১১৩. শ্রীরামচন্দ্রের স্বদেশ যাত্রা

আনিল পুষ্পক-রথ দেব-অধিষ্ঠান।
তদুপরি আছে যে কুঠরি স্থানে স্থান।।
রথ দশ যোজন থাকয়ে সর্ব্বক্ষণ।
বাড়িতে চাহিলে হয় সে কোটি যোজন।।
পুষ্পক রথেতে বহু রাজহংস যোড়ে।
চক্ষুর নিমিষে রথ যোজনেক পড়ে।।
চড়েন পুষ্পকে রাম সীতা কুতূহলে।
মুখ ঢাকিলেন সীতা নেতের অঞ্চলে।।
সুমিত্রা-নন্দন বীর চড়িলেন তাতে।
একপাশে রহিলেন ধনুর্ব্বাণ হাতে।।
রথোপরি শ্রীরাম ভূমিতে সৈন্যগণ।
প্রসন্ন-বদনে রাম কহেন বচন।।
সুগ্রীবের শক্তি আর বানরের হানি।
গুণে বিভীষণের দুর্জ্জয় লঙ্কা জিনি।।
সর্ব্ব সেনাপতির করিব গুণগান।
সর্ব্বকার্য্য সিদ্ধ যে করিল হনুমান।।
আপনার দেশে গিয়া কর অধিকার।
মেলানি মাগিলাম আমি করি পরিহার।।
রাক্ষসে বানরে রাম দিলেন মেলানি।
ছল ছল করিয়া পড়িছে চক্ষে পানি।।
যোড়হাতে বলে নিশাচর কপিগণে।
শ্রীরাম হইবে রাজা দেখিব নয়নে।।
কৌশল্যার চরণে করিব প্রণিপাত।
চারি ভাই তোমরা দেখিব একসাথ।।
এ চক্ষে না দেখিলাম তোমার সম্মান।
বিদায় করিলে নাহি যাব নিজ স্থান।।
শ্রীরাম বলেন শুনি এ বড় আনন্দ।
অযোধ্যায় যাবে যদি চলহ স্বচ্ছন্দ।।
দেশে তোমা সবার যাইতে নাই চিতে।
যে যাবে সে চড় এস পুষ্পক-রথেতে।।
পাইয়া রামের আজ্ঞা রাক্ষস বানর।
লাফে লাফে চড়ে গিয়া রথের উপর।।
রথোপরি আওয়াস দিব্য বাড়ী বেড়া।
একেক বানর করে দশ বাড়ী যোড়া।।
যেই কপি পাইয়াছে দশ দশ নারী।
সেই কপি যোড়ে গিয়া দশ দশ বাড়ী।।
বনে ডালে বেড়াইত যারা যূথে যূথে।
দেবকন্যা লইয়া চড়িল গিয়া রথে।।
তিনকোটি রাক্ষসে চলিল বিভীষণ।
রথের এক কোণে গিয়া রহিল তখন।।
চড়িল ছত্রিশ কোটি রাক্ষস বানর।
এতেক চড়িল গিয়া রথের উপর।।
সীতা উদ্ধারিয়া রাম যান নিজদেশে।
লঙ্কাকাণ্ড রচিল পণ্ডিত কৃত্তিবাসে।।