১৬. রাবণ কর্ত্তৃক কুবেরের নিকট হইতে লঙ্কারাজ্য গ্রহণ

রাবণ কর্ত্তৃক কুবেরের নিকট হইতে লঙ্কারাজ্য গ্রহণ

সুমালী শুনিয়া তাহা অতি হরষিত।
পাতাল হইতে তারা উঠিল ত্বরিত।।
সুমালী রাক্ষস উঠে লয়ে পরিজন।
মহোদর মারীচ প্রহস্ত অকম্পন।।
নিজ পরিবারে লয়ে উঠে মাল্যবান।
বজ্রমুষ্টি বিরূপাক্ষ ধূম্র খরশান।।
ছিল মাল্যবানের তনয় চারি জন।
ধার্ম্মিক সে চারিজনে নিল বিভীষণ।।
মাল্যবান কোল দিয়া বলে দশাননে।
পুনঃ উঠিলাম সবে তোমার কল্যাণে।।
যে কালে তোমার বাপে কন্যা দিনু দান।
সেই দিন ভাবি দুঃখে পাব পরিত্রাণ।।
বিষ্ণুভয়ে হয়েছিনু পাতাল-নিবাসী।
তোমরা ভরসা পেয়ে পৃথিবীতে আসি।।
রাক্ষসের রাজ্য সে কনক-লঙ্কাপুরী।
হয়েছে সে লঙ্কায় কুবের অধিকার।।
কুবের নিকটে দূত পাঠাও একজন।
লঙ্কাপুরী ছেড়ে যাত নহে দিক রণ।।
কষ্ট করি এরূপ রহিব কতকাল।
লঙ্কাপুরী কেড়ে লয়ে কর ঠাকুরাল।।
রাবণ বলে মাতামহ কি কহ আপনি।
জ্যেষ্ঠ ভাই মহাগুরু পিতৃতুল্য জানি।।
জ্যেষ্ঠ সঙ্গে বিসম্বাদ কোন্ জন করে।
হেনবাক্য না বলিহ সভার ভিতরে।।
রাবণ এতেক যদি কহে মাল্যবানে।
প্রহস্ত ডাকিয়া বলে সভা-বিদ্যমানে।।
কুবেরের মান্য রাখ জ্ঞাতিগণ দুঃখী।
ত্রিভুবনে কে আছে ভ্রাতার সুখে সুখী।।
দেখ দেব দানব গন্ধর্ব্ব দৈত্যগণ।
ভ্রাতাকে মারিয়া রাজ্য লয় কতজন।।
তাহার প্রমাণ দেখ কহি তব স্থান।
মন দিয়া শুন তবে তাহার বিধান।।
বৈমাত্রেয় ভায়ে মারি দেব পুরন্দর।
ভাই মারি স্বর্গেতে হইল দণ্ডধর।।
গরুড়ের ভাই অহি সর্ব্বলোক জানে।
গরুড় পাইলে খায় হেন সর্পগণে।।
সর্ব্বজন ভাই মেরে করে ঠাকুরাল।
ভায়ের গৌরব কে রেখেছে কত কাল।।
গুরু বলি মান কিন্তু জ্ঞাতি মনোদুঃখ।
কুবের প্রভুত্ব করে তোমার কি সুখ।।
পূর্ব্বে জননীকে তুমি দিয়াছ আশ্বাস।
জিনিয়া লইব লঙ্কা কুবেরের পাশ।।
ভুলিলে সে সব কথা তুমি কি কারণ।
ইহা শুনি উদযোগী হইল দশানন।।
তখনি ডাকিয়া দূতে কহিছে রাবণ।
দূত তুমি যাহ শীঘ্র কহ বিবরণ।।
রাবণের দূত গিয়া নোঙাইয়া মাথা।
যোড়হাতে কুবেরের স্থানে কহে কথা।।
রাক্ষসের রাজ্য এই কনক-লঙ্কাপুরী।
এ স্থানে কেমনে রবে ধন-অধিকারী।।
আপন গৌরব রাখ রাবণ-সম্মান।
ছাড়িয়া কনক-লঙ্কা যাহ অন্য স্থান।।
দুরন্ত রাক্ষস-জাতি বুদ্ধি বিপরীত।
লঙ্কা দিয়া রাবণের করহ পিরীত।।
মাতামহ-রাজ্য তাই অধিকার করে।
কি সম্পর্কে আছ তুমি লঙ্কার ভিতরে।।
রাবণ-গৌরব রাখ শুন ধনেশ্বর।
ছাড়িয়া কনক-লঙ্কা যাও স্থানান্তর।।
রাবণের দূত যদি এতেক কহিল।
কুবের পিতার কাছে সব জানাইল।।
বিশ্বশ্রবা বলেন, শুন ধন-অধিকারী।
দুরন্ত রাক্ষস আমি কি করিতে পারি।।
ব্রহ্মার বরেতে নাহি মানে বাপ ভাই।
থাক গিয়া স্থানান্তরে দ্বন্দ্বে কাজ নাই।।
কৈলাস-পর্ব্বতে যাহ যথা ভাগীরথী।
সেইখানে গিয়া তুমি করহ বসতি।।
বিশ্বশ্রবার বচনে কুবের পুলকিত।
রাবণের দূত গেল কহিতে ত্বরিত।।
কুবের পাঠায় দূতে করিয়া মিনতি।
মম আশীর্ব্বাদ বল রাবণের প্রতি।।
ছাড়িয়া কনক-লঙ্কা যাব স্থানান্তর।
কিন্তু নাই অংশা অংশী ধনের উপর।।
ত্রিশকোটি যক্ষে বহে কুবেরের ধন।
লঙ্কা ছেড়ে কৈলাসেতে করিল গমন।।
লঙ্কা পেয়ে রাক্ষসের পরম পীরিত।
লঙ্কাতে করয়ে রাজ্য রাক্ষস দুর্ম্মতি।।
সুমন্ত্রণা করিয়া সকল নিশাচরে।
রাবণে করিল রাজা লঙ্কার ভিতরে।।