০৩. নায়ক প্রকরণ

নায়ক প্রকরণ
নায়ক নায়িকা দুই শৃঙ্গারে প্রধান। নায়িকা বর্ণিনু শুন নায়ক সন্ধান।।
পতি উপপতি আর বৈশিক নাগর। স্বীয়া পরকীয়া আর সামান্যার ঘর।।
বেদমত বিভা করে যে জন সে পতি। উপপতি সেই যার পিরীতে বসতি।।
কোনরূপে ধনলোভে হয় সংঘটন। বৈষয়িক বৈশিক নাগর সেই জন।।

পতিভেদ
অনুকূল দক্ষিণ ধৃষ্ট শঠ চারি মত। পতিভেদ কেহ বলে তিনে কেহ রত।।
একে অনুরাগ যার সেই অনুকূল। দক্ষিণে সে যার ঘরে পরে হয় তুল।।
ধৃষ্ট সেই দোষ করে পুনঃ করে হঠ। কপট বচনে পটু সেই জন শঠ।।

অনুকূল
ওলো ধনি প্রাণধন : শুন মোর নিবেদন : সরোবরে স্নান হেতু যেয়ো না লো যেয়ো না।
যদ্যপি বা যাও ভুলে : অঙ্গুলে ঘোমটা তুলে : কমলকানন পানে চেয়ো না লো চেয়ো না।।
মরাল মৃণাল লোভে : ভ্রমর কমল ক্ষোভে : নিকটে আইলে ভয় পেয়ো না লো পেয়ো না।
তোমা বিনা নাহি কেহ : ঘামে পাছে গলে দেহ : যায় পাছে ভেঙ্গে কটি ধেয়ো না লো ধেয়ো না।।

দক্ষিণ
তোমার নিকটে যত : দিব্য করি কহি কত : বাহির হইবামাত্র পর দেখি ভুলে লো।
তোমার যেমন প্রীতি : পরসঙ্গে সেই রীতি : কহিলাম আপনার দোষগুণগুলি।।
কি করে ধর্ম্মের ভয় : লোকলাজে কিবা হয় : দেখিতে পরের মুখ ফিরি কুলি কুলি লো।
তুমি যদি হও রুষ্ট : অন্যে করিবেক তুষ্ট : ইহা বুঝি মোর সঙ্গে ছেড়ে দেহ ঠুলি লো।।

ধৃষ্ট
দোষ দেখে একবার : কৈল নানা তিরস্কার : লাজ পেয়ে আনু ফিরে তবু দয়া হল না।
ভুজপাশে বান্ধ্যা ধর : নিতম্ব প্রহার কর : দশনেতে কর ক্ষত অভিমানে গলো না।।
দূর কৈলে দূর হব : গাল দিলে সয়ে রব : আমারে সহিল সব তোমারে তো সলো না।
পুরুষ পরশমণি : যারে ছোঁয় সেই ধনী : ইহা বুঝে অনুক্ষণ দূর দূর বলো না।।

শঠ
কালি করেছিনু : আনিতে ভুলিনু : ক্ষম সেই অপরাধ।
যে বল করিব : যাহা চাহ দিব : পূরাহ সকল সাধ।।
অঙ্গেতে যে দাগ : তোমারি সোহাগ : মিথ্যা দেহ অপবাদ।
আমার পরাণ : হরিণী সমান : তোমার চক্ষু নিবাদ।।

উপপতি
নিজ নারী আছে ঘরে : যাহা বলি তাহা করে : নানা রূপ গুণ ধরে : তাহে মন রয় না।
করিতে অন্যায় সঙ্গ : সদাই সরস অঙ্গ : এ বড় অপূর্ব্ব রঙ্গ : ধর্ম্মভয় হয় না।।
যাইতে সঙ্কেতস্থান : সতত আকূল প্রাণ : অপরাধ জ্ঞান মান : কিছু মনে লয় না।
ব্যক্ত হলে কালামুখ : বাড়ীতে নাহিক সুখ : রমণেতে নানা দুখ : তবু ক্ষমা হয় না।।

বৈশিক নাগর
গিয়াছিনু সরোবরে : স্নান করিবার তরে : দেখিয়াছি একজন অপরূপ কামিনী।
চক্ষু মুখ পদ্ম ছন্দ : কিবা ছন্দ কিবা মন্দ : নীলাম্বরে ঝাঁপে তনু মেঘে যেন দামিনী।।
ঈশ্বর সদয় হন : দূতী মিলে একজন : এই ক্ষণে তার কাছে যায় দ্রুতগামিনী।
যত চাহে দিব ধন : দিব নানা আভরণ : কোনমতে মোর সঙ্গে বঞ্চে এক যামিনী।।

নায়কের উত্তমাদি ভেদ
উত্তম মধ্যম আর অধম নিয়মে। নায়িকার যে ক্রম নায়ক সে ক্রমে।।
বাসসজ্জা আদি নায়িকার ভেদ যত। নায়ক সে ভেদ হয় লক্ষণ সম্মত।।
উপপতি বৈশিকেতে সকলি বিদিত। পতি প্রতি রসাভাষ কেবল খণ্ডিত।।
স্বকীয়ার রসাভাষ জান অভিসার। পতির খণ্ডিত ভাব তেমতি প্রকার।।
সর্ব্বজন সুসম্মত আর ভাব সব। উদাহরণেতে দেখ কর অনুভব।।

বাসসজ্জা
শয়ন সময় : বন্ধু রসময় : করে রমণীর মোহন সাজ।
অন্য কার্য্য ছলে : শয্যাঘরে চলে : সাধিতে আপন গোপন কাজ।।
হাতে লয়ে যন্ত্র : গান কামতন্ত্র : মনে পেয়ে লাজ পায় এ লাজ।
ভাবে খাটে বসি : প্রাণের প্রেয়সী : আসিতে না জানি কতেক ব্যাজ।।

উৎকণ্ঠিত নায়ক
কেন না আইল প্রিয়া : বিরহে বিদরে হিয়া : স্থির হব কি করিয়া : ধৈর্য্য আর রহে না।
কিবা কোন কার্য্যপাকে : ভীতা কিবা দেখে তাকে : নহে এতক্ষণ থাকে : কামে সে কি দহে না।।
পান গুয়া গন্ধমালা : অগ্নিসম দেয় জ্বালা : করিলেক ঝালাপালা : তনু প্রাণ রহে না।
আসিবেক কতক্ষণে : তবে সুখ পাব মনে : বিনা তার দরশনে : আর তাপ সহে না।।

অভিসারক নায়ক
দ্বিতীয় প্রহর রাতে : মোরে কহিয়াছে যেতে : সময় হইল প্রায় স্থির মন টলিল।
সুখের কি জানে লেখা : গেলে মাত্র পাব দেখা : অনেক দিনের পর আজি আশা ফলিল।।
অন্ধকার দেখি আলো : গৌর লোক দেখি কালো : শত্রুজনে মিত্র ভাব জলে স্থল হইল।
রজনীতে দিবা মত : তিমির হইল হত : কুপথে সুপথ জ্ঞান তাহে মন লইল।।

বিপ্রলব্ধ নায়ক
সুখের সময় ঘরে : স্বীয়া নানা রস করে : তাহা ছাড়ি আইলাম পরআশা করিয়া।
গুরু ভয় লঘু করে : অন্ধকারে নাহি ডরে : ছাড়িয়া আপন বেশ পরবেশ ধরিয়া।।
সঙ্কেত স্মরণ করে : এসেছিল বেশ ধরে : আমার বিলম্ব বুঝি ঘরে গেল ফিরিয়া।
আসিয়া সঙ্কেত ঠাঁই : দেখিত পাইল নাই : আহা মরি অন্য কেবা লয়ে গেল হরিয়া।।

স্বাধীনভার্য্যা নায়ক
তুমি প্রাণ তুমি ধন : তুমি মন তুমি গণ : হৃদয়ে যে ক্ষণ থাক সেই ক্ষণ ভাল লো।
যত জন আর আছে : তুচ্ছ করি তোর কাছে : ত্রিভুবনে তুমি ভাল : আর সব কালো লো।।
তোমার বদনচাঁদ : অঞ্চলে চঞ্চল চাঁদ : আমার মোহন ফাঁদ অন্ধকারে আলো লো।
করেছি বিস্তর সেবা : আজি মোরে সাজাইবা : আমার মাথার কিরা : যদি মোরে টালো লো।।

খণ্ডিত নায়ক
আসিব বলিয়া গেলা : অন্য সঙ্গে হল মেলা : শরীরেতে চিহ্ন আছে লুকাবে কি বলিয়া।
মোর সঙ্গে কথা কয়ে : বঞ্চিলা অন্যেরে লয়ে : কতেক করিলা ভাব এ কান্তেরে ছলিয়া।।
ভিন্ন ভিন্ন দেখি বেশ : আলুথালু দেখি কেশ : দেখিয়া তোমার ভাব দেহ যায় জ্বলিয়া।
কে সাধিল মনোরথ : খণ্ডিয়া পীরিতি পথ : নিজ স্থানে যাও তুমি আমি যাই চলিয়া।।

কলহান্তরিত নায়ক
অল্প অপরাধ পেয়ে : কেন বা দিনু খেদায়ে : এবে কার মুখ চেয়ে কামজ্বালা সারিব।
বিবেচনা নাহি করি : এখন ঝুরিয়া মরি : অনুমানে হেন বুঝি রহিতে না পারিব।।
পুনঃ দূতী পাঠাইব : প্রীতি করি আনাইব : সবে এক দোষ তাহে পতি হয়ে হারিব।
হারি মানি দ্বন্দ্ব যাউক : তার অভিমান থাউক : তাহা বিনা এ সঙ্কটে তরিবারে নারিব।।

প্রোষিতভার্য্যা নায়ক
কোথায় রহিল বামা : বিরহে দহিয়া আমা : নিরন্তর কামজ্বালা কত আর সহিব।
পিক ডাকে কুহু কুহু : ভ্রমর গুঞ্জরে মুহু : সাপেখেকো বায়ুজ্বালা কত আর বাহিব।।
চন্দন কমলদল : পোড়া যেন দাবানল : সুধাকর বিষধর কত সয়ে রহিব।
আলো দেখি অন্ধকার : পুরস্কার তিরস্কার : হেন বুঝি অবশেষে উদাসীন হইব।।

প্রোষিতপত্নী নায়ক
যদি যাবে আমা ছেড়ে : প্রাণ কেন লও কেড়ে : আপন উদ্বেগ হেতু অগ্নি লয়ে যাবে লো।
তোমা সঙ্গে যাবে তাপ : আমি এড়াইব শাপ : খেতে শুতে অনুক্ষণ মনস্তাপ পাবে লো।।
প্রবোধ করিয়া তায় : ঠেকিবে দারুণ দায় : এমত হইবে ব্যক্ত সম্বিত হারাবে লো।
কয়ে দিনু শেষ মর্ম্ম : বুঝিয়া করহ কর্ম্ম : পদে পদে পাবে জ্বালা ক পদ এড়াবে লো।।

ইত্যাদি বুঝিয়া নায়কের অষ্টমত। উদাহরণেতে অনুভবে পাবে যত।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *