১১. শ্রীরামচন্দ্রের সহিত ভরত প্রভৃতির মিলন

হেনকালে ভরত শত্রুঘ্ন দীনবেশে।
শ্রীরামের আশ্রমেতে যাইয়া প্রবেশে।।
গলবস্ত্র ভরত নয়নে বহে নীর।
পথ পর্য্যটনে অতি মলিন শরীর।।
পড়িলেন শ্রীরামের চরণ-কমলে।
আনন্দে শ্রীরাম তাঁরে লইলেন কোলে।।
পরস্পর সম্ভাষা করেন সর্ব্বজন।
যথাযোগ্য আলিঙ্গন পদাদি বন্দন।।
ভরত কহেন ধরি রামের চরণ।
কার বাক্যে রাজ্য ছাড়ি বনে আগমন।।
বামাজাতি স্বভাবতঃ অপবুদ্ধি ধরে।
তার বাক্যে কে কোথা গিয়াছে দেশান্তরে।।
অপরাধ ক্ষমা কর, চল প্রভু দেশ।
সিংহাসনে বসিয়া ঘুচাও মনঃক্লেশ।।
অযোধ্য-ভূষণ তুমি অযোধ্যার সার।
তোমা বিনা অযোধ্যা দিবসে অন্ধকার।।
চল প্রভু অযোধ্যায়, লহ রাজ্যভার।
দাসবৎ কর্ম্ম করি আজ্ঞা অনুসার।।
শ্রীরাম বলেন, তুমি ভরত পণ্ডিত।
না বুঝিয়া কেন বল, এ নহে উচিত।।
মিথ্যা অনুযোগ কেন কর বিমাতায়।
বনে আইলাম আমি পিতার আজ্ঞায়।।
চতুর্দ্দশ বৎসর পালিয়া পিতৃবাক্য।
অযোধ্যা যাইব আমি, দেখিবে প্রত্যক্ষ।।
থাকুক্ সে সব কথা, শুনিব সকল।
বলহ ভরত আগে পিতার কুশল।।
বশিষ্ঠ কহেন, রাম না কহিলে নয়।
স্বর্গবাসে গিয়াছেন রাজা মহাশয়।।
শুনি মূর্চ্ছাগত রাম জানকী লক্ষ্মণ।
ভূমিতে লুটিয়া বহু করেন রোদন।।
বশিষ্ঠ বলেন, বলি ব্যবস্থা ইহাতে।
তিন দিন তোমার অশৌচ শাস্ত্রমতে।।
পিতৃশ্রাদ্ধ করিতে জ্যেষ্ঠের অধিকার।
তিন দিন গেলে শ্রাদ্ধ করিবে রাজার।।
সকল ভাণ্ডার আছে ভরতের সাথে।
লহ ধন কর ব্যয় প্রয়োজন মতে।।
সম্বর সম্বর শোক রাম মহামতি।
তোমা বুঝাইতে পারে আছে কোন্ কৃতী।।
সত্য হেতু ভূপতি গেলেন স্বর্গবাস।
রোদন করিয়া কেন পুণ্য কর নাশ।।
ছিলেন তৈলের মধ্যে মৃত মহারাজ।
ভরত আসিয়া করিলেন অগ্নিকাজ।।
আরো যে কর্ত্তব্য-কর্ম্ম করিয়া ভরত।
কত শত দান করিলেন অবিরত।।
তাহার দানের কথা শুন পরিপাটি।
একৈক ব্রাহ্মণে দেন ধন এক কোটি।।
যত যত রাজা হইলেন চরাচরে।
ভরত সমান দান কেহ নাহি করে।।