১৪. শিবনিন্দায় সতীর দেহত্যাগ

সভাজন শুন : জামাতার গুণ : বয়সে বাপের বড়।
কোন গুণ নাই : যেথা সেথা ঠাঁই : সিদ্ধিতে নিপূণ দড়।।
মান অপমান : সুস্থান কুস্থান : অজ্ঞান জ্ঞান সমান।
নাহি জানে ধর্ম্ম : নাহি মানে কর্ম্ম : চন্দনে ভস্ম জ্ঞেয়ান।।
যবনে ব্রাহ্মণে : কুক্কুরে আপনে : শ্মশানে সরগে সম।
গরল খাইল : তবু না মরিল : ভাঙ্গড়ের নাহি যম।।
সুখে দুঃখ জানে : দুঃখে সুখ মানে : পরলোকে নাহি ভয়।
কি জাতি কে জানে : কারে নাহি মানে : সদা কদাচারময়।।
কহিতে ব্রাহ্মণ : কি আছে লক্ষণ : বেদাচারবহিষ্কৃত।
ক্ষত্রিয় কখন : না হয় ঘটন : জটা ভস্ম আদি ধৃত।।
যদি বৈশ্য হয় : চাষী কেন নয় : নাহি কোন ব্যবসায়।
শূদ্র বলে কেবা : দ্বিজ দেয় সেবা : নাগের পৈতা গলায়।।
গৃহী বলা দায় : ভিক্ষা মাগি খায় : না করে অতিথি সেবা।
সতী ঝি আমার : গৃহিণী তাহার : সন্ন্যাসী বলিবে কেবা।।
বনস্থ বলিতে : নাহি লয় চিতে : কৈলাস নামেতে ঘর।
ডাকিনীবিহারী : নহে ব্রহ্মচারী : এ কি মহাপাপ হর।।
সতী ঝি আমার : বিদ্যুৎ আকার : বাতুলের হৈল জায়া।
আমি অভাজন : পরম ভাজন : ঘটক নারদ ভায়া।।
আহা মরি সতী : কি দেখি দুর্গতি : অন্ন বিনা হৈলা কালী।
তোমার কপাল : পর বাঘছাল : আমার রহিল গালি।।
শিবনিন্দা শুনি : রোষে যত মুনি : দধীচি অগ্যস্ত আদি।
দক্ষে গালি দিয়া : চলিলা উঠিয়া : শ্রবণে কর আচ্ছাদি।।
তবু পাপ দক্ষ : নিন্দি কত লক্ষ : সতী সম্বোধিয়া কহে।
তার মৃত্যু নাই : তোর নাহি ঠাঁই : আমার মরণ নহে।।
মোর কন্যা হয়ে : প্রেতসঙ্গে রয়ে : ছি ছি এ কি দশা তোর।
আমি মহারাজ : তোর এই সাজ : মাথা খেতে আলি মোর।।
বিধবা যখন : হইবি তখন : অন্নবস্ত্র তোরে দিব।
সে পাপ থাকিতে : নারিব রাখিতে : তার মুখ না দেখিব।।
শিবনিন্দা শুনি : মহাদুঃখ গণি : কহিতে লাগিল সতী।
শিবনিন্দা কর : কি শকতি ধর : কেন বাপা হেন মতি।।
যারে কালে ধরে : সেই নিন্দে হরে : কি কহিব তুমি বাপ।
তব অঙ্গজনু : ত্যজিব এ তনু : তবে যাবে মোর পাপ।।
তিনি মৃত্যুঞ্জয় : গালিতে কি হয় : মোরে যেতে আছে ঠাঁই।
কর্ম্মমত ফল : যজ্ঞ যাবে তল : তোর রক্ষা আর নাই।।
যে মুখ পামর : নিন্দিলে শঙ্কর : সে মুখ হবে ছাগল।
এতেক কহিয়া : শরীর ছাড়িয়া : উত্তরিলা হিমাচল।।
হিমগিরিপতি : ভাগ্যবান্ অতি : মেনকা তাঁহার জায়া।
পূর্ব্বতপোবলে : তাঁহার উদরে জনমিলা মহামায়া।।
সতী দেহত্যাগে : নন্দী মহারাগে : সত্বরে গেল কৈলাসে।
শূন্যরথ লয়ে : শোকাকুল হয়ে : নিবেদিলা কৃত্তিবাসে।।
শুনিয়া শঙ্কর : শোকেতে কাতর : বিস্তর কৈলা রোদন।
লয়ে নিজগণ : করিলা গমন : করিতে দক্ষে দমন।।
কৃষ্ণচন্দ্র রায় : রাজা ইন্দ্রপ্রায় : অশেষ গুণসাগর।
তাঁর অভিমত : রচিল ভারত : কবি রায় গুণাকর।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *