১০২. বিভীষণের রোদন

আমার আর কেহ নাই ভবে,
ওরে দয়াল রামের চরণ বিনে,
দারা পুত্র পরিবার কেবা কোথা রবে।।
আসিয়ে শমন-দূত যখন বাঁধিবে।
ওরে ছেড়ে সংসার মায়া,
ভাব মন রাঘবে।। ধ্রু।।
রাবণ পড়িল দেবগণ হরষিত।
নৃত্য করে অপ্সরা, গন্ধর্ব্বে গায় গীত।।
রাবণ পড়িল রাম কপি পানে চান।
পলাইয়া ছিল কপি এল বিদ্যমান।।
রথখান কাড়ি লৈল বীর হনুমান।
অঙ্গদ লইল গদা দিয়া এক টান।।
কর্ণের কুণ্ডল লৈল নীল সেনাপতি।
হাতের বলয় লয় নল মহামতি।।
কেহ কেহ কাড়ি লয় মুকুটের ফুল।
কেহ উপাড়য়ে দাড়ি গোঁপ আর চুল।।
রাবণে দেখিতে সবে করে মারামারি।
পড়িল রাবণ- রাজা জগতের বৈরী।।
রাম বলে কপিগণ হও এক পাশ।
রাবণে দেখিব আমি আছে অভিলাষ।।
রাম লক্ষ্মণ সুগ্রীব সঙ্গেতে বিভীষণ।
রাবণ নিকটে তবে গেল ততক্ষণ।।
পর্ব্বত জিনিয়া অঙ্গ ধরণী লোটায়।
দেখিয়া দয়াল রাম করে হায় হায়।।
বিভীষণ তখন রাবণে কৈল কোলে।
কান্দিতে কান্দিতে শোকে বিভীষণ বলে।।
ত্রিভুবন জিনিলে ভাই নিজ বাহুবলে।
সেই অহঙ্কারে ভাই রামে না চিনিলে।।
না বুঝিয়া সীতাদেবী লঙ্কাতে আনিলে।
লক্ষ্মীরে করিয়া চুরি সবংশে মজিলে।।
মরণ করিলে সার, নাহি দিলে সীতা।
পায়ে ধরে সাধিলাম না শুনিলে কথা।।
সবংশে সহিত এবে হারাইলে প্রাণ।
না শুনিলে মম বাক্য হয়ে হতজ্ঞান।।
আপনার দোষে মৈলে কলঙ্ক আমার।
কার তরে দিয়া যাহ লঙ্কা-অধিকার।।
বিভীষণ কহে রাম যুক্তি বল সার।
স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতাল তোমার অধিকার।।
ধার্ম্মিক হইয়া ভাই ধর্ম্ম নষ্ট করে।
মৃত্যু লাগি সীতার আনে লঙ্কার ভিতরে।।
চিরদিন ভাই মোর পূজিল শিবেরে।
মরণ সময়ে শিব না চাহিলা ফিরে।।
হিত বুঝাইতে মোরে ভাই মারে লাথি।
তখনি জানিনু ভায়ের ঘটিল দুর্গতি।।
পুরী শূন্য করি ভাই ত্যজিল জীবন।
তোমা বিনা গতি আর নাহি নারায়ণ।।
বিভীষণের রোদনে শ্রীরাম দুঃখ-মন।
রাম বলে না কান্দ ধার্ম্মিক বিভীষণ।।
ভুবন জিনিয়া সুখ ভুঞ্জিল অপার।
পড়িয়া আমার বাণে গেল স্বর্গদ্বার।।
রামের বচনে তবে সম্বরে ক্রন্দন।
কৃত্তিবাস বিরচিল গীত রামায়ণ।।