২২. বেদবতীর উপাখ্যান

বেদবতীর উপাখ্যান

অগস্ত্যের কথা শুনি শ্রীরামের হাস।
কহ কহ মুনিবর করিয়া প্রকাশ।।
কৈলাস এড়িয়া কোথা গেল দশানন।
কহ দেখি শুনি মুনি পুরাণ কথন।।
অগস্ত্য বলেন রাম কর অবধান।
কহি কিছু রাবণের আরো উপাখ্যান।।
বেদবতী নামে কন্যা পরম শোভনা।
তপস্যা করেন বনে হিমাংশু বদনা।।
পবিত্র-আকৃতি তাঁর পবিত্র প্রকৃতি।
শুদ্ধসত্ত্বা শুদ্ধমতি সূর্য্য সম জ্যেতি।।
দৈবযোগে রাবণ তথায় উপনীত।
কন্যাকে দেখিয়া দুষ্ট হইল মোহিত।।
অতিথি-আচারে কন্যা দিলেন আসন।
কামে মুগ্ধ দশানন জিজ্ঞাসে তখন।।
কে তুমি কাহার কন্যা, কাহার কামিনী।
কি জন্যে এ মহারণ্যে থাক একাকিনী।।
এ রূপ যৌবন ধর না কর বিলাস।
কি হেতু কঠোর তপ কর উপবাস।।
কন্যা বলে মোর কথা কহিতে বিস্তর।
যেহেতু তপস্যা করি শুন লঙ্কেশ্বর।।
কুশধ্বজ পিতা, পিতামহ বৃহস্পতি।
সে কুশধ্বজের কন্যা আমি বেদবতী।।
পিতা বেদ পড়িতেছিলেন যেইক্ষণে।
জন্মিলাম সেইক্ষণে তাঁহার বদনে।।
অযোনিসম্ভবা নাম থুইল বেদবতী।
পিতার অধিক স্নেহ হৈল আমা প্রতি।।
দিবেন উত্তম পাত্রে এই তাঁর পণ।
কে আছে উত্তম পাত্র বিনা নারায়ণ।।
অতএব বিষ্ণুসহ বিবাহ আমার।
দিবেন এ বাঞ্ছা ছিল নিতান্ত পিতার।।
ইতিমধ্যে শুম্ভ নামে দৈত্যহস্তে পিতা।
মরিলেন, মাতা হইলেন অনুমৃতা।।
আজন্ম তপস্যা করি এই অভিলাষে।
কতদিনে পাইব সে শ্যাম পীতবাসে।।
শুনিয়া কন্যার কথা দশানন হাসে।
রথ হৈতে নামিয়া কহিল মৃদুভাষে।।
ত্রৈলোক্য জিনিয়া রূপ গুণ তুমি ধর।
সুন্দরি কেন সে বৃদ্ধ বর ইচ্ছা কর।।
কুটিল সে কালোরূপ কোথা নারায়ণ।
নাগাল পাইপে তার বধিব জীবন।।
কন্যা বলে হেন বাক্য না বল বদনে।
কৃষ্ণ বিনা কেবা আছে এ তিন ভুবনে।।
শুনিয়া কন্যার কথা দুষ্ট দশানন।
ধরিয়া কন্যার কেশে করে অপমান।।
দৌরাত্ম্য করিয়া শেষে ছাড়িল রাবণ।
কন্যা বলে অপমান কর কি কারণ।।
প্রবেশ করিব আমি জ্বলন্ত আগুনে।
অপবিত্র শরীর রাখিব কি কারণে।।
পাইয়া ব্রহ্মার বর হলি পাপকারী।
অল্পপ্রাণী নারী হই কি করিতে পারি।।
তপস্যার ফলে যদি তোরে নষ্ট করি।
বিফল হইবে এত তপস্যা আমারি।।
অগ্নিকুণ্ড জ্বালিল আনিয়া কাষ্ঠরাশি।
প্রবেশ করিতে যায় সে কন্যা রূপসী।।
অগ্নিকে প্রার্থনা করে করি বহু সেবা।
শ্রেষ্ঠকুলে জন্মি যেন অযোনিসম্ভবা।।
নারায়ণ স্বামী হবে জন্ম-জন্মান্তরে।
মোর লাগি রাবণ সবংশে যেন মরে।।
রাবণ লাগিয়া মরি সর্ব্বলোকে দুঃখী।
মোর লাগি রাবণ মরিবে লোক সাক্ষী।।
প্রবেশ করিল কন্যা মহা বৈশ্বানরে।
পুষ্পবৃষ্টি আকাশেতে দেবগণ করে।।
জনক-রাজার কন্যা নাম ধরে সীতা।
পতিব্রতা অবতীর্ণা তিনি শুভান্বিতা।।
পতিব্রতা শাপ কভু নহে অন্য মত।
সীতা লাগি মরিল রাবণ আদি যত।।
ত্রেতাযুগে রঘুনাথ তুমি তার পতি।
অযোনিসম্ভবা সীতা সেই বেদবতী।।
অহঙ্কারে দশানন সবংশেতে মজে।
অধর্ম্মী হইলে সুখ নাহি কোন কাজে।।