৩৯. শ্রীরামের ভস্মলোচন বধ ও লঙ্কায় প্রবেশ

শ্রীরাম চলিলা তবে সহিত লক্ষ্মণ।
পশ্চাতে সুগ্রীব রাজা আর বিভীষণ।।
দক্ষিণ চাপিয়া চলে মন্ত্রী জাম্ববান।
আগে আগে ধাইয়া চলিল হনুমান।।
চলিল অঙ্গদ বীর লয়ে সেনাগণ।
এক চাপে চলে ঠাট মেঘের গর্জ্জন।।
রামজয় বলিয়া ছাড়য়ে সিংহনাদ।
শুনিয়া রাক্ষসগণ গণিল প্রমাদ।।
রাবণেরে কহে গিয়া যত নিশাচর।
আইলা শ্রীরাম পার হইয়া সাগর।।
শুনিয়া রাবণ রাজা চারিদিকে চায়।
ভস্মলোচনেরে দেখি আজ্ঞা দিল তায়।।
শ্রীরাম আইসে লঙ্কা বানর লইয়া।
বানরগুলো ভস্ম করি দেহ উড়াইয়া।।
পাইয়া রাজার আজ্ঞা চলিল সত্বর।
চক্ষে ঠুলি দিয়া উঠে রথের উপর।।
চর্ম্মে ঢাকা রথখান আইসে ধাইয়া।
জাঙ্গাল উপরে রথ লাগিল আসিয়া।।
বিভীষণ বলে, গোঁসাই করি নিবেদন।
যুঝিবার তরে আইল এ ভস্মলোচন।।
ঘুচায়ে চর্ম্মের ঠুলি যার পানে চাবে।
চক্ষেতে দেখিবামাত্র ভস্ম হয়ে যাবে।।
শ্রীরাম বলেন, মিতা বলহ উপায়।
কেমনে বানরগণ ইথে রক্ষা পায়।।
ইহা শুনি বলিছে রাক্ষস বিভীষণ।
ধনুকের গুণে বাণ যোড়হ দর্পণ।।
দর্পণে দেখিতে পাবে আপনার মুখ।
আপনি হইবে ভস্ম দেখহ কৌতুক।।
এত শুনি রঘুনাথ আনন্দিত মন।
ব্রহ্ম-অস্ত্রে কোটি কোটি সৃজিল দর্পণ।।
রথ আগুলিয়া তার রহিল দর্পণে।
ঘুচায়ে চক্ষের ঠুলি চাহে চারিপানে।।
আপনার মুখ দেখে দর্পণ ভিতর।
ভস্ম হয়ে উড়ে গেল সেই নিশাচর।।
দেখিয়া রাক্ষসগণে মনে লাগে ভয়।
হইল প্রথম রণে শ্রীরামের জয়।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের কবিত্ব রচন।
সুন্দরাকাণ্ডে গাহিলেন গীত রামায়ণ।।
দূরে ছিলা সীতাদেবী দূরে ছিলা রাম।
দুই জনে মিলিয়া হইল এক স্থান।।
পোহাইতে আছে মাত্র রাত্রি প্রহর দেড়।
রামের কটকে লঙ্কাপুরী কৈল বেড়।।
পার হয়ে লঙ্কায় উঠেন নারায়ণ।
রামজয় বলি ডাকে যত কপিগণ।।