০৪২. শ্রীরাম লক্ষ্মণাদির রক্ষা নিমিত্ত বিভীষণ, হনুমান ও জাম্ববানের মন্ত্রণা

চারি দ্বারে পড়ে সৈন্য শ্রীরাম লক্ষ্মণ।
রক্ষা পায় বিভীষণ পবন-নন্দন।।
দুই জনে অমর ব্রহ্মার পেয়ে বর।
না মারিল দুই জন কটক ভিতর।।
চিন্তিয়া গণিয়া দোঁহে যুক্তি কৈল সার।
রাম লক্ষ্মণ জীয়াইতে কৈল প্রতিকার।।
হাতে করি দেউটি ফিরিছে দুই বীরে।
বানর দেখিয়া বেড়ায় গতি অতি ধীরে।।
সুগ্রীব রাজা পড়েছে লয়ে রাজ্যখণ্ড।
ছত্রিশ কোটি সেনার লোটাইছে মুণ্ড।।
পূর্ব্বদ্বারে কোটি কোটি বানর সংহতি।
হাতে গাছ পড়িয়াছে নীল সেনাপতি।।
পড়েছে অঙ্গদ বীর দক্ষিণ দুয়ারে।
বাণেতে অবশ অঙ্গ, মূর্চ্ছিত শরীরে।।
পড়িয়া পশ্চিম দ্বারে শ্রীরাম লক্ষ্মণ।
দেখিয়া মাথায় হাত কান্দে দুই জন।।
শব্দ নাহি, স্তব্ধ অঙ্গ, দুজনে মূর্চ্ছিত।
নাড়িয়া চাড়িয়া দেখে নাহিক সম্বিত।।
বাণ ফুটে পড়িয়াছে মন্ত্রী জাম্ববান।
না পারে মেলিতে চক্ষু, বুকে পড়ে টান।।
বিভীষণ বলে, তুমি বলে মহাবলী।
উঠিয়া মন্ত্রণা কর আর কারে বলি।।
জাম্ববান মন্ত্রণা কর আর কারে বলি।।
জাম্ববান বলে, আমার অঙ্গে লক্ষ বাণ।
না পারি মেলিতে চক্ষু, বুকে পড়ে টান।।
অনুমানে জানিলাম কথার আভাসে।
বিভীষন আসিয়াছে আমার সম্ভাষে।।
জাম্ববান বলে তুমি ধার্ম্মিক সুজন।
তত্ত্ব করে দেখ কোথা পবন-নন্দন।।
দুজনে মন্ত্রণা করি ভাবহ উপায়।
ইন্দ্রজিতের বাণে সবে রক্ষা কিসে পায়।।
বিভীষণ বলে তুমি বুদ্ধে বৃহস্পতি।
ইন্দ্রজিতের বাণে তোমার ছন্ন হৈল মতি।।
শ্রীরাম লক্ষ্মণ পড়েন জগৎ-পূজিত।
এ সময় কেন নাহি চিন্তা কর হিত।।
পড়েছে সুগ্রীব রাজা বানরের পতি।
কি হবে উপায় কিছু কর অবগতি।।
এবে সে জানিনু আমি তোমার চরিত্র।
পবন-নন্দন বিনা নাহি তব মিত্র।।
জাম্ববান বলে, আমার বুদ্ধি নাহি ঘটে।
হনুমানে ডেকে দেহ আমার নিকটে।।
অন্য কোন অন্বেষণে নাহি প্রয়োজন।
দেখ আগে কোথা আছে পবন-নন্দন।।
চেতনা থাকয়ে যদি তাহার শরীরে।
প্রাণদান দিবেক সকল মহাবীরে।।
বিভীষণ বলে, দেখ মেলিয়া নয়ন।
তোমা সম্ভাষিতে আসিয়াছে হনুমান।।
হনুমান জাম্ববানের বন্দিল চরণ।
মৃদুভাষে জাম্ববান বলিছে তখন।।
পড়েছেন কপিগণ শ্রীরাম লক্ষ্মণ।
ঔষধ আনিলে তুমি জীয়ে সর্ব্বজন।।
অন্তরীক্ষে যাইবে পবনে করি ভর।
অতি উচ্চ হিমালয় পর্ব্বত-শিখর।।
ঋষ্যমূক-পর্ব্বত সে হিমালয় পার।
ধবল-পর্ব্বত শ্বেত ধবল আকার।।
তাহার দক্ষিণ-পূর্ব্ব পর্ব্বত কৈলাস।
ঋষ্যমূক-পর্ব্বতে আছে ঔষধ নির্য্যাস।।
চারি বৃক্ষে আছয়ে ঔষধ চারি জাতি।
অন্ধকারে আলো করে ঔষধের জ্যোতি।।
বিশল্যকরণী এক সর্ব্বলোকে জানি।
দ্বিতীয় ঔষধ নাম মৃতসঞ্জীবনী।।
তৃতীয় ঔষধ আছে অস্থি-সঞ্চারিণী।
চতুর্থ ঔষধ নাম সুবর্ণকরণী।।
আনিতে ঔষধ যদি পার রাতারাতি।
চারিযুগে থাকিবেক তোমার সুখ্যাতি।।
নাহিক এ সব কথা বাল্মীকি রচনে।
বিস্তারিয়া লিখিত অদ্ভুত রামায়ণে।।
এক রামায়ণ শত সহস্র প্রকার।
কে জানে প্রভুর লীলা কত অবতার।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের জন্ম শুভক্ষণে।
লঙ্কাকাণ্ড গাহিলেক গীত রামায়ণে।।