১৪. সুগ্রীবের রাজ্যেপ্রাপ্তি

সকল বানর গেল রাম-বিদ্যমান।
সুগ্রীবের ইঙ্গিতে বলেন হনুমান।।
তোমার প্রসাদেতে সুগ্রীব হৈল রাজা।
বাঞ্ছা করে সুগ্রীব তোমারে করে পূজা।।
পাইলে তোমার আজ্ঞা যায় অন্তঃপুরে।
অন্তঃপুরে শ্রীরাম আইস রাজপুরে।।
শ্রীরাম বলেন, পুরে না করি প্রবেশ।
বনবাস করিবারে পিতার আদেশ।।
চতুর্দ্দশ বৎসর ভ্রমি বনে বন।
নগরে কেমনে আমি করিব গমন।।
সুগ্রীবের শ্রীরাম বলেন লও ভার।
রাজা হৈয়া কর তুমি রাজ্য অধিকার।।
বালিকে মারিয়া বড় পাইলাম লাজ।
এই হেতু অঙ্গদেরে কর যুবরাজ।।
মহাদেবী তারার করহ পুরস্কার।
তারার মন্ত্রণায় করিহ ব্যবহার।।
আইল শ্রাবণ মাস, বরিষা প্রবেশ।
শাখামৃগ কটক থাকুক নিজ দেশ।।
বনে বনে ভ্রমিয়া পাইলে বড় দুঃখ।
বরিষায় কিছুদিন কর রাজ্যসুখ।।
বর্ষা গেলে ঘরে যে থাকিবে এক দণ্ড।
তাহার করিব মিত্র সমুচিত দণ্ড।।
শ্রীরামের আজ্ঞাতে সে গেল অন্তঃপুর।
নানা বস্ত্র রত্ন দান করিল প্রচুর।।
সুগ্রীবে করিতে রাজা আইল রাজ্যখণ্ড।
সিংহাসন বাহির করিল ছত্রদণ্ড।।
শুভক্ষণে সুগ্রীব বসিল সিংহাসনে।
চারিভিতে চামর ঢুলায় কপিগণে।।
শ্রীরামের আজ্ঞা যেন পাষাণের রেখ।
সাগরের জলে তার করে অভিষেক।।
ছত্রদণ্ড দিল আর কিষ্কিন্ধ্যানগরী।
অভিষেক করি দিল তারা কৃশোদরী।।
রাজার স্ত্রী রাজা লবে, ইহাতে কি দোষ।
তারা পাইয়া সুগ্রীবের বড়ই সন্তোষ।।
শ্রীরামের অলঙ্ঘিত বচন প্রমাণে।
অঙ্গদের অভিষেক করে অবসানে।।
করিল অঙ্গদে যুবরাজ পাত্রগণ।
রাম জয় বলি ডাকে সব কপিগণ।।
সীতার লাগিয়া রাম সদা ক্ষুণ্ন মন।
বরিষা বঞ্চিতে যান গিরি মাল্যবান।।
দুই ক্রোশ অন্তরে থাকেন রঘুবীর।
যথা বহে পর্ব্বতেতে সুগন্ধ সমীর।।
বাসা করি থাকিলেন পর্ব্বত শিখর।
স্থানে স্থানে পর্ব্বতেতে দিব্য সরোবর।।
নানাবিধ বৃক্ষেতে বিচিত্র ফুল ফল।
ধবল রজনী, পূর্ণচন্দ্র সুশীতল।।
রামের সুখের হেতু না হয় কিঞ্চিৎ।
সীতা বিনা সর্ব্ব সুখে শ্রীরাম বঞ্চিত।।
শয়ন ভোজন তাঁর কিছু নাহি মনে।
দিন যায় রোদনেতে, রাত্রি জাগরণে।।
রাজ্যভোগ সুগ্রীবের বাড়ে দিন দি।
রাত্রিদিন শ্রীরাম সীতার শোকে দীন।।
সুবর্ণপালঙ্কে শোয় সুগ্রীব ভূপতি।
তরুতলে শ্রীরাম করেন নিবসতি।।
দিব্য সুন্দরীতে সুগ্রীবের অভিলাষ।
সীতা লাগি কান্দেন শ্রীরাম চারি মাস।।
কান্দিতে কান্দিতে রাম হইল কাতর।
তাঁহারে লক্ষ্মণ দেন প্রবোধ উত্তর।।
তুমি বীর, হও স্থির, ত্যজহ প্রমাদ।
মহাপুরুষেরা হেন না করে বিষাদ।।
কাতর হইলে শোকে নিন্দা করে লোকে।
শোকে বুদ্ধি নাশ হয়, ক্ষিপ্ত হয় শোকে।।
শোকেতে আচ্ছন্ন হয়, যে জন অজ্ঞান।
শোক কর কেন রাম হয়ে জ্ঞানবান।।
তুমি বীর কাম ক্রোধ কর পরাজয়।
শোক-স্থানে পরাভব তব কেন হয়।।
ক্ষান্ত হও রঘুবীর চিন্তা কর দূর।
লঙ্কেশ্বর সহিত আনিব লঙ্কাপুর।।
আজ্ঞা কর বিজ্ঞবর সেবক লক্ষ্মণে।
জানকী উদ্ধার করি নাশিয়া রাবণে।।
কোন্ ছার লঙ্কা, সে রাবণ কোন্ ছার।
একা আমি রাম করি সকল সংহার।।
কান্দিতে কান্দিতে গেল সে শ্রাবণ মাস।
রামের ক্রন্দনে গীত গা কৃত্তিবাস।।