৩৬. নল কর্ত্তৃক সাগর বন্ধন

সাগর চলিয়া গেল আপনার স্থান।
নল বলি ডাক দিল দেব নারায়ণ।।
ধাইয়া আইল নল রাম-বিদ্যমান।
ভূমি লুটি পদতলে করিল প্রণাম।।
শ্রীরাম বলেন, নল কহি যে তোমারে।
তুমি হেন বীর আছ কটক ভিতরে।।
সাগর বান্ধিতে তুমি হও বলবান।
এত দুঃখ পাই আমি তোমা বিদ্যমান।।
নল বলে, শুন প্রভু নিবেদন করি।
ক্ষুদ্র যে বানর আমি জ্ঞাতি-লোকে ডরি।।
বড় বড় বানর আছে বীর-অবতার।
কেমনে তাদের আগে করি অঙ্গীকার।।
যখন ছিলাম আমি জনকের ঘরে।
তাহার বৃত্তান্ত কিছু কহিব তোমারে।।
মান-সরোবরে ব্রহ্মা ছিপ কুশী লয়ে।
নিত্য নিত্য বসি সন্ধ্যা করেন আসিয়ে।।
ছিপ কুশী রাখি যান সরোবর-তীরে।
তাহা আমি তুলে লয়ে ফেলিতাম নীরে।।
নিত্য ছিপ কুশী ব্রহ্মা করেন সৃজন।
আমারে দেখিয়া ব্রহ্মা বলেন বচন।।
নিত্য ছিল কুশী মোর ফেলাইস্ জলে।
সন্তুষ্ট হইয়া ব্রহ্মা মোর প্রতি বলে।।
আমি বর দিব তোরে শুন রে বানর।
তুই ছুঁলে জলে যেন ভাসয়ে পাথর।।
গাছ পাথর যোড়া লাগে তোমার পরশে।
তুমি ছুঁলে গাছ পাথর জলে যেন ভাসে।।
ব্রহ্মার বরেতে আমি বান্ধিব সাগর।
প্রতিজ্ঞা করিয়া বলি তোমার গোচর।।
একমাসে বান্ধি দিব শতেক যোজন।
গাছ পাথর আনি যোগাউক কপিগণ।।
সাগর বান্ধিতে নল করে অঙ্গীকার।
হরিষ হইল রাজা সুগ্রীব বানর।।
রামজয় বলিয়া ডাকয়ে কপিগণ।
সাগর বান্ধিতে সবে হরষিত মন।।
শ্রীরামে প্রণাম করি নল বীর চলে।
সাগর বান্ধিতে বীর বৈসে গিয়া জলে।।
আছিল নলের বন সাগরের তীরে।
তাহা ভাঙ্গি ফেলি দিল জলের উপরে।।
তাহার উপরে গাছ দিল বিছাইয়া।
উপরে পাথর সব দিল চাপাইয়া।।
প্রস্থে দশ যোজন সে করয়ে বন্ধন।
গাছ পাথর যোগাইয়া দেয় কপিগণ।।
দীর্ঘে এক যোজন বান্ধিল এক দিনে।
উত্তরে আরম্ভ করি চলিল দক্ষিণে।।
বসিলেন নল বীর জাঙ্গার উপরে।
পর্ব্বত আনিয়া দেয় সকল বানরে।।
মুদগরের বাড়ি পড়ে মহাশব্দ শুনি।
উচ্চৈঃস্বরে ডাকে কপি রামজয় ধ্বনি।।
যোগায় পর্ব্বত আনি পবন নন্দন।
নল বীর বসি করে সাগর বন্ধন।।
দশ যোজন সাগর সে হইল বন্ধন।
কৃত্তিবাস গাহিলেন গীত রামায়ণ।।