১৮. সীতাদেবীর সহিত হনুমানের কথোপকথন

বিভীষণ ধার্ম্মিক রাবণ-সহোদর।
মোর লাগি রাবণেরে বুঝায় বিস্তর।।
অরবিন্দ নামেতে রাক্ষস মহাশয়।
আমা দিতে রাবণেরে করেছে বিনয়।।
বিভীষণ কন্যা সানন্দা নাম ধরে।
তার মাকে পাঠাইল আমার গোচরে।।
তার ঠাঁই শুনিলাম এই সারোদ্ধার।
বিনা যুদ্ধে বাছা মোর নাহিক উদ্ধার।।
সুগ্রীবের জানাইও মোর বিবরণ।
শ্রীরামেরে জানাইও মোর নিবেদন।।
হনু বলে, মোর পৃষ্ঠে কর আরোহণ।
তোমা লয়ে যাব যথা শ্রীরাম লক্ষ্মণ।।
বল মৃগ হই মাতা, বল হই পাখী।
কিসে আরোহিয়া যাবে, বল মা জানকী।।
জানকী বলেন তুমি বিঘত প্রমাণ।
মনুষ্যের ভার কিসে সবে হনুমান।।
শুনিয়া সীতার কথা হনুমান হাসে।
হইল যোজন আশী চক্ষুর নিমিষে।।
হইল যোজন দশ আড়ে পরিসর।
সত্তর যোজন হৈল উভে দীর্ঘতর।।
করিল দীঘল লেজ যোজন পঞ্চাশ।
তখনি সে লেজ গিয়া ঠেকিল আকাশ।।
জানকী বলেন, বাছা তোমার আকার।
দেখিয়া আমার মনে লাগে চমৎকার।।
কেমনে তোমার পৃষ্ঠে আমি রব স্থির।
সাগরে পাড়িলে খাবে হাঙ্গর কুম্ভীর।।
পর পুরুষের স্পর্শে নাহি লয় মন।
কি করিব, বলে ধরি, আনিল রাবণ।।
রাবণেরে মত কি করিবে মোরে চুরি।
তারে মারি উদ্ধারহ তবে বাহাদুরি।।
তোমার দুর্জ্জয় মূর্ত্তি দেখি লাগে ডর।
আপনা সম্বর বাছা পবন-কোঙর।।
অশীতি যোজন অঙ্গ লাগে অন্তরীক্ষে।
আপনা সম্বর বাছা কেহ পাছে দেখে।।
শুনিয়া সীতার কথা বীর হনুমান।
দেখিতে দেখিতে হয় বিঘত প্রমাণ।।
জানকী বলেন, বাছা পবন-কোঙর।
তোমার বিক্রমেতে আমার লাগে ডর।।
লক্ষ্মণেরে জানাইও আমার কল্যাণ।
তা সবার বিক্রমের কিসের বাখান।।
নিমিকুলে জন্মিয়া পড়িনু সূর্য্যকুলে।
এই কি আছিল মোর লিখন কপালে।।
রাম হেন স্বামী যার আছে বিদ্যমান।
রাক্ষসে তাহার করে এত অপমান।।
সুগ্রীবের জানাইও আমার কাকুতি।
যত কিছু আছে তাঁর সৈন্য সেনাপতি।।
দুমাস জীবন তার এক মাস যায়।
মাস গেলে বাছা মোর জীবন সংশয়।।
দুই মাস রাবণ দিয়াছে প্রাণদান।
অতঃপর কাটিয়া করিবে খান খান।।
আমি মৈলে সবাকার বৃথা আয়োজন।
যদি ঝাট এস তবে রহিবে জীবন।।