১১৭. শ্রীরামের কৈকেয়ী সম্ভাষণ

আইল দেশেতে রাম আনন্দ সবার।
শুনিল কৈকেয়ী রাণী শুভ সমাচার।।
অভিমানে কৈকেয়ার বারিপূর্ণ-আঁখি।
কথা কি কবেন রাম মা বলিয়া ডাকি।।
যদি রাম পূর্ব্বমত করে সম্ভাষণ।
রাখিব এ দেহ, নহে ত্যজিব জীবন।।
এতেক ভাবিয়া রাণী হৈল অধোমুখে।
করেতে রাখিল এক বিষের লড্ডুক।।
যদি রাম মা বলিয়া না ডাকে আমারে।
ত্যজিব এ পাপ প্রাণ বিষপান করে।।
এত বলি অভিমানে রহিলেন রাণী।
অন্তরে জানিল তাহা রাম রঘুমণি।।
হইল ব্যথিত প্রাণ বিমাতার তরে।
অগ্রেতে চলিলা রাম কৈকেয়ীর পুরে।।
ধূলায় বসিয়া রাণী বিরস বদন।
হেনকালে রাম গিয়া বন্দিল চরণ।।
কৈকেয়ীরে শ্রীরাম কহেন যোড়করে।
দেশেতে আইনু মাতা চৌদ্দবর্ষ পরে।।
অরণ্যেতে পড়েছিলাম অনেক প্রমাদে।
উদ্ধার হয়েছি সবে তব আশীর্ব্বাদে।।
লজ্জা পাইয়া কৈকেয়ী কহিছে রঘুনাথে।
কোন্ দোষে দোষী আমি তোমার অগ্রেতে।।
বনে গেলে দেবতার কার্য্যসিদ্ধি লাগি।
আমার করিলে কেন নিমিত্তের ভাগী।।
তুমি গোলোকের পতি জানে এ সংসার।
অবতার হয়েছ হরিতে ক্ষিতিভার।।
সংসারের সার তুমি কে চিনিতে পারে।
সূর্য্যবংশে পবিত্র তোমার অবতারে।।
অরি মরি দেবতার বাঞ্ছা পূরাইলি।
আমার মাথায় দিয়ে কলঙ্কের ডালি।।
বাছা রাম বলি তোরে আর এক কথা।
এত যে দিয়েছ দুঃখ জানিয়া বিমাতা।।
চিরকাল ভরতে অধিক স্নেহ করি।
কুবোল বলিনু মুখে তোমার চাতুরী।।
সর্ব্বঘটে স্থায়ী তুমি সুখ-দুঃখ-দাতা।
এতেক দুর্গতি কৈলে জানিয়া বিমাতা।।
লজ্জিত হইয়া রাম হেঁট কৈল মাথা।
যোড়হাত করি রাম কহিছেন কথা।।
কৈকেয়ীরে তোষে রাম বিনয় বচনে।
তব দোষ নাহি মাতা দৈব নির্ব্বন্ধনে।।
কালেতে সকলি হয় বিধির নির্ব্বন্ধ।
তোমার প্রসাদে বধিলাম দশস্কন্ধ।।
তোমা হইতে পাইলাম সুগ্রীব সুমিত।
সঙ্কটেতে সুগ্রীব করিল বড় হিত।।
তোমার প্রসাদে করে সাগর বন্ধন।
রাবণ মারিয়া তুষিলাম দেবগণ।।
জানিলাম লক্ষ্মণের যতেক ভকতি।
জানিলাম সীতাদেবী পবিব্রতা সতী।।
তোমা হৈতে ধর্ম্মাধর্ম্ম জানিলাম মাতা।
ছলবাক্যে কৈকেয়ী দ্বিগুণ পাইল ব্যথা।।
সকলে আনন্দ হৈল রাম-দরশনে।
আনন্দে রহিল রাম মাতার ভবনে।।
কেহ নাচে কেহ গায় মনের হরিষে।
লঙ্কাকাণ্ড গাহিল পণ্ডিত কৃত্তিবাসে।।