১৯. হনুমানের নিকট সীতার শিরোমণি প্রদান

শুনিয়া সীতার এই করুণ বচন।
নেত্রনীরে তিতে বীর পবন-নন্দন।।
হনুমান বলে শুন ধরিত্রী-নন্দিনী।
না কর রোদন মাতা, সম্বর আপনি।।
নিদর্শন দেহ কিছু যাইব ত্বরিতে।
মাসেকের মধ্যে ঠাট আনিব লঙ্কাতে।।
মাথা হৈতে খসাইয়া সীতা দেন মণি।
মণি দিয়া তার ঠাঁই কহেন কাহিনী।।
মাসেকের মধ্যে যদি করহ উদ্ধার।
তোমার কল্যাণে সীতা জীয়ে এইবার।।
আর কি কহিব কথা প্রভুর চরণে।
ইন্দ্রসুত কাক মোর আঁচড়িল স্তনে।।
শ্রীরাম ঐষিক বাণ করেন সন্ধান।
খেদাড়িয়া যায় বাণ বধিতে পরাণ।।
কাক গিয়া বাসবের লইল শরণ।
সে ঐষিক বাণ তবে হইল ব্রাহ্মণ।।
দ্বিজবেশে কহে গিয়া বাসবের ঠাঁই।
শ্রীরামের বাণ আমি ঐ কাক চাই।।
সেই বাণ দেখি ইন্দ্র উঠি ততক্ষণ।
করযোড়ে তার আগে করিল স্তবন।।
বাণ বলে মোর ঠাঁই নাহিক এড়ান।
ত্রিভুবনে ব্যর্থ নহে শ্রীরারেম বাণ।।
বাণের গর্জ্জন শুনি ভীত পুরন্দর।
জয়ন্ত কাকেরে দিল বাণের গোচর।।
রামকে আনিয়া দিল বিন্ধি এক আঁখি।
করুণা-সাগর রাম না মারেন পাখী।।
এত অপরাধে তারে না মারেন প্রাণে।
ত্রিভুবনে তুল্য নাহি শ্রীরামের গুণে।।
রাম হেন পতি যার আছে বিদ্যমান।
রাক্ষসে তাহার করে এত অপমান।।
অনন্তর মস্তকে বান্ধিয়া শিরোমণি।
দেশেতে চলিল বীর করিয়া মেলানি।।
মেলানি করিয়া বীর দেশেতে আইসে।
মনে সাত পাঁচ বীর হনুমান ভাষে।।
আচম্বিতে আইলাম যাই আচম্বিতে।
হরিষ বিষাদ কিছু না থাকিবে চিতে।।
রামের কিঙ্কর যাব সাগরের পার।
রাবণেরে কিঞ্চিৎ দেখাই চমৎকার।।
জন্মাই সীতার হর্ষ রাবণের ত্রাস।
স্বর্ণ-লঙ্কাপুরী আজি করিব বিনাশ।।
বান্ধিয়াছে মণিতে অশোক-বৃক্ষগুঁড়ি।
সেই বনে হনুমান যায় গুড়ি গুড়ি।।
সীতা বলিলেন বাছা হইল স্মরণ।
অমৃতের ফল কিছু করহ ভক্ষণ।।
হাত পাতি লয় বীর পরম কৌতুকে।
অমনি ফেলিয়া দিল আপনার মুখে।।
অমৃতের সমান সেই অমৃতের ফল।
ফল খাইয়া হনুমান হইল বিকল।।
হনুমান বলে ওগো জননি জানকি।
অমৃত সমান ফল আরো আছে নাকি।।
কোথায় তাহার গাছ কহত বিধান।
খাইব এখন ফল সবা বিদ্যমান।।
সীতা বলিলেন, তথা বৃথা আগমন।
মম বার্ত্তা না পাবেন শ্রীরাম লক্ষ্মণ।।
তুমি একা বানর, রাক্ষস বহু জন।
তোমারে দেখিবামাত্র বধিবে জীবন।।
হনুমান বলে মাতা ভাব কেন আর।
রাক্ষস কটক আমি করিব সংহার।।
মনে চিন্তা না করিহ শুনহ বচন।
দেখাইয়া দেহ মাতা অমৃতের বন।।