৫০. সীতার বিবাহ পণার্থে হরের ধনু প্রদান

সাত বৎসরের রাম অযোধ্যা-নগরে।
লক্ষ্মী হোথা জন্মিলেন জনকের ঘরে।।
চাষের ভূমিতে কন্যা পায় মহাঋষি।
মিথিলা করিল আলো পরমা রূপসী।।
অদ্ভুত সীতার রূপ গুণ মনে মানি।
এ সামান্যা নহে কন্যা কমলা আপনি।।
কন্যারুপ জনক দেখেন দিনে দিনে।
উমা কি কমলা বাণী ভ্রম হয় তিনে।।
হরিণী নয়নে কিবা শোভিত কজ্জল।
তিলফুল জিনি তাঁর নাসিকা উজ্জ্বল।।
সুললিত দুই বাহু দেখিতে সুন্দর।
সুধাংশু জিনিয়া রূপ অতি মনোহর।।
মুষ্টিতে ধরিতে পারি সীতার কাঁকালি।
হিঙ্গুলে মণ্ডিত তাঁর পায়ের অঙ্গুলি।।
অরূণ বরণ তাঁর চরণ-কমল।
তাহাতে নূপুর বাজে শুনিতে কোমল।।
রাজহংসী ভ্রম হয় দেখিলে গমন।
অমৃত জনিয়া তাঁর মধুর বচন।।
দশদিক আলো করে জানকীর রূপে।
লাবণ্য নিঃসরে কত প্রতি লোমকূপে।।
জনক ভাবেন মনে সীতা দিব কারে।
সীতাযোগ্য বর নাহি দেখি এ সংসারে।।
পুরোহিত আনি রাজা কহেন বিশেষে।
জানকীর বিবাহ করিবে কোন্ জন।।
স্বর্গেতে করেন চিন্তা যত দেবগণ।।
বিধাতা বলেন, শুন দেব পুরন্দর।
রামের বয়স মাত্র সপ্তম বৎসর।।
দিনে দিনে জানকীর রূপ বৃদ্ধিমান।
পাছে অন্য বরে রাজা সীতা করে দান।।
এই যুক্তি দেবগণ করিয়া মনন।
কৈলাস পর্ব্বতে গেল যথা ত্রিলোচন।।
ব্রহ্মা বলিলেন শুন শিব অন্তয্যামী।
জনকের ঘরে সীতা রক্ষা কর তুমি।।
সে তব সেবক আজ্ঞা লঙ্ঘিতে না পারে।
যেন রাম বিনা অন্যে না দেয় সীতারে।।
এতেক বলিয়া ব্রহ্মা করিল গমন।
ভৃগুরামে ডাকিয়া কহেন ত্রিলোচন।।
আমার ধনুক নিয়া করহ পয়ান।
জনকের ঘরে রাখ করি সাবধান।।
আমার এ ধনু ভঙ্গ করিতে যে পারে।
কহ জনকেরে, যেন সীতা দেয় তারে।।
এ তিন ভুবনে ইহা তোলে কোন জন।
সবে মাত্র তুলিবেন প্রভু নারায়ণ।।
পাইয়া শিবের আজ্ঞা বীর ভৃগুপতি।
ধনুক করিয়া হাতে করিলেন গতি।।
মাথায় জটার ভার পৃষ্ঠে দুই তূণ।
এক হাতে কুঠার অন্যেতে ধনুর্গুণ।।
ব্রহ্মারে যেমন দেবে করেন সম্ভ্রম।
জনক পরশুরামে করেন সে ক্রম।।
প্রণাম করিয়া তাঁরে দিলেন আসন।
পাদ্য অর্ঘ্য দিয়া তাঁরে করেন পূজন।।
ভৃগুরামে দেখি সব মুনির তরাস।
আদিকাণ্ড রচিল পণ্ডিত কৃত্তিবাস।।