২৯. রাবণের প্রতি বিভীষণের উপদেশ

নিকষা নামেতে বুড়ী রাবণের মা।
বিপদ শুনিয়া তার ত্রাসে কাঁপে গা।।
আসিয়া কহিছে বুড়ী বিভীষণ প্রতি।
শুন পুত্র, তুমি ত ধার্ম্মিক শুদ্ধমতি।।
রাবণ তপের ফলে এত সুখ ভুঞ্জে।
আনিয়া রামের সীতা সবংশে বা মজে।।
যে মারে রাক্ষসে, করে তার সনে বাদ।
দেখিয়া না দেখে দুষ্ট এতেক প্রমাদ।।
আর না থাকিব হেন পুত্রের নিকট।
দেখিয়া না দেখে পুত্র কতেক সঙ্কট।।
অবোধে বুঝাহ যেন রাম না বাহুড়ে।
যাবৎ রামের বাণে লঙ্কা নাহি পুড়ে।।
মাতৃবাক্যে বিভীষণ চলিল সত্বর।
পাত্র মিত্র সহ যথা আছে লঙ্কেশ্বর।।
রাবণেরে প্রণাম করিল বিভীষণ।
আশীর্ব্বাদ করি দিল বসিতে আসন।।
কৃতাঞ্জলি হইয়া কহেন বিভীষণ।
সভাস্থ সকলে স্তব্ধ করিছে শ্রবণ।।
অনেক তপের ফলে এ সব সম্পদ।
রামের প্রতাপে ভাই ঘটিবে বিপদ।।
যতদিন সীতারে আনিলে লঙ্কাপুর।
তত দিন দেখি ভাই কুস্বপ্ন প্রচুর।।
ঝাঁকে ঝাঁকে শকুনি পড়িছে গৃহচালে।
রাত্রে নিদ্রা নাহি হয় শৃগালের রোলে।।
কালী হেন বুড়ী দেখি দশন বিকট।
সন্ধ্যাকালে উকি পাড়ে দ্বারের নিকট।।
বিবিধ উৎপাত ভাই দেখি সদা কাল।
রামচন্দ্র অতি বীর বিক্রমে বিশাল।।
রাবণ বলিছে, কি রামেরে এত ডর।
কি করিতে পারে রাম সুগ্রীব বানর।।
রাবণ ভ্রাতার বাক্য না শুনিল কাণে।
মন্ত্রণা করিতে দুষ্ট মন্ত্রিগণে আনে।।
রাবণ বলিছে, মন্ত্রী যুক্তি কর সার।
কি প্রকারে রাঘবেরে করিহ সংহার।।
বীরদর্পে কহিছে প্রহস্ত সেনাপতি।
কি করিতে পারে সে বনের পশুজাতি।।
পর্ব্বতের গুহামধ্যে আর নদীকূলে।
বানরের নাম না রাখিব ভূমণ্ডলে।।
বজ্রকণ্ঠ নিশাচর দশন বিকট।
লোহার মুদগর হাতে কহে অকপট।।
লোহার মুষল লয়ে প্রবেশিব রণে।
মাথা ভাঙ্গি বধিব বানর জনে জনে।।
ত্রিশিরা বিক্রম করে আমি আছি কিসে।
লঙ্কাতে থাকিতে আমি এত অপমান।।
পাইলে তোমার আজ্ঞা আমি করি রণ।
দেখিব কেমন রাম কেমন লক্ষ্মণ।।
অকম্পন বলে রাজা তব আজ্ঞা পাই।
অনেক দিনের সাধ কপি ধরে খাই।।
কুম্ভ ও নিকুম্ভ কুম্ভকর্ণের নন্দন।
উভয়ের কত দর্প করিবারে রণ।।
জাঠি আর ঝকড়া মুষল শেল আর।
লইয়া সাজিল যুদ্ধে লাগ চমৎকার।।
হাতে ধরে বিভীষণ কহে জনে জনে।
স্থির হও স্থির হও শুন বীরগণে।।
এ সবার বাক্যে ভাই না করিহ ভর।
হিতবাক্য বলি শুন ভাই লঙ্কেশ্বর।।
সীতা পাঠাইয়া দিলে থাকিবে নির্ভয়।
সীতারে রাখিলে ভাই জীবন সংশয়।।
কোন্ কার্য্যে মজাইতে চাহ লঙ্কাপুরী।
পাঠাইয়া দেহ সীতা রামের সুন্দরী।।