১১৪. লক্ষ্মণ কর্ত্তৃক সেতু ভঙ্গ

বস্ত্র দিয়া ঘর এক চারিদিক ঘিরি।
তার মধ্যে রহিলেন শ্রীরাম-সুন্দরী।।
শ্বেতবর্ণ রাজহংস পবনের গতি।
রথে আনি জুড়িলেক করি পাঁতি পাঁতি।।
লইয়া পুষ্পক-রথ রাজহংস উড়ে।
চক্ষুর নিমিষে রথ যোজনেতে পড়ে।।
পবন-গমনে রথ যায় যথা যথা।
সীতারে কহেন রাম সংগ্রামের কথা।।
উঠিল পুষ্পক-রথ গগন-মণ্ডল।
সীতারে দেখান রাম সংগ্রামের স্থল।।
রণস্থলী সীতা তুমি দেখ ভালমতে।
রাঙ্গা হৈল বানর ও রাক্ষস-শোণিতে।।
এখানে পড়িল কুম্ভকর্ণ দুষ্টজন।
ইন্দ্রজিৎ এখানে পড়িল করি রণ।।
হেথা পড়িলাম নাগপাশের বন্ধনে।
নাগপাশে মুক্ত হৈনু গরুড়-দর্শনে।।
পড়িল লক্ষ্মণ হেথা রাবণের শেলে।
ঔষধ আনিল হনু সুষেণের বোলে।।
পড়িল রাবণ হেথা জগাতের বৈরী।
এই স্থানে কান্দিল সে রাণী মন্দোদরী।।
দেখ সীতা সাগরের কল্লোল বিধান।
মম পূর্ব্ব পুরুষের সাগর নির্ম্মাণ।।
তোমার লাগিয়া সীতা বান্ধিনু জাঙ্গাল।
উপরে পাথর, হেঁটে তমাল পিয়াল।।
জানকী বলে, প্রভু কমললোচন।
সাগর বান্ধিয়া দেশে করিলে গমন।।
রাবণ আনিল মোরে ললাটে লিখন।
বিনা দোষে সাগরের করেছ বন্ধন।।
জাঙ্গাল বহিয়া যে রাক্ষস হবে পার।
পৃথিবীতে না থাকিবে জীবের সঞ্চার।।
রাম সীতা দুই জনে কহেন কাহিনী।
পাতালে থাকিয়া তাহা সাগর দেব শুনি।।
উঠিয়া কহেন যোড় করি দুই হাত।
আমার বচন শুন প্রভু রঘুনাথ।।
আমারে বান্ধিয়া কৈলে সীতার উদ্ধার।
শ্রীরাম বন্ধন কেন রহিল আমার।।
তুমি যদি না ঘুচাও আমার বন্ধন।
তিন যুগে ঘুচায় এমন কোন্ জন।।
সাগরের বোলে রাম লক্ষ্মণে নেহালে।
লক্ষ্মণ লইয়া ধনু নামিল জাঙ্গালে।।
ঘনুহুলে তিনখানি পাথর খসায়।
করি দশ যোজন একেক পথ হয়।।
জাঙ্গাল ভাঙ্গিল জল বহে খরস্রোতে।
লাফ দিয়া লক্ষ্মণ উঠিল গিয়া রথে।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের লঙ্কাকাণ্ড সার।
অনায়াসে সকলে সাগর হৈল পার।।