০৪. পার্ব্বতীর অধিবাস

পার্ব্বতীর অধিবাস

অধিবাস-দ্রব্য সব পাঠান শঙ্কর।
নারদের সঙ্গে দিলা ভীমা যে নফর।।
অধিবাস-দ্রব্য দিলা অযুতেক ভার।
রসাল কাঁটাল গুড় নারিকেল আর।।
খদি দধি কলা দিলা পাট পাটাম্বর।
লেখাজোখা নাই দ্রব্য চলিল বিস্তর।।
অধিবাস-দ্রব্য পাঠান নারদেরে দিয়া।
সব দ্রব্য নিয়োজে ভীমারে আজ্ঞা দিয়া।।
হিমালয়-ঘরে নারদ গেলা আগু হয়ে।
পাছে পাছে যায় ভীমা সব দ্রব্য লয়ে।।
আগু হয়ে গেলা নারদ হিলাময়-ঘর।
বাহিরিলা হিমালয় সানন্দ অন্তর।।
ভারীর সঙ্গেতে যায় শিবের নফর।
ভীমার পাছু পাছু যায় যত অনুচর।।
সন্দেশ কলা দেখি ভীমার স্থির নহে মন।
মুদ্রা ভাঙ্গি ভাল দ্রব্য করিল ভক্ষণ।।
অনেক সন্দেশ কলা করিল আহার।
খাইল কাঁটাল আম্র সহস্রেক ভার।।
যাইতে যাইতে পথে খায় হৃষ্ট হৈয়া।
অর্দ্ধা অর্দ্ধি খেয়ে হাণ্ডী পূরে বালি দিয়া।।
শুখানা বালিতে সব পাতিল পূরিয়া।
অযুতেক ভার পাছু ভীমা আইল ধাইয়া।।
নারদ বলেন কেন বাপু বিলম্ব এতক্ষণ।
ভীমা বলে মাঠে পাইলাম ঝড় বরিষণ।।
পলাল আমারে এড়ি যত ভারিগণে।
তপোবন মধ্যে আমি প্রবেশিনু ধেয়ে।।
নারদ বলেন কার্য্যে না কর উপেক্ষণ।
যাহাতে শিবের কার্য্য হয় সুশোভন।।
নারদের বাক্যে হেমন্তের নাহি হেলা।
আঙ্গিনাতে টাঙ্গাইল পাটের ছাঙলা।।
চাঁদোয়া টাঙ্গাল, তাহে মুকুতা ঝালর।
আঙ্গিনার থামে বান্ধা সোণার চাদর।।
মধ্যখানে ঘট তার করিল স্থাপন।
অধিবাস-দ্রব্য সব আনাল তখন।।
শুক্ল-ধুতি শুক্ল-পাটা অতি পরিপাটি।
হাতে কুশ বৈসে গিরি লয়ে তাম্রবাটি।।
হেমন্ত সঙ্কল্প করে বেলা শুভক্ষণ।
বেদধ্বনি করে তবে যত মুনিগণ।।
ততক্ষণে বাহির হইলা চন্দ্রমুখী।
দেবীকে দেখিয়া সব দেব হৈলা সুখী।।
হাতে পুষ্প কৈলা দেবী পূজা দেবতার।
গন্ধ দিয়া কৈলা মুনি জয় জয়কার।।
মঙ্গল উচ্চারি গন্ধ দিলা কন্যা মাথে।
মঙ্গল-বিহিত কর্ম্ম-সূত্র বান্ধে হাতে।।
তবে শঙ্খ পরাইলা চারু-রূপ দেখি।
কন্যাকে উঠাতে তবে এল সব সখী।।
মঙ্গল-দ্রব্য লয়ে এল সখীগণ মিলি।
কন্যা অধিবাস করে দিয়া হুলাহুলি।।
অধিবাস সাঙ্গ হৈল, সিদ্ধ সব কাজ।
হেমন্তে মেলানি মাগি চলে মুনিরাজ।।
এয়োগণে মিষ্ট দিতে ভাঙ্গিল পাতিলী।
পাতিল ভিতরে তবে দেখে সব বালি।।
হাঁড়ির ভিতরে বালি দেখি লোক হাসে।
পার্ব্বতীর অধিবাস গায় কৃত্তিবাসে।।