১৮. রাবণের কুবের-বিজয়ার্থ যাত্রা

রাবণের কুবের-বিজয়ার্থ যাত্রা

কুবের শুনিল যত রাবণের কর্ম্ম।
দূত পাঠায়া দিল জানাইতে ধর্ম্ম।।
কুবেরের দূত রাবণে নোঙায় মাথা।
যোড়হাত করি কহে কুবেরের কথা।।
দূত বলে মহারাজ তব হিত চাই।
তোমারে বুঝাতে পাঠাইল তব ভাই।।
বিশ্বশ্রবার পুত্র তুমি কুলে অবতার।
তোমার করিতে হয় উত্তম আচার।।
দেবতার হিংসা কর দেবগণে দুঃখী।
ঋষি তপস্বীর হিংসা কোন শাস্ত্রে লিখি।।
দেবতা ঋষির কোপ বিপরীত ঘটে।
সাধুজনে হিংসা করি পড়েত সঙ্কটে।।
দেবতার শাপে দুঃখ পায় নিরন্তর।
আমার ঠাকুর যক্ষরাজ ধনেশ্বর।।
করিলেন উগ্র তপ মলয়-শিখরে।
সর্ব্বদা বিরাজে তথা পার্ব্বতী-শঙ্করে।।
ছদ্মরূপে ভ্রমেন চিনিতে কেহ নারে।
দুইজনে করে কেলি মলয়-শিখরে।।
কেলি-ক্রীড়া কৌতুকে ছিলেন দুই জনে।
কুবের চাহিয়াছিল বামচক্ষু কোণে।।
কুপিলেন ভবানী কুবের দরশনে।
কুবেরের বামচক্ষু পুড়ে সেইক্ষণে।।
এক চক্ষু পুড়ে গেল শুন লঙ্কেশ্বর।
এক চক্ষে তপ করে সহস্র বৎসর।।
তথাপি না ঘুচিল দেবীর কোপানল।
কুবেরের আঁখি আছে হইয়া পিঙ্গল।।
দেবতার শাপ কভু না যায় খণ্ডন।
দেবতাগণেরে হিংসা কর কি কারণ।।
তব অমঙ্গল দেব চিন্তিবে সদাই।
তোমা বুঝাইতে পাঠাইল তব ভাই।।
এত যদি কহে দূত রাবণ-গোচরে।
শুনিয়া রাবণ রাজা কুপিল অন্তরে।।
আমাকে পাঠায় দূত আপনা না জানে।
তোরে কাটি আজি, তারে বধিব জীবনে।।
জ্যেষ্ঠ ভাই রলে তাই এতদিন সহি।
নিকট মরণ তার শুন তোরে কহি।।
কোন্ অহঙ্কারে এত কহিল কুকথা।
হাতে খাণ্ডা করিয়া দূতের কাটে মাথা।।
দূতে কাটি সাজিল কুবেরে কাটিবারে।
দিগ্বিজয় করিতে সাজিল লঙ্কেশ্বরে।।
ত্রিভুবন জিনিতে সাজিল দশানন।
রাবণের সাজনে কাঁপিল দেবগণ।।
শত অক্ষৌহিণী সাজে মুখ্য-সেনাপতি।
সাজিয়া রাবণ-সঙ্গে চলে শীঘ্রগতি।।
শত অক্ষৌহিণী নিল জাঠি আর ঝগড়া।
তিন কোটি সাজিয়া চলিল তাজা ঘোড়।।
তিন কোটি বৃন্দ রথ করিল সাজন।
মাণিক্যের চাকা রথ সোনার গঠন।।
রাহুত মাহুত হস্তী সাজিল অপার।
আছুক অন্যের কাজ দেবে চমৎকার।।
সেনাপতিগণ নড়ে বড় বড় বীর।
যার বাণ-আঘাতে পর্ব্বত হয় চির।।
অকম্পন প্রহস্ত চলে ষট্ ও নিষট।
শোণিতাক্ষ বিরূপাক্ষ রণেতে উৎকট।।
ধূম্রাক্ষ ভাস্কর আদি তপন পনস।
বড় বড় বীর সাজে অনেক রাক্ষস।।
মারীচ রাক্ষস চলে নানা মায়া ধরে।
যত যত বীর ছিল লঙ্কার ভিতরে।।
রাক্ষস মহাপাত্র চলে খর ও দূষণ।
বাঁকামুখ অষ্টবক্র ঘোর দরশন।।
শুক সারণ শার্দ্দূল চলিল জাম্বুমালী।
বজ্রদন্ত বিদ্যুৎজিহ্ব বলে মহাবলী।।
মহাপাশ মহোদর দুই সহোদর।
মকরাক্ষ চলিল যে মহা ধনুর্দ্ধর।।
ত্রিভুবন জিনিতে রাবণ রাজা সাজে।
ঢাক ঢোল আদি করি নানা বাদ্য বাজে।।
লঙ্কায় রহিল মেঘনাদ বিভীষণ।
কুম্ভকর্ণ রহিল নিদ্রায় অচেতন।।
খাণ্ডা খরশান টাঙ্গি অতি ভয়ঙ্কর।
নানা অস্ত্রে সাজিয়া চলিল লঙ্কেশ্বর।।
নানা আভরণ পরি দশানন সাজে।
নাহিক এমন রূপ ত্রিভুবন মাঝে।।