১০৬. রাবণের সৎকার ও মুক্তি

শ্রীরামের স্থানে বর পেয়ে মন্দোদরী।
প্রণতি করিয়া রামে গেল নিজ পুরী।।
রাবণে বধিয়া দুঃখ হইল অপার।
না ধরিব ধনু, রাম কৈলা অঙ্গীকার।।
রাম বলে, বিভীষণ না ভাবিও মনে।
আপনার দোষে মৈল রাজা দশাননে।।
রাবণের অগ্নিকার্য্যে কর বিভীষণ।
আর কেহ নাহি রাজার করিতে তর্পণ।।
ক্রন্দন সম্বর মিতা শুন মম বাণী।
রাবণের তর্পণ তুমি করহ এখনি।।
রামের আজ্ঞায় যায় সংকার করিতে।
নানা দ্রব্য অস্ত্র আনে ভাণ্ডার হইতে।।
অগুরু চন্দন-কাষ্ঠ আনে ভারে ভার।
সুগন্ধি চন্দন আনে গন্ধ মনোহর।।
পর্ব্বত সমান বীর দুর্জ্জয় শরীর।
রাবণে বহিতে এল সহস্রেক বীর।।
সকল রাক্ষস এসে রাবণেরে ধরে।
পর্ব্বত সমান বীরে তুলিবারে নারে।।
দুর্জ্জয় প্রতাপ হনুমান মহাবীর।
কোলে করে লয়ে গেল সাগরের তীর।।
রাবণেরে স্নান করাইল সিন্ধুজলে।
সুগন্ধি চন্দন লেপে কণ্ঠ-বাহু-মূলে।।
দিব্য বস্ত্র পরাইল সোণার পইতে।
সাগরের কূলে খুলে রাবণের চিতে।।
হাতে অগ্নি করিয়া কান্দেন বিভীষণ।
দশ মুখে অগ্নি দিয়া পোড়ায় রাবণ।।
রাবণের চিতাধূম উঠে ততক্ষণ।
মুক্ত হয়ে গেল রাবণ বৈকুণ্ঠ-ভুবন।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের কবিত্ব সুসার।
লঙ্কাকাণ্ডে গাহিলেন রাবণ-উদ্ধার।।