১০. সূর্পণখা কর্ত্তৃক রাবণকে রাক্ষস বধ ও সীতার সংবাদ দান

রামের সংগ্রাম যত সূর্পণখা দেখে।
শঙ্কাকুলা লঙ্কায় চলিল মনোদুঃখে।।
রাবণে কহিতে যায় আত্ম-সমাচার।
নাক কাণ কাটা তার বীভৎস আকার।।
যার কাছে যায় রাঁড়ী, সেই ভয় পায়।
খেয়ে খর দূষণে রাবণে খাইতে চায়।।
সভা করি বসিয়াছে রাবণ ভূপতি।
সুরগণ সহিত যেমন সুরপতি।।
নিজ নিজ স্থানে বসিয়াছে মন্ত্রীগণ।
হেনকালে সূর্পণখা দিল দরশন।।
নাক কাণ কাটা তার মূর্ত্তিখানি কালি।
সভামধ্যে রাবণেরে দেয় গালাগালি।।
শৃঙ্গার কৌতুকে রাজা থাক রাত্রি দিনে।
রাক্ষস করিতে নাশ রাম এল বনে।।
স্ত্রী মাত্র তাহার সঙ্গে কেহ নাহি আর।
যত ছিল দণ্ডকেতে করিল সংহার।।
হস্তী ঘোড়া নাহি তার জানকী দোসর।
কতেক রাক্ষস মারে রাম একেশ্বর।।
শুনি সূর্পণখার মুখেতে বিবরণ।
হাহাকার করিয়া জিজ্ঞাসে দশানন।।
কতেক কটক তার, কি প্রকার বেশ।
ভয়ঙ্কর বনে কনে করিল প্রবেশ।।
কাহার নন্দন রাম, কেমন সম্মান।
কেমন বিক্রমী সে কেমন ধনুর্ব্বাণ।।
সূর্পণখা বলে, দশরথের নন্দন।
পিতৃসত্য পালিয়া বেড়ায় বনে বন।।
তপস্বীর বেশ ধরে, নহে কোন মুনি।
সঙ্গে করি লয়ে ভ্রমে সুন্দরী রমণী।।
চতুর্দ্দশ সহস্র রাক্ষস বনে ছিল।
একা রাম সকলেরে সংহার করিল।।
রামের কনিষ্ঠ সে লক্ষ্মণ মহাবীর।
তার সহ সমরে হইবে কেবা স্থির।।
রামের মহিষী সীতা, সাক্ষাৎ পদ্মিনী।
ত্রৈলোক্য-মোহিনী রূপে পরমা কামিনী।।
সীতার রূপের সমা আর নাহি নারী।
ঊর্ব্বশী মেনকা রম্ভা হারে রূপে তারি।।
যেমন মহৎ তুমি পুরুষ-সমাজে।
তার রূপ কেবল তোমাতে মাত্র সাজে।।
রামেরে ভাঁড়াও আর ভাঁড়াও লক্ষ্মণে।
আনহ রমণী-রত্ন যত্নে এইক্ষণে।।
যেমন সন্তাপ দিল সে রাক্ষসকুলে।
তেমনি মরুক সে সীতার শোকানলে।।
সূর্পণখা যত বলে রাজা সব শুনে।
সুন্দরী সীতার কথা ভাবে মনে মনে।।
যুক্তি করে রাবণ বসিয়া সভাস্থানে।
রামে ভাঁড়াইয়া সীতা আনিব কেমনে।।
রাক্ষসের মায়া নর বুঝিতে কে পারে।
সূর্পণখা কান্দিল রাবণ বধিবারে।।
কেহ সূর্পণখার কথায় মন্দ হাসে।
গাইল অরণ্যকাণ্ড গীত কৃত্তিবাসে।।