধে জিনে কোন্ জন।।
উভয়ের কে জিনিবে জানিতে না পারি।
নারদ দেখিতে যুদ্ধ চলে যমপুরী।।
অবিবাদে বিসম্বাদ ঘটায় নারদ।
নারদ যাহাতে চায় ঘটায় আপদ।।
হইলে শনির দৃষ্টি পুড়ে সর্ব্বলোকে।
রাবণে ঠেকায়ে গেল যমের সম্মুখে।।
না যাইতে রাবন মুনির আগুসার।
সেখানে করেন যম ধর্ম্মের বিচার।।
নারদে দেখিয়া যম উঠিয়া সম্ভ্রমে।
জিজ্ঞাসেন প্রণাম করিয়া ভক্তিক্রমে।।
ত্রিদিব ছাড়িয়া কেন হেথা আগমন।
আমার নিকটে তব কোন্ প্রয়োজন।।
নারদ বলেন যম ছিলে নিরুদ্বেগে।
তোমা সহ যুঝিতে রাবণ আসে বেগে।।
দণ্ড হস্তে সমর করিও দণ্ডধর।
দেখিবারে আইলাম দোঁহার সমর।।
নারদের বাক্যে যম চাহে বহুদূর।
রাক্ষস-কটক চাপ দেখিল প্রচুর।।
চড়িয়া পুষ্পক-রথে আইসে রাবণ।
বহু সৈন্য প্রবেশিল যমের ভুবন।।
আগে থানা সান্ধাইল তার পূর্ব্বদ্বার।
দেখ তথা সর্ব্বলোক ধর্ম্ম-অবতার।।
দেব-পিতৃভক্ত সত্যবাদী যেই জন।
তাহার সম্পদ দেখি বিস্মিত রাবণ।।
গো-দান করিয়া যে তুষিয়াছে ব্রাহ্মণ।
ঘৃত দুগ্ধে দেখে তার অপূর্ব্ব ভোজন।।
দুঃখীকে দেখিয়া যে করয়ে অন্নদান।
সুবর্ণের থালাতে সে করে সুধাপান।।
বস্ত্রহীন বস্ত্র দেয় পিপাসায় জল।
রাবণ তাহার দেখে সম্পদ সকল।।
ব্রাহ্মণেরে ভূমিদান করে যেই জন।
যমপুরে দেখে তারে রাজ্যের ভাজন।।
অন্যকে তুষিল যে বলিয়া প্রিয়বাণী।
তার সুখ দেখিয়া রাবণ অভিমানী।।
যে করে অতিথি-সেবা দিয়া বাসাঘর।
সোণার আবাস তার দেখে লঙ্কেশ্বর।।
স্বর্ণদান করিয়া যে তুষেছে ব্রাহ্মণ।
স্বর্ণ-খাটে শুয়ে আছে দেখিল রাবণ।।
ব্রাহ্মণের সেবা যে করেছে একমনে।
তাহার সম্পদ দেখি রাবণে বাখানে।।
যে উত্তম পাত্রে করিয়াছে কন্যাদান।
সবা হৈতে দেখে রাবণ তাহার সম্মান।।
যে বিষ্ণু-কীর্ত্তন করিয়াছে নিরন্তর।
তাহার সম্পদ দেখি হৃষ্ট লঙ্কেশ্বর।।
চতুর্ভুজ যম তারে করিয়া স্তবন।
পাদ্য অর্ঘ্য দিয়া তারে দিলেন আসন।।
বৈকুণ্ঠে না যায় সেই যায় স্বর্গবাস।
দিব্য-দেহ ধরি তারে দিলেন প্রকাশ।।
চতুর্ভুজ-রূপে তারে সম্ভাষ করিল।
নানাবিধ প্রকারেতে তাহারে তুষিল।।
সে লোক পুণ্যের তেজে এত সুখ করে।
আপনা ভাবিয়া দশানন পুড়ে মরে।।
দেখিয়া লোকের সুখ হৃষ্ট লঙ্কেশ্বর।
পূর্ব্ব দ্বার এড়ি গেল পশ্চিম দুয়ার।।
বহু তপ পুণ্য করিয়াছে যেইজন।
তাহার সম্পদ দেখি হরিষ রাবণ।।
রাবণ উত্তর দ্বারে করিল গমন।
তথা পুণ্যবান লোক করে দরশন।।
আগম পুরাণ শুনিয়াছে যেই রাজা।
পুত্র হেন পালিয়াছে যেবা নিজ প্রজা।।
পরহিংসা পরদার না করে যে জন।
মহামহৈশ্বর্য্য তার দেখিল রাবণ।।
পূর্ব্ব আর পশ্চিম দুয়ার যে উত্তর।
তিন দ্বারে ধার্ম্মিক লোক দেখে ত বিস্তর।।
যমের দক্ষিণ দ্বার ঘোর অন্ধকার।
রাত্রিদিন নাহি তথা সব একাকার।।
যত যত পাপী লোক সেই দ্বারে থাকে।
একত্র থাকিয়া কেহ কারে নাহি দেখে।।
চৌরাশী সহস্র কুণ্ড দক্ষিণ দুয়ারে।
নরকে ডুবায়ে সব যমদূতে মারে।।
যমের প্রহারে লোক হয়েছে কাতর।
কলরব শুনি তথা গেল লঙ্কেশ্বর।।
প্রবেশিল দক্ষিণ দ্বারেতে দশানন।
প্রথম প্রহার তথা দেখিছে তখন।।
যত যত পাপ করিয়াছে যত জন।
যমদূতে প্রহারিছে যাহার যেমন।।
যেই যত পরদার করেছে কৌতুকে।
সেই কুম্ভীপাকে পড়ি ডুবিছে নরকে।।
সুতপ্ত তৈলের কুণ্ড অগ্নির উথাল।
তাহাতে ধরিয়া ফেলে তার গাত্র ছাল।।
অগম্যা গমন করে, যে হরে ব্রাহ্মনী।
তার প্রহারের কথা শুনহ কাহিনী।।
লোহার ডাঙ্গস দূত মারে গোটা গোটা।
কশিয়া ডাঙ্গস মারে তায় লৌহ কাঁটা।।
সর্ব্বাঙ্গ ছেদনেতে তাহার পচে মাংস।
অর্ব্বুদ অর্ব্বুদ পোকা খুলে যায় অংশ।।
হাতে গলে বান্ধে তার দিয়া চর্ম্মদড়ি।
মাথার উপরে তুলি মারে লৌহ বাড়ি।।
মস্তক ফাটিয়া যায় রক্ত পড়ে ধারে।
পরিত্রাহি ডাকে তারা দারুণ প্রহারে।।
গদাঘাতে মাথা চিরে রক্ত পড়ে স্রোতে।
বিষম প্রহার তারে করে যমদূতে।।
নরকে ধরিয়া ফেলে পাপী সকলেরে।
বিষ্ঠা খেয়ে পাপীলোকে ফাঁফরিয়া মরে।।
গৃধিনী শকুনি মাংস টানে চারিভিতে।
উপাড়ে সাঁড়াসি দিয়া চক্ষু যমদূতে।।
হস্ত পদ নাসা কর্ণ নয়ন জিহ্বায়।
লোহার মুগদর মারে অসহ্য সে দায়।।
পাপ পুণ্যভাগী হয় সে ইন্দ্রিয়গণ।
বিষম প্রহারে ভুঞ্জে যমের তাড়ন।।
পরস্ত্রীকে যে জন দিয়াছে আলিঙ্গন।
তাহার বিষম শুন যমের তাড়ন।।
লৌহময়ী এক স্ত্রী আনিয়া যমদূতে।
অগ্নি মধ্যে তাহাকে তাতায় ভালমতে।।
সেই লোহা জ্বলে যেন জ্বলন্ত অনল।
পাপী সব তাহাতে ধরিয়া দেয় কোল।।
গাত্র-মাংস জ্বলে পরিত্রাহি ডাকে পাপী।
তাহা দেখি রাবণ হইল অতি তাপী।।
পরিত্রাহি ডাকে পাপী দারুণ প্রহারে।
জ্বালায় জ্বলিত পাপী ধড়ফড় করে।।
পরদার করিয়াছে রাবণ বিস্তর।
বিষম প্রহার দেখি চিন্তিত অন্তর।।
পরস্ত্রী দর্শন যেই করে এক চিতে।
দুই চক্ষু তাহার উপাড়ে যমদূতে।।
করিছে বিষম যমের দূত তাড়না।
হরিলে পরের নারী এতেক যন্ত্রণা।।
পরস্ত্রী হরিয়া যেবা করেছে রমণ।
চিরকালাবধি ভোগে নরকে সে জন।।
তাহাতে সন্ততি হয় বাড়ে পরিবার।
কোটি কল্পে না হয় সে নরকে উদ্ধার।।
তথাপি নরের মনে নাহি জ্ঞানোদয়।
পরধন পরদারে সদা মন লয়।।
শরণ লইলে তার যে হরে পরাণ।
করাতে চিরিয়া তারে করে খান খান।।
বিপরীত পিপাসায় তালু তার শোষে।
পানীয় চাহিলে যমদূতে মারে রোষে।।
ব্রাহ্মণ দেবের বস্তু হরে যেই জন।
তার প্রহারের কথা করি নিবেদন।।
হস্ত পা বান্ধে তার দিয়া চর্ম্মদড়ি।
মাথার উপরে মারে ডাঙ্গসের বাড়ি।।
বুকে শূল মারে কেহ চক্ষু টানি ধরে।
পরিত্রাহি ডাকে পাপী দারুণ প্রহারে।।
দেবতা স্থাপিয়া যেবা না করে পূজন।
তাহার বিষম শুন যমের তাড়ন।।
হাত পা বান্ধিয়া ফেলে দিয়া চর্ম্মদড়ি।
তাহার উপরে মারে দোহাতিয়া বাড়ি।।
ঘাড়ে মুড়ে বান্ধি ফেলে অগ্নির ভিতর।
বিষম প্রহারে ভুঞ্জে সহস্র বৎসর।।
পরধন যে জন করিল ডাকা চুরি।
ক্ষুরধারে কাটে তারে খণ্ড খণ্ড করি।।
পরহিংসা পরদ্বেষ করেছে যে জন।
তার প্রহারের কথা অকথ্য কথন।।
মিথ্যা শাপ দেয় আর বলে মিথ্যা বাণী।
তার প্রহারের কত কহিব কাহিনী।
সুতপ্ত সাঁড়াসি দিয়া জিহ্বা লয় কাড়ি।।
মাথার উপরে মারে ডাঙ্গসের বাড়ি।।
যে হরে গচ্ছিত আর হরে স্থাপ্যধন।
নরকে ডুবায় তারে যমদূতগণ।।
ব্রাহ্মণেরে মন্দ বলে মারে জ্যেষ্ঠ ভাই।
মুষলে তারে মারে তার রক্ষা নাই।।
পরহিংসা করে, বলে অসত্য বচন।
বিষম তাহার যম যমের তাড়ন।।
অপাত্রেতে কন্যা দেয় আরো লয় কড়ি।
তাহার মাথায় দেয় মাংসের চুপড়ি।।
মাংস লহ লহ বলি সদা ডাক ছাড়ে।
মাংসের রসানি তার বুক বয়ে পড়ে।।
মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় যেই সভামধ্যে বসি।
তার জিহ্বা টানে দিয়া জ্বলন্ত সাঁড়াসি।।
তার পূর্ব্বপুরুষেরা ভুঞ্জে সেই পাপ।
চিরকাল পাপ ভুঞ্জে পায় বড় তাপ।।
অতিথি পাইয়া যেই না করে জিজ্ঞাসা।
অপার দুর্গতি তার নরকেতে বাসা।।
একজন দান করে অন্যে হয় হাতা।
তার বুকে দেয় যম জগদ্দল-জাঁতা।।
সীমা হরে যেই জন পোড়ায় পর-ঘর।
বিষম প্রহার করে যমের কিঙ্কর।।
উভয়ের ন্যায়ে এক পক্ষে পক্ষপাতী।
কুম্ভীপাকে ফেলে তারে করিয়া আঘাতী।।
হারাণে জিনিয় যেই হইয়া সপক্ষ।
যমদূতে মারে তারে কহিতে অশক্য।।
চুরি ডাকা করে যে, না করে লোকহিত।
যমদূতে তাহারে প্রহারে বিপরীত।।
লোকে পীড়া দিয়া যে তুষিয়াছে ঈশ্বর।
পায় সে কুক্কুর-জন্ম সহস্র বৎসর।।
লোক রক্ষা না করি যে রাজা করে নাশ।
হইয়া শৃগাল-জন্ম খায় মৃত-মাস।।
না চিন্তিয়া রাজ-হিত চিন্তে প্রজা-হিত।
বিষম প্রহার তারে হয় যে উচিত।।
ব্রহ্মহত্যা সুরাপান করে যেই জন।
বিষম যাতনা ভোগ করে অনুক্ষণ।।
গুরুপত্নী হরণেতে যত পাপ হয়।
তাহার উচিত দণ্ড শরীরে না সয়।।
মরণে মরণ নাহি দুঃখ মাত্র সার।
কর্ম্মভোগ ভুঞ্জে লোক না দেখে নিস্তার।।
ব্রাহ্মণের শূদ্রাণী গমন যে প্রমাদ।
সে সবার পাপেতে স্বধর্ম্ম হয় বাদ।।
চণ্ডাল-জনম হয় শূদ্রাণী-গমনে।
সর্ব্ব কর্ম্ম নষ্ট হয় তার দরশনে।।
দেবকার্য্য পিতৃকার্য্য করে শুদ্ধমতি।
কর্ম্ম নষ্ট হয় যদি দেখে শূদ্রা প্রতি।।
পাতকী জনের সহ যে জন সম্ভাষে।
ধার্ম্মিকের ধর্ম্মলোপ হয় সেই দোষে।।
রাজা হয়ে প্রজাগণে না করে পালন।
পরলোকে তাহার নরক অখণ্ডন।।
পুত্র পালনেতে যদি রাজা পালে প্রজা।
কোটিকল্প স্বর্গসুখ ভুঞ্জে সেই রাজা।।
অর্থের লোভেতে হয় দেবল ব্রাহ্মণ।
শুদ্ধমনে যে জন সে না করে পূজন।।
যেবা হরে দেবস্ব বা করে দুরাচার।
দেবলিয়া ব্রাহ্মণের নাহিক নিস্তার।।
হাতে করি ঘৃত দেয় নৈবেদ্য উপরে।
সেই ঘৃত উঠে তার নখের ভিতরে।।
সে ঘৃত অন্নের তাপে উনাইয়া পড়ে।
অন্ন সহ ঘৃত যায় শরীর ভিতরে।।
শাস্ত্রে আছে সঘৃত নৈবেদ্য করে পূজা।
সে পাপে ব্রাহ্মণ হয় কালিঞ্জরের রাজা।।
এ সকল কথা শুনি হৈল চমৎকার।
দেবল ব্রাহ্মণের যে নাহিক নিস্তার।।
যেই শূদ্র হইয়া হরিয়াছে ব্রাহ্মণী।
তাহার বিষম রোল বড় ডাক শুনি।।
লক্ষ লক্ষ সাঁড়াসিতে গায়ের মাংস টানে।
খুলে খায় গাত্র-মাংস সহস্র সঞ্চানে।।
ডাঙ্গসের বাড়ি মারি করে খান খান।
কোটি কল্প পাপ ভুঞ্জে নাহিক এড়ান।।
যে জন করিয়া ঋণ না করে শোধন।
তার পিতৃলোকে ভুঞ্জে যমের তাড়ন।।
বিঘত প্রমাণ পোকা যে বিষ্ঠার কুণ্ডে।
তথির উপরে ফেলে ধরি তার মুণ্ডে।।
প্রতপ্ত তৈলের কুণ্ড অগ্নির উথাল।
তাহার উপরে ফেলে যায় গাত্র ছাল।।
অগ্নিমধ্যে সাঁড়াসি তাতায় ভালমতে।
তাহা দিয়া গাত্র-মাংস কাটে যমদূতে।।
ইত্যাদি নরক ভোগ করে বহুবার।
ব্রহ্মস্বের পাপে তার নাহিক নিস্তার।।
পরহিংসা করে যেবা সুজনেরে নিন্দে।
চামদড়ি দিয়া তারে যমদূতে বান্ধে।।
গলায় বঁড়সি দিয়া করে টানাটানি।
খাণ্ডা দিয়া তাহার মাথায় হানাহানি।।
ছোট কাঁটা দিয়া তারে বড় কাঁটায় লয়।
গলায় গলগণ্ড তার বড়ই সংশয়।।
দেখিল রাবণ পুরুষের যে যন্ত্রণা।
ইহা হইতে বাইশ গুণ নারীর যাতনা।।
ছোট করুক বড় করুক যত করে পাপ।
পাপানুসারেতে ভুঞ্জে শমনের তাপ।।